বিশেষ কৌশলে অনুমোদন নিয়ে একচেটিয়া বাজার দখল করেছে যমুনা গ্রুপের তৈরি বিয়ার হান্টার। ‘দেশে উৎপাদিত একমাত্র বিয়ারের’ স্লোগান নিয়ে অপকৌশলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে যমুনা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) সঙ্গে আঁতাত করেছে তারা। অভিযোগ আছে, অনুমোদিত পরিমাণের তুলনায় বেশি অ্যালকোহল দিয়ে তৈরির পর শহর থেকে গ্রামের জনপদেও ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে এ হান্টার। এখন ইয়াবা, হেরোইন ও ফেনসিডিলের মতো মাদকে পরিণত হয়েছে হান্টার। বিয়ার ভেবে বেশি পরিমাণে সেবন করার কারণে হান্টারে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।
বিশ্লেষক ও চিকিৎসকরা বলছেন, সহজলভ্য হওয়ার কারণে ছাত্র-তরুণ-যুবকসহ সব বয়সের মানুষ হান্টারের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। তবে এমন অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় বেশি পরিমাণে পান করলে লিভার নষ্ট হওয়াসহ অনেক ধরনের জটিল রোগের আশঙ্কা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কৌশলে লাইসেন্স নিয়ে হান্টারকে দেশের মাদকের বাজারে শীর্ষে নিতে তৎপরতা চালাচ্ছে যমুনা গ্রুপ। মনোপলি বা একচেটিয়া বাজার তৈরি করে মাদক বাণিজ্য চালালেও হান্টারের এ আগ্রাসন দেখার যেন কেউই নেই। মাদকের উপাদান ধরা পড়ায় হান্টার ও যমুনার প্রতিষ্ঠান ক্রাউন বেভারেজের বিরুদ্ধে মামলা করা হলেও অপতৎপরতার কাছে নতি স্বীকার করে সরকার।
গত সরকারের আমলে এ প্রতিষ্ঠানকে বিয়ার তৈরি অনুমোদন দেয়ার পর শুরু হয়েছে নতুন অপতৎরতা। হান্টারের বিপণনে একের পর এক অপকৌশল ব্যবহার করা হলেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি) হান্টারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। তাই এরই মধ্যে বিভিন্ন অননুমোদিত বার, রেস্টুরেন্ট, হোটেলসহ গ্রাম-গঞ্জের হাটবাজারও হান্টার বিয়ারে সয়লাব হয়ে পড়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) মোহাম্মদ আতোয়ার রহমান বলেন, আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান এখন আবেদন করেছে কিনা আমার জানা নেই। খোলা বাজারে বিক্রি ও উপাদানের বিষয়টি আমাদের অপারেশন বিভাগ দেখে। শর্ত ভঙ্গ হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল বলেছিলেন, হান্টার খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে এবং এর মধ্যে বেশি অ্যালকোহল আছে- এমন অভিযোগ মাঝেমধ্যেই পাই। তবে আমরা হাতেনাতে পাইনি। বাইরে বিক্রি হচ্ছে এমন কোনো হান্টারের সঙ্গে কারখানার সম্পর্ক না থাকলে আমারা কী করতে পারি! ৫ শতাংশ পর্যন্ত অ্যালকোহলের বেশি ব্যবহার করা হলে ব্যবস্থা অবশ্যই নেয়া যাবে।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, লেবেল তৈরির আগে মনিটরিং ছাড়া পরে বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ডিএনসি কখনো হান্টার পরীক্ষা করে দেখেনি। হান্টারের নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে সংশ্লিষ্ট ডিএনসির কর্মকর্তাদের পকেটেও নিয়মিত টু-পাইস (ঘুষ) ঢুকছে। এখন সাধারণ মুদি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে প্রসাধনী বিক্রেতাও রাতারাতি পেশাদার মাদক ব্যবসায়ীতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে।
তাদের মাধ্যমেই হান্টার বিয়ার খোলাবাজারে ছড়িয়ে পড়ছে ব্যাপকভাবে। সহজলভ্য হওয়ার কারণে যুবসমাজ ছাড়াও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পর্যন্ত ঝুঁকে পড়ছে মাদকে। একই প্রতিষ্ঠানে আরেকটি এনার্জি ড্রিংকস ক্রাউনেও অধিক মাত্রায় অ্যালকোহলযুক্ত করে গোপনে বাজারে ছাড়া হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে।