একদা খুব গান শুনতাম। সংগ্রহে আছে দেশী বিদেশী অনেক বিখ্যাত শিল্পীদের অসংখ্য লংপ্লে রেকর্ড, সিডি, ডিভিডি- যা এখন স্রেফ ঘরের জঞ্জাল! জঞ্জাল পরিস্কার করতে যেয়ে একদা অসম্ভব জনপ্রিয় শিল্পী নাজিয়া হাসানের বেশ কটা গানের সিডি পেলাম.....
নতুন প্রজন্মের অনেকেরই কাছে অজানা রয়ে গেছেন নাজিয়া হাসান। কিন্তু, হিন্দি ফিল্মি গানের বাইরে বেসিক গানের কোন অস্তিত্বই ছিল না যখন, তখন হিন্দি গানের জগতে এল একটা চোদ্দ বছরের মেয়ের গলায় প্রথম অ্যালবাম - 'ডিস্কো দিওয়ানে'। আর এই অ্যালবাম মাতিয়ে দিল শুধু আমাদের দেশ না, গোটা উপমহাদেশসহ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, এমনকি লাতিন আমেরিকার কিছু দেশকেও। যদিও নাজিয়ার গলার সাথে শ্রোতাদের পরিচয় হয়েছে, আগেই, ফিরোজ খানের 'কুরবানী'র 'আপ জ্যায়সা কোই'র মধ্যে দিয়েই।
নাজিয়ার দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘স্টার/বুম বুম’ মুক্তি পায় ১৯৮২ সালে। অ্যালবামের সাউন্ডট্র্যাক ব্যবহৃত হয়েছিল ‘স্টার’ ছবিতে। কুমার গৌরব ও রতি অগ্নিহোত্রী অভিনীত ছবিটি বক্সঅফিসে সাফল্য না পেলেও শ্রোতাদের মনের আরও কাছাকাছি চলে আসে নাজিয়ার গান।
নাজিয়া হাসানের গানের কম্পোজিশন এই একুশ শতকে কমপ্যাক্ট মনে নাও হতে পারে। আমি বিশ্বাস করি গানের মেলডি শাশ্বত। যারা নাজিয়া হাসানের নাম শোনে নি; সেই নতুন প্রজম্ম কে বলি- নাজিয়া হাসান ছিলেন আশির দশকের এক ক্ষণজন্মা পাকিস্তানি পপ সিঙ্গার। পাকিস্তানি হওয়া সত্ত্বেও ভারতে ছিলেন দারুন জনপ্রিয়।
সাফল্য ও জনপ্রিয়তার ধারা নাজিয়া ধরে রেখেছিলেন তাঁর তৃতীয় অ্যালবাম ‘ইয়াং তরং’ এবং চতুর্থ অ্যালবাম ‘হটলাইন’-এর ক্ষেত্রেও। টেলিভিশনেও বহু জনপ্রিয় শোয়ে ভাই জোহেবের সঙ্গে কাজ করেছেন নাজিয়া। তাঁর দেখানো পথে অনেক শিল্পীই নিজের জায়গা করে নিয়েছিলেন পপগানের দুনিয়ায়।
নাজিয়ার দুঃখময় ব্যক্তিগত জীবন এবং অকাল মৃত্যু আলোচ্য নয়। গানের মেলডি শাশ্বত। তাই নাজিয়া হাসানের গান আজও শ্রুতিমধুর। মাত্র ৩৫ বছর বয়েসে মারা গেছেন ক্যান্সারে।
এক নজরে নাজিয়া হাসানঃ
নাজিয়া হাসান জন্মঃ এপ্রিল ১৯৬৫ – ১৩ আগস্ট, করাচি, পাকিস্তান। একজন পপ শিল্পী, আইনজীবী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সমাজকর্মী। তার সফল সঙ্গীত জীবনের মাধ্যমে নাজিয়া উপমহাদেশের কিংবদন্তি একজন শিল্পী হিসেবে মর্যাদা লাভ করেন এবং দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় সেলিব্রেটিদের একজন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছেন এবং প্রথম পাকিস্তানি হিসেবে শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য শিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতে নিয়েছিলেন। নাজিয়া মাত্র ১৫ বছর বয়সে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন। তিনি পাকিস্তানের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার প্রাইড অফ পারফরম্যান্স বিজয়ী।
মৃত্যুঃ ১৩ আগস্ট ২০০০ (বয়স ৩৫) লন্ডন, যুক্তরাজ্য।
নাজিয়া হাসানের ছবিটি নিয়েছি তার ডিস্কো দিওয়ানে সিডি কভার থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:৫৯