somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

পুরানো ঢাকার বিরিয়ানি বাজার

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ১১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পুরানো ঢাকার বিরিয়ানি বাজার

পুরাতন ঢাকার আলাউদ্দিন রোড দিয়ে আসা-যাওয়ার সময় প্রায়শই একটি ব্যাপার সবার চোখে পড়ে। আর সেটা হলো রাস্তার দু’পাশে ছোট ছোট দোকানগুলো। যে দোকানগুলোতে সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত একটানা ভিড় লেগেই থাকে। আর ভিড়ের কারণ জানার জন্য ভিড় ঠেলে সামনে যাবার প্রয়োজন নেই। কেননা দোকানগুলোর আশেপাশে দিয়ে হেঁটে গেলেই পঞ্চ ইন্দ্রিয় জানান দেবে সুগন্ধি সুস্বাদু খাবারের ঘ্রাণ। আর সেই "ঘ্রাণ" পুরাতন ঢাকার অনেক মুখরোচক খাবারের একটি বৈশিস্ট। আর বৈশিস্টের বৈশিস্ট হলো- পুরানো ঢাকার বিরিয়ানি। পুরানো ঢাকার মানুষের হাজারো খাবার তালিকায় নিঃসন্দেহে বিরিয়ানি খাবারটি প্রথম সারিতেই রয়েছে।

পুরান ঢাকার খাবার তালিকায় বিরিয়ানি হবার অনেক কারণও রয়েছে। মোঘল আমলে পাকুড়তলী ছিল যেমন পুরনো ও নতুন ঢাকার সীমানা, ফুলবাড়িয়া তেমনি এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে নতুন ও পুরনো ঢাকার সীমানা। উনিশ শতকের মাঝামাঝি ঢাকা শহরের সবচেয়ে দামি এলাকা ছিল পুরাতন ঢাকার গেয়ান্ডারিয়া, ওয়ারী, নাজিরা বাজার, লালবাগ সহ বিভিন্ন এলাকা। আর এখানে বসবাস করতো ভারতবর্ষের নানা স্থানের লোকজন। তেমনি ছিল মোঘলরা। তাদের বিভিন্ন মুখরোচক খাবারের প্রতি ছিল দুর্বলতা। অনেকটা সেখান থেকেই পুরাতন ঢাকার মানুষদের মুখরোচক খাবারের প্রতি রয়েছে আকর্ষণ। আর বিরিয়ানি তাদের মধ্যে অন্যতম। সেই ঐতিহ্য পুরানো ঢাকাবাসী আজও ধরে রেখেছে। কারণ যত দিন যাচ্ছে এলাকাগুলোতে বিরিয়ানির দোকান দিয়ে ছেঁয়ে যাচ্ছে।

তবে দীর্ঘদিন ধরে যারা এই ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য "হাজী বিরিয়ানি"। আলাউদ্দিন রোডে দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে হাজী বিরিয়ানি অত্যন্ত সুনামের সাথেই ব্যবসা করে চলছে। ১৯৩৯ সালে হাজী গোলাম হোসেন প্রথম হাজী বিরিয়ানি দোকানটি শুরু করলেও বর্তমানে ব্যবসার পুরো দেখভাল করছেন তার নাতি হাজী মোহাম্মদ সাহেদ। হাজীর বিরিয়ানির স্পেশালিটি হচ্ছে-ওরা বিরিয়ানী রান্নায় ঘি/বাটার অয়েল এর পরিবর্তে শুধু সরিসার তেল ব্যবহার করে। এই দোকান/হোটেলের কোনো সাইন বোর্ড নেই-কিন্তু এক নামেই সকলে চেনে। বর্তমানে হাজী বিরিয়ানির প্রতি প্লেট ৭০/৮০ টাকা(বিরিয়ানির সাথে বোরহানী নিলে ৮০ টাকা)। সকাল ৭ টা থেকে সকাল ৯ টা এবং সন্ধ্যা ৭ টা থেকে রাত সাড়ে নয় টা এই দুই সময়ই বিরিয়ানি পাওয়া যাবে আলাউদ্দিন রোডের এই ঐতিহ্যবাহি হাজীর বিরিয়ানির দোকানে। তবে যত চাহিদাই থাকুক-সকালে ২ ডেকচি ও বিকেলে ৩ ডেকচির বেশি বিক্রি করা হয় না। তবে ইদানীং কালে এখান থেকে রান্না করা খাবার নিয়ে মতিঝিল এবং গুলশানে দুটি ব্রাঞ্চ পরিচালিত হচ্ছে-যা শুধু দুপুড়েই পাওয়া যায়। আলাউদ্দিন রোডের মেইন দোকান থেকে বিরিয়ানি কিনে বাসায় নিতে চাইলে তা নিতে হবে ওদের বানানো "কাঠাল পাতার" পার্সেল প্যাকেট করে। প্রসংগক্রমে হাজী বিরিয়ানি হাউসের বর্তমান মালিক মোহাম্মদ সাহেদ জানিয়েছিলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অর্ডার নেয়া হয় তবে সেই ক্ষেত্রে ২/১ দিন আগে জানাতে হয়।

হাজী বিরিয়ানির পাশেই রয়েছে হানিফের বিরিয়ানি। এ বিরিয়ানি হাউজটিও বেশ পরিচিত পেয়েছে। আমার খুব পরিচিত প্লেইন সিট আমদানী কারক ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান ওমর। তিনি সপ্তাহে প্রায় দিনই দুপুরের খাবারটি এখান থেকেই সেরে নেন, মাঝে মাঝে মধ্যে উনি বিরিয়ানি কিনে সরাসরি আমার অফিসে চলে আসেন একসাথে আড্ডা এবং মজা করে খাওয়ার জন্য। প্রতি প্লেট ৭০ টাকা হলেও খাবারের মান অনেক ভাল। অন্যদিকে আলাউদ্দিন রোডেরই বিউটি বিরিয়ানি হাউজ ওমরের ছোট ভাই ব্যবসায়ী আলীর পছন্দের তালিকায় প্রথম। আর সে কারণে প্রায়ই কাজের ফাঁকে ৫০ টাকার কাচ্চি বিরিয়ানি খেতে চলে যান ওখানে।

আলাউদ্দিন রোডে আরো রয়েছে ভাই ভাই বিরিয়ানি হাউজ, মামুন বিরিয়ানি হাউজ, মক্কা-মদিনা বিরিয়ানি হাউজ, বিসমিল্লাহ বিরিয়ানি হাউজ। এখানে প্রতি প্লেট বিক্রি হয় ৩০ টাকা করে। এখানে এখন আরও নতুন নতুন কিছু বিরিয়ানি হাউজ রয়েছে। সেখানে প্রতি প্লেট ৩০/৪০ টাকায় প্রায় সারাদিনই পাওয়া যায়। এছাড়াও পুরাতন ঢাকার জিন্দাবাহার এলাকায় করিম মিয়ার মোরগ পোলাও প্রতি প্লেট ৫০ টাকা। নারিন্দার ঝুনু মিয়ার কাচ্চি বিরিয়ানি ৫০ টাকা, মালিটোলার ভুলু বিরিয়ানি প্রতি প্লেট ৩০ টাকা, সুরিটোলায় রহিম বিরিয়ানি ২৫ টাকা, নয়াবাজারে খালেক বিরিয়ানি ২৫/৩০ টাকা প্লেট। দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে একই জায়গায় ও এক দামে বিক্রি করায় অনেকেরই পছন্দের তালিকায় খালেকের বিরিয়ানি। তাছাড়াও কলতা বাজারের মোল্লা বিরিয়ানি ২৫ টাকা। নারিন্দা রয়েল কাচ্চি বিরিয়ানি ৬০ টাকা। নবাবপুরের ষ্টার হোটেলে কাচ্চি বিরিয়ানি খেতে পারেন ৮০ টাকা প্লেট।

লালবাগ কেল্লার মোড় কাছাকাছি আছে আরো একটি ঐতিহ্যবাহি বিরিয়ানির দোকান-যার নাম "নান্না মিয়ার বিরিয়ানি"! এই দোকানের বিরিয়ানি আসলেই খুব মজা। আমার ছোট ছেলে পারলে প্রতিদিনই ঐ নান্নার বিরিয়ানী খেতো-যদি দোকানটি বাসার নিকট হতো কিম্বা যাতায়তের সুব্যবস্থা থাকতো! নান্নার বিরিয়ানি নামটা একটা জনপ্রিয় র‌্যাপ গানের মধ্যেও উল্যেখ আছে।

পুরানো ঢাকার আর এক বিখ্যাত/জনপ্রিয় হোটেলের নাম ষ্টার হোটেল। এখানে অবশ্য সব ধরনের খাবারই বিক্রি হয়। কিন্তু ষ্টার হোটেলের অনেক খাবারের মধ্যে এখানকার কাচ্চি বিরিয়ানি চাহিদা এলাকার লোকজনের মধ্যে খুব বেশি। এখানে কাচ্চি বিরিয়ানি প্রতি প্লেট ৮০ টাকা।
এছাড়াও নর্থ সাউথ রোডে আল রাজ্জাক হোটেলের কাচ্চি বিরিয়ানি খেতে পারেন ৭০ টাকা প্লেট।

এসব বিরিয়ানি হাউজ ছাড়াও ইসলামপুর, চকবাজারে বেশ কয়েকটি অভিজাত বিরিয়ানির দোকান রয়েছে। মোদ্দাকথা, সমস্ত পুরাতন ঢাকায় প্রচুর বিরিয়ানির দোকান রয়েছে যেখান থেকে খুব কম দামে সুস্বাদু মুখরোচক খাবার বিরিয়ানি আপনি খেতে পারেন।

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪
১২৯টি মন্তব্য ১৩৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×