একালের বুদ্ধিজীবী এবং সেকালের ভীষ্ম-দ্রোণ-কৃপাচার্য এবং একজন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাইদ ............
যখন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ বেঁধে গেল, তখন পাণ্ডবেরা আশা করেছিলেন যে ন্যায়নিষ্ঠ বুদ্ধিজীবীরা অন্যায়কারী কৌরবদের বিরোধিতা করবেন ও পান্ডবদের পক্ষে দাঁড়াবেন। কিন্তু বাস্তবে তাঁরা তা করলেন না, কৌরবদের অন্যায়কারী জেনেও তাঁরা পান্ডবদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করতে নামলেন।
পান্ডবরা যখন তাঁদের পক্ষে যুদ্ধের সেনাপতিত্য গ্রহণের জন্য ভীষ্ম-দ্রোণ-কৃপাচার্যের কাছে আবেদন জানালেন, তখন কৌরবদের বিরোধিতা করতে তাঁরা অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন এই বলে -
"আমরা কৌরবদের অর্থসাহায্যে জীবন ধারণ করেছি, সে কারণেই ক্লীবের মতো আমরা বলতে বাধ্য হচ্ছি যে কৌরবরা যত অন্যায়ই করুক ওদের বিরুদ্ধে আমরা যেতে পারি না, কারণ সকল মানুষই অর্থের দাস, অর্থ কারুর দাস নয়।"
কী কঠিন ও মর্মান্তিক স্বীকারোক্তি!
এরকম স্বীকারোক্তি বর্তমান কালের খুব কম সংখ্যক বুদ্ধিজীবীই করেন বা করতে পারেন। অর্থের দাস বা অন্নদাস অধিকাংশ বুদ্ধিজীবীই বরং বুদ্ধির মারপ্যাঁচের আশ্রয় নিয়ে অন্যেকেও প্রতারণা করেন আবার আত্মপ্রতারণাও করেন। তাঁরা কিছুতেই পারে না তাদের অন্নদাতার বিরুদ্ধে একটি শব্দ বলতে বা লিখতে। স্বৈরাচারী ক্ষমতাসীনের একটা ফোনকল বা একটা নিমন্ত্রণে তাঁদের চোখ চকচক করে ওঠে। জুটলেও জুটতে পারে পরবর্তী নির্বাচনী টিকিট অথবা অন্নদাতার লংগরখানার এক কোণে স্থান। "তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়" লেখা হয় কেবল কবিতা বিক্রির জন্য। বাস্তবে কবি/শিল্পী/বুদ্ধিজীবীরা রাণীমার পায়ে ল্যাজ নাড়ায়।
তবে এই রাষ্ট্রের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের নগদ ও সুদূরপ্রসারী সাফল্যের মধ্যে অন্যতম সাফল্য, আমাদের কালের অনেক বুদ্ধিজীবী, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, গায়ক/গায়িকা, সাংবাদিকের আসল চেহারার উন্মোচন। সময় নামক কষ্টি পাথর যাচাইয়ে তারা ধরা দিয়েছেন। যারা সুবিধাবাদী তারা সব সময়ই সুবিধাবাদী। একজন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাইদ ছদ্মবেশী দালাল ও ভন্ড চেহারা নিজেই খুলে দিয়েছে এই সময়। নিপুণ সুশীল শিরদাঁড়ার ছদ্মবেশটি যারা নিয়েছেন বেশ, তাদের দ্বারা আন্দোলনের মাঠে শরিক যারা এবং চোখ কান খোলা যাদের, তারা এর পর অবশ্যই বিভ্রান্ত হবেন না আশা করি।