somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন হোমিও রোমিওর গল্প... (গুরুচন্ডাল মার্জনীয়)

২৪ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মনটা ভীষণ খারাপ। কদিন আগে বেরিয়েছে হোমিওপ্যাথি ভুয়া। আজ আব্বার সাথে ভাইবারে খুব চ্যাটাচ্যাটি হচ্ছিলো। আব্বাকে বললাম মন খারাপ, হোমিওকে ভুয়া বলে ওরা। আব্বা বললেন, ইহা অসত্য। আব্বা বস্তুত হাফ ডাক্তার। ভুল বললাম পৌনে ডাক্তার। বাসায় ম্যাটেরিয়া মেডিকা আছে। তাই দেখে দেখে আর বহুবছরের অভিজ্ঞতায় নিজের ব্যাক পেইন, আমার কোষ্ঠ্যকাঠিণ্য, গ্যাস্ট্রিক ইত্যাদি সারিয়েছেন। এই ব্যবস্থা এমনিতেই আমার খুব পছন্দ। কি সুন্দর করে গুল্লুগুল্লু মিষ্টি দানা, সবচে জোশ হইলো স্পিরিট। ছোটব্যালায় থাকতাম বাবু খান রোডে, খুলনাতে। সেখানে গলির মুখেই এক ভদ্রলোক বসতেন, পেশায় হোমিও ডাক্তার। নাম সাহা হোমিও হল।তার দোকান ভরা নানান গন্ধের স্পিরিট। আহা কি তার স্বাদ! বড় হয়ে তো হাফ বোতল করে ঝেড়ে দিতাম। নাক্স ভোমিকা আর সিলিকা ২০০ এর কথা শুধু মনে আছে। হোমিও যে আসলেই কিছু ইফেক্ট ফেলে তার সাক্ষী আমি আর আমার ফ্যামিলি। আমার সোরাইসিস আছে। চামড়ার এন্ডোডার্ম আর মেসোডার্ম যখন নিজেদের মধ্যে তালগোল পাকিয়ে ফেলে তখন এই সমস্যা হয়। মতিঝিলের জসীমুদ্দিন রোডের কাছে সম্ভবত একজন নামকরা হোমিও ডাক্তার এর তেজারতি ছিলো। উনার কাছে গিয়ে দেখি এলাহি কারবার। ক্যান্সারের রোগীর আশা নেই, এসেছেন উনার কাছে। আমাকে ঠিক মত যখন দেখলেন ও না খুব রাগ হলো। ভিজিট ও সেই রকম। আব্বা আশাবাদী। আমি হলাম বেজার। যাই হোক ওষুধ দুইদিন খেতে না খেতেই সোরাইসিস ভয়াবহ আকার ধারণ করলো। পায়ের পুরাটা জুড়ে চামড়া ওঠা শুরু হলো। তখন পড়ি বোধহয় বুয়েট ফার্স্ট ইয়ারে। হাঁটলে পা জ্বালা করে। কাঁদো কাঁদো হয়ে ওষুধ বন্ধ করলাম। আব্বাকেও বকা ঝকা করলাম বলতে গেলে। “কি ওষুধ দিলো যে এত্ত ছড়িয়ে গেলো!” আব্বা শুধু একবার বললেন, “দিস ইস হাও ইট ওয়ার্ক্স”। সেদিন কথাটায় গুরুত্বও দেই নি। ডাক্তর সাব কেও অভিশাপ দিলাম। তার বছরখানেকের মধ্যে ডাক্তরসাব ওষুধের সাথে অসাধু জিনিস আমদানীর অপরাধে অভিযুক্ত হইয়া পলায়ন করিলেন। আনন্দিত হইলাম। কিন্তু আজ বুঝি সেদিন ওরকম ভয়াবহ ভাবে অসুখটা না বাড়িয়ে দিলে আল্লাহর রহমতে হয়তো আজ অবধি এতটা সুস্থ থাকতাম না। রেড মিট, চিংড়ি, ইলিশ কোনোটাই বাদ দেই নি আলহামদুলিল্লাহ। আস্তে আস্তে রোগটা কেবল পায়ের আঙ্গুল আর শুকনোর দিনে বড়জোর হাতের বুড়ো আঙ্গুলটার চামড়া ওঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। মাঝে মাঝে ভ্যাসলিন দেই শুধু। হোমিওপ্যাথি কাজ ই করে রোগটাকে বাড়িয়ে দিয়ে। গেলবার দেশে গিয়ে খুব খেয়ে দেয়ে শুরু হলো অস্বস্তির গ্যাস্ট্রিক। এন্টাসিড প্লাস+রেনিটিডিন পারলো না, অমিপ্রাজল পারলো না, নাক্স ভোম একদিনেই নাই করে দিলো! আমি তো তখন আব্বাকে পারলে সালাম করি। এই তো সেদিন খোদার ফজলে আব্বার প্রেসক্রিপশনে সিলিকা অনলাইনে অর্ডার করিয়া কোষ্ঠকাঠিন্য সারাইয়া ফেলিয়াছি প্রায়!

হোমিও নিয়ে একটা মজার ঘটনা দিয়ে শেষ করি। এক ঘনিষ্ট ইস্কুল বন্ধু প্রেমে পড়েছে আব্বার এক কলিগের মেয়ের। যারা ঘটনাক্রমে ওই সময় আমাদের বাসার নীচতলায় থাকতেন। মেয়ে মেডিকেলে পড়ছে। একদিন বন্ধুর সাথে বাসার ছাদে আড্ডা দিচ্ছি। বন্ধু বলে “ আরে ফয়সাল, জানো আম্মা কি পাগলামি শুরু করিয়াছে? সে এখন হোমিওপ্যাথি পড়াশোনা শুরু করিয়াছে। আমার কি বিপদ হইবে বুঝিতেছো? অসুখ বিসুখ হইলে বউ দেবে এলোপ্যাথি আর আম্মা দেবে হোমিও। আমি কোনটা থুয়ে কোনটা খাবো!?”
বন্ধুর কথায় সেদিন খুব হাসিয়াছিলাম।

পুঁজিবাদী দেশে শস্তা হোমিওর বেইল থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। তাদের ব্যয়বহুল এলোপ্যাথি থাকুক। তবে একজন হোমিও রোমিও হিসেবে চাইবো বেঁচে থাকুক হোমিও ও!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:৩৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×