অপেক্ষায় ছিলাম? না...
রফিক আজাদের কবিতার মতোই
প্রতীক্ষা ছিলো আমার।
দু’চোখে প্রচণ্ড তৃষ্ণা নিয়ে,
কন্ঠসুধায় দ্রবীভূত হবার আজন্ম সাধ নিয়ে,
প্রতীক্ষাই তো করেছিলাম আমি!
যেমন সবচে’ পাপী যে অনুতাপী ভেজায় গণ্ডদেশ সারারাত্রি
একটুখানি পানাহের আশায়...
যেমন ফাঁসির যে আসামী মঞ্চের দিকে এগোয় ঢিবঢিব হৃদপিণ্ডে...
প্রতিমুহূর্তে মিরাকলের আশায়...
যেমন বাচ্চু ভাইয়ের কন্ঠে জীবন্ত হয়ে ওঠা প্রেমিক জীবনের অনেক আয়োজন ঠেলে
বসে থাকে প্রতীক্ষায় দরজার ওপাশে...
ওদের সবার মতই...
চেনা শহরের সবটুকু নির্যাসে ধূলিধূসর রাজপথ ভিজিয়ে
কাতর কিশোর আমি প্রতীক্ষারত ছিলাম।
না... তুমি আসোনি তখন।
তাই আমিই গেলাম তোমার কাছে।
তোমার শ্বাস-প্রশ্বাস বইছে যে শহরে ধীরে...
এই শহর ছিলো আমাদের জন্য নিরপেক্ষ ভেন্যু।
কিন্তু দুজনার কি কপাল বলো তো!
‘Spes Unica’ তুমি
খুব পড়ছো রসায়নশাস্ত্র অ্যালেন সারের কাছে
আর ‘Lumen Sapientiae’ কে ভালবাসতে না পেরে
রসায়ন ক্লাসে অ্যালেন স্যারের পড়ানোয়
ত্যক্তবিরক্ত আমি আরামবাগ ছেড়ে ছুটছি কাকরাইলে।
শীত বিকেলে তুমি হাঁটছো ফার্মগেট ওভারব্রিজে।
ওই সময়ই আমি হালিমে ডুবিয়ে পুরি খাচ্ছি খুব ‘ক্ষুধা নিবারণে’।
কলেজ পেরোলাম এভাবেই...
২০০৬ এ আমাদের প্রেমটা হয়ে যেতেই পারতো।
কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিদ্যার এপ্লায়েড সায়ান্সে
মন টেকাতে পারলেনা তুমি
আমাদের প্রেমটাও তাই সম্ভাবনা তত্ত্বে অনেক পিছিয়ে গেলো।
কিন্তু সেই তুমিই আবার ১/৬৪ সম্ভাব্যতা নিয়ে সঠিক শহরে
ভুল সময়ে আমার খোঁজে পৌঁছে গেলে।
আর আমি তোমার কবেকার শেষ শহুরে দীর্ঘশ্বাস
পুঁজি করে ভুল মানুষের পিছে ছুটতে থাকলাম
তুমি তখন হয়ে একমন ঘুরে বেড়াচ্ছো
আমার শহরের অলিগলি,
পেরোচ্ছো আমার চৌহদ্দি।
আমার একার নিউমার্কেট তন্ন তন্ন করছো।
মৌনতায় ভাঙ্গছো কারো হৃদয়,
আর শতাব্দীর দৃঢ়তম দেয়াল সমান
বিশ্বাস বুকে নিয়ে করে চলেছো আমার প্রতীক্ষা।
ছুটিতে আমি যখন বাড়ির পথে বাসে
জানি তুমি তখন তোমার শহরের ফিরতি ট্রেনে
সময়ের প্রয়োজনেই মিলছেনা, মিলছো না, মেলাচ্ছিও না।
তদানিং ফিরেছো আবার এই শহরে।
ছুটছো অফিসে,
মোহাম্মদপুরে কাটাচ্ছো স্মৃতিময় দিন,
পাসপোর্ট জিআরই চলছে সমান্তরালে,
আমিও ততদিনে রোজই পেরচ্ছি শহরের এ মাথা থেকে ওমাথা,
শহর পেরিয়ে দূরে শীতলক্ষ্যার পাড়ে মফস্বলে ব্যস্ত হচ্ছি।
অবসরে অবুঝ শামীমের সাথে মেলাচ্ছি পাটিগণিত,
ফিরছি একান্ত নির্জন কক্ষে, বিসিএস বিদেশ কনফিউশনে হচ্ছি নাকাল।
সংগ্রামের দিন তখন দুজনেরই।
সময় তখনো চায়নি আমাদের পাশাপাশি একসাথে।
শহরের বাতাসের উপর থেকে ব্যক্তিগত অধিকারটুকু গুটিয়ে নিয়ে ছাড়লে দেশ
আমাদের ব্যক্তিগত দীর্ঘশ্বাস শেষবারের মত দীর্ঘায়িত হলো।
তাই তো জনারণ্যে আমার ভালো লাগছিলো না আর।
ফিরে এলাম আমার নিজস্ব শহরে বড্ড দেরিতে, ভুল সময়ে!
নতুন চাকরী আর অনেক প্রাপ্তির আরেকটি অপ্রাপ্তির বছর কেটেই গেলো
তোমার সন্দেশ ছাড়াই।
কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে!
তাই পরের বছরই আট হাজার মাইল ব্যবধান কমাতে তৎপর হলাম
ব্যবধান কমাতে কমাতে ২০১৪ চলে এলো।
এবার আর চিনতে ভুল হয়নি কারো।
ভুল হবেই বা কেনো? মহাসময়েরও যে আমাদের বড্ড প্রয়োজন ছিলো!
ব্যবধান শেষমেষ ঘুঁচেই গেলো। সময়ের তাহলে সময় হলো!
সময় গাধা সেই সে জল খেলো, কিন্তু কতটা ঘোলা করে খেলো দেখেছো মিসেস?
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:০৯