somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

লন্ডনঃ স্বপ্ন ও স্বপ্ন ভংগের উপখ্যান-১

২৫ শে নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লন্ডনঃ স্বপ্ন ও স্বপ্ন ভংগের উপখ্যান-১

ইংল্যান্ডের নিউ ক্যাসেল শহরে আমার থাকা হয়েছিল ১৯৮৪-১৯৮৮ সন পর্যন্ত। তারপরেও বহুবার বিভিন্ন কারনে ইংল্যান্ড যাওয়া হয়েছে। কাজেই ইংল্যান্ডের সাথে আমার যোগসূত্র বহুদিনের। এখনও সময় সুযোগ পেলেই ইংল্যান্ড যাই। দুইমাস আগে ব্যবসায়ীক কাজে লন্ডন গিয়েছিলাম। এ সফর ছিল মাত্র ৬ দিনের।সাথেছিল ছোট ছেলে। এই ৬ দিনেই ছোট ছেলেকে লন্ডনের চারপাশ মোটামুটি দেখানোর সুযোগ হয়েছে। লন্ডনে ঘুরতে গিয়ে অনেক পরিচিত মুখ যেমন পেয়েছি তেমন অনেক নতুন মুখের সাথেও পরিচিত হয়েছি। পরিচিত বন্ধুবান্ধব,সজ্জনসহ কারো কারো বাড়িতেও গিয়েছি। দেখেছি তাদের বাস্তবতার নিরিখে সুশৃঙ্খল গোছানো জীবন। অনেকদিন ধরে নিকটজন যারা ইংল্যান্ডে বসবাস করছেন তাদের আন্তরিকতা,স্নিগ্ধ ভালোবাসায় মুগ্ধ না হয়ে পারিনি(এই ট্রিপেই ৮ দিনের আমেরিকা সফরে ওখানকার প্রবাসী বাংগালীদের এমন আন্তরিকতা আমি কম অনুভব করেছি)।

এবারের ভ্রমনে আমার ব্যবসায়ীক কাজ ছিল মূলত ম্যাঞ্চেস্টার ও লন্ডনেই। আমি আমার ব্যবসায়ীক কাজ শেষে প্রতিদিন পুরনো বন্ধুদের সাথে দেখা সাক্ষাত করেছি,অনেক নতুন বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করেছি,রাত জেগে আড্ডা দিয়েছি। অন্যদিকে ইংলিশ ফুটবলের ভক্ত আমার ছোট ছেলে ম্যান সিটি,ম্যান ইউ ও চেলসিয়ার কোনো খেলা দেখার জন্য মূখিয়ে থাকলেও-দূর্ভাগ্য জনকভাবে ঐ সময় ওদের কোনো খেলা না থাকায় খেলা দেখতে নাপারলেও আমার বুজী, বুজীর বর ও ছেলে-মেয়েদের সাথে(বুজীর বর বৃটিশ,সন্তান দুজনও বাংগালীদেরমতো নাহলেও স্বভাবে, অতিথিপরায়নায় মায়েরমতো বাংগালীয়ানা) এবং অন্য পরিচিতজনদের সাথে চেলসিয়া ও ম্যানসিটির অনূশীলন দেখার সুযোগপেয়েছে। সৌভাগ্যবশত ওর কয়েকজন প্রিয় খেলোয়ারদের অটোগ্রাফ ও ফটোগ্রাফও নিতে পেরেছিল!

আমার কাছে মনে হয়-লন্ডনের উন্নয়ন থেমে আছে বহুদিন যাবত।একথা বলার কারন হলো-২০ বছর পুর্বে যেসব বাড়ি,অফিস যেমন করে খুঁজে পেতাম এখনও সেই একই ভাবে সব বাড়ি,অফিস সহসাই খুঁজে পাই, নতুন স্থাপনা তেমন দেখা যায়না। অথচ আমাদের ঢাকা শহরে কলাবাগান,মোহাম্মদপূর কিম্বা উত্তরাসহ যেকোনো এলাকায় তিনমাস পর গিয়েই আর পুরনো লোকেশন খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়না-নতুন নতুন স্থাপনার কারনে।আমাদের দেশেরমতো এমন দ্রুত পরিবর্তন অন্য কোনো দেশে দেখতে পাইনা বললেই ঠিক বলা হবে।

লন্ডনে প্রচুর বাঙালী বসবাস করে। এদিক-ওদিক বাঙালী পাড়াও আছে। অনেক জায়গাতে এখন নেতৃত্বেও বাঙালীরা। দেখেছি পুরো লন্ডনে তার আশেপাশে বাঙালিরা কীভাবে বসবাস এবং জীবন-যাপন করছে। অনেকেই লন্ডনে যেমন ভালো চাকরি করছেন,অনেকেই ভাল ব্যবসা করছেন। এসব দেখে নিজের বেশ ভালো লেগেছে -এই ভেবে যে আমাদের তরুণরা সেদেশে বসে নেই। সবাই যে-যার মতো জীবন সংগ্রামে অবতীর্ণ। আমরা সবাই জানি আমাদের চেয়ে অনেক অনেক ফাস্ট লন্ডন, আমেরিকা,ইউরোপের লাইফ। অনেকেই বলেন সময়ের সাথে ছকে বাঁধা সবার জীবন। আসলেই তাই- যেখানে সেকেন্ড,মিনিট সময় ধরে দ্রুত চলতে হয়। সময়ের হেরফের করার সুযোগ কম,হেরফের হলেই খেসারত দিতে হয় তাকে। মনে হয় পুরো শহরের মানুষকে কোন একটি অদৃশ্য শক্তি পরিচালনা করছে। দেখেছি রাস্তায় সময়মতো গাড়ি,সময়মতো ট্রেন,সময়মতো অফিস-আদালত আবার ক্যাফে-রেস্টুরেন্টে হৈ-হুল্লা ও খাবার-দাবার। সময়ের সাথে সবকিছুর যোগসূত্র। সময়কে ধরেই প্রতিটি মানুষের জীবনকর্ম নিখুঁতভাবে বিস্তৃত।

এসব দেখে মনে হয় আমাদের দেশে সব উল্টো। মনে হয় আমাদের দেশের মানুষের হাতে প্রচুর সময়। সাতসকালে কতো না মানুষ ঘন্টার পর ঘন্টা সময় অপচয় করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে চা পান করে। সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে আয়েশে ধোঁয়া ছোঁড়ে।অসংখ্য নিস্কর্মা মানুষদের রাস্তার ফুটপাতে কিম্বা রিকশা ভ্যানের উপর লুডু কিম্বা নূড়ি পাথর/ইটের টুকরাদিয়ে কোনো একধরনের খেলা ঘন্টারপর ঘন্টা দাঁড়িয়ে দেখে সময় নস্ট করতে দেখি। এরাই রাস্তার পাশে ভন্ড প্রতারক ক্যানভাসারের “পান্ডার তেল” কিম্বা “ধন্বনন্তরী ঔষধ” বিক্রির ক্যানভাস শোনে!এমনকি বান্দরের খেলা দেখে অবাক বিস্ময়ে! আবার এই লোকেরাই গাড়ির জন্যে ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হয়। কোথাও যেতে সিএনজি চালকদের কোমলকণ্ঠে পা পর্যন্ত ধরার উপক্রম হয়। এ্যাম্বুলেন্স, ফায়ারব্রিগেড বা অন্যকোন জরুরী সার্ভিসের পরিবহনকে সামনের গাড়ীচালক কোন তোয়াক্কা করে না, দেয় না কোন সাইড। তাতে কোন মুমূর্ষু রোগী থাকুক বা আগুন নিভানোর গাড়ী থাকুক তাতে কারো কিছু আসে-যায় না। আর লন্ডন-একবারেই ব্যতিক্রম। এসব উদ্ভট অবিশ্বাস্য কোনো অত্যাচার নেই। মনে হয় সবকিছু নিজস্ব নিয়মে চলছে। আর সবকিছু সুবিধা প্রাপ্তির অধিকার রয়েছে প্রতিটি মানুষের।

তবে এতোকিছুর পরেই এই লন্ডন আমাকে খানিকটা বেদনাহত করেছে। লন্ডনের রাস্তায়, রেস্তরায় দেখেছি আমাদের একশ্রেণীর তরুণদের দীর্ঘশ্বাস। যে তরুণরা লুকিয়ে লুকিয়ে চোখের পানি ফেলছে। যে তরুণরা কোনো উপায়ান্তর খুঁজে পাচ্ছে না। অনেকেই লন্ডন ছেড়ে ইউরোপের এদেশ-ওদেশে যাওয়ার জন্যে প্রাণান্তকর চেষ্টা করছে। এই তরুণরা সবাই স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে লন্ডনসহ আশেপাশের শহরে গিয়েছে। একরকম স্বপ্ন নিয়েই তারা লন্ডনে পাড়ি জমালেও সেই স্বপ্নে কালো মেঘের ছায়া জমতে সময় লাগেনি। তরুণদের অনেকের স্বপ্নই তাই ফিকে হয়ে গেছে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে। অনেকেই এখন বুঝতে পারছে না তারা কী করবে। বেকার অবস্থায় বিভিন্ন ডরমেটরিতে গাদাগাদি করে শুয়ে থাকা,কেউ কেউ চুপিচুপি দূরে কোথাও চাকরি করা আর রাত হলে একটি বার্গার অথবা স্যান্ডউইচ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়া,আগামী সেমিস্টারে কলেজের টিউশন ফি দিতে না পারলে কি হবে-এসব বিবিধ চিন্তা নিয়ে কষ্টের জীবনে পরিণত হয়েছে এই স্বপ্ন বিলাসী তরুণদের।

(আগামী পর্বে বাকীটুকু)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:২৯
৫৬টি মন্তব্য ৬০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×