হিন্দু সম্প্রদায় নিয়ে একটি মোহ কাজ করে প্রচলিত শিক্ষায় শিক্ষিত মুসলমানদের মধ্যে, হিন্দু সাহিত্যিকদের লেখালেখি পাঠ করার কারণে তারা হিন্দু সংস্কৃতির প্রতি আসক্তি বোধ করে। কলকাতার সংস্কৃতি ধারণের আগে স্বাভাবিকভাবেই তাদের উচিত ছিল সেসব সংস্কৃতির উৎসমূল সম্পর্কে তাহক্বীক করা। কিন্তু হুজুগে আমলোক ভালোমন্দ চিন্তাফিকির না করেই সবকিছুর অনুকরণ করে।
শুনতে খারাপ শোনালেও, বর্তমানে কলকাতা ভিত্তিক যে গান, নাটক, সিনেমা নিয়ে আমাদের কথিত সুশীল সমাজ বড়াই করে, তার প্রাথমিক রূপ দিয়েছিল কলকাতার বারোবণিতারা। তারাই বর্তমানে প্রচলিত বাংলা গান, থিয়েটার ও সিনেমাশিল্পের জন্মদাতা। ব্রাহ্ম পরিবারে বড় হওয়া প্রাবন্ধিক নীরদ সি চৌধুরীর ‘আত্মঘাতী বাঙালী’ নামক গ্রন্থে তার নিজের প্রসঙ্গে রয়েছে, “আমি সারা জীবনেও দেশে কোনো থিয়েটার দেখি নাই। আমার বাল্যকালে অভিনেত্রীরা বেশ্যা বলিয়া থিয়েটারের প্রতি ব্রাহ্মপন্থীদের ঘোর আপত্তি ছিল।” আর চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায় বলেছে, “আগে সিনেমার নায়িকার জন্য বেশ্যাদের নিকট ধর্ণা দিতে হতো, আর এখন ভার্সিটি পড়–য়া ভদ্রঘরের মেয়েরাই নিজে আগ্রহী হয়ে সিনেমায় অভিনয় করতে আসে।”
এছাড়াও তৎকালীন সময়ের কলের গানের গায়িকারা সবাই ছিল গণিকাপাড়া থেকে আগত। সুকুমারী দত্ত, নটী বিনোদিনী, গওহরজান, ইন্দুবালা, আঙ্গুরবালা, কমলা ঝরিয়া বা এদের মতো প্রাথমিক যুগের বাংলা গানের গায়িকারা সবাই ছিল বাস্তবজীবনে পেশাদার গণিকা। এদের পৃষ্ঠপোষকতা করতো কলকাতার হিন্দু সমাজ। উপরোক্ত নীরদ সি চৌধুরী তার আরেকটি গ্রন্থ ‘বাঙালী জীবনে রমণী’-তে বন্যাদুর্গতদের সাহায্য করার নামে কলকাতার গণিকাদের দ্বারা প্রকাশ্য রাস্তায় হারমোনিয়াম নিয়ে গান গেয়ে মিছিল করে চাঁদা তোলার ঘটনা উল্লেখ করেছে। এতেই বোঝা যায় কলকাতায় পতিতাদের সমাজ ও আম হিন্দুসমাজ, দুটোই এক ও অভিন্ন।
তৎকালীন সময়ের ন্যায় বর্তমান সময়েও কলকাতায় বারোবণিতাভিত্তিক সংস্কৃতি বিদ্যমান রয়েছে। বইমেলা, বাণিজ্যমেলার মতো কলকাতায় পতিতাদের মেলাও বসে। (নাউযুবিল্লাহ!) অনলাইন বার্তা সংস্থা বাংলামেইল২৪-এর সংবাদ অনুযায়ী, কলকাতার ট্রায়াঙ্গুলার পার্ক চত্বরে বসে এই মেলা। উক্ত মেলায় আমন্ত্রণ জানানো হয় পতিতাদের এবং তার সাথে তাদের খদ্দেরদেরকেও। এই বছরে ভারতের ১৬টি রাজ্যসহ বিশ্বের ৪৩টি দেশের বারোবণিতারা সেখানে অংশ নিয়েছে।
কলকাতাভিত্তিক সংস্কৃতির প্রতি মুসলমান ঘরের সন্তানদের মোহের সৃষ্টি হয়েছে প্রচলিত বাংলা সাহিত্যের হিন্দুয়ানী বর্ণনার দ্বারা। ব্রিটিশ আমলে সৃষ্ট এসব হিন্দুয়ানী সাহিত্যের গতিধারা পাল্টে তাকে ইসলামী রূপ দেয়ার জন্য যে অর্থ ও পৃষ্ঠপোষকতা দরকার, তা বাঙালি মুসলমান সহজেই নিশ্চিত করতে পারে তাদের স্বাধীন রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে। কিন্তু সেজন্য যে সঠিক নেতৃত্বের প্রয়োজন তা বাঙালি মুসলমান এখনো নিশ্চিত করতে পারছে না। কারণ তারা যামানার ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে এখনো চিনতে পারেনি।