somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

জীবন বোধ....

১৯ শে মার্চ, ২০২২ সকাল ৯:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবন বোধ....

প্রতিটা মৃত্যু আমাদের পরিণত করে দেয়। কবরস্থান, জায়গাটা এমন একটি জায়গা যেখানে গেলে সমস্ত লোভ, ঘৃণা, বিদ্বেষ, আশা, পাপ, পূণ্য বোধ তুচ্ছ মনে হয়। একদিন সব শেষ হবে, এই বিশ্বাস কুড়ে খায়। মহাকালের একটি ভগ্নাংশ আমাকে অধিকার করতে দেওয়া হয়েছে, সেটুকুর মধ্যেই নিজের ভালো কাজটুকু অথবা খারাপ চিহ্নটুকু রেখে যাওয়া। আর কিছুই থাকে না। প্রবহমান কালের স্রোতে যেখানে যে কোন মানুষের অস্তিত্বই তুচ্ছ, তার অসীম শক্তির অহংকার অসহায়, তার যাবতীয় আস্ফালন বা অসহায়তা বা ভালোবাসা সব হারিয়ে যায় মাটির গভীরে। ফুরিয়ে যায় সবটুকু। কালের এই নিয়মের সামনে সকলেই পরাজিত।

যারা চলে যান তারা কি ফিরতে চান?
তাদেরও বোধহয় আফসোস থাকে, ঈশ্ মেয়েটার বিয়ে দেওয়া হল না; ঈশ্ ছেলেটাকে মানুষ করা হল না; ঈশ্, এই তো বাড়িটা বানালাম, থাকা হল না; সারাজীবনের ভুলগুলো যদি আরেকবার শুধরে নেওয়া যেতো! এরকমটা মনে হয় ছেড়ে যাওয়া আত্মার?
এ নিয়ে নানা মুনির নানা মত, নানা সিদ্ধান্ত, নানা গবেষণা।

আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার বাবাকে দেখতে পাই বহুদিন মৃত্যুর পরেও। যেন বাবা বলতে চাইছেন, "বেঁচে থাকতে খুব বেশি তোর পাশে দাঁড়াতে পারিনি, আফসোস... আফসোস, এখন থাকবো।"
মানুষের বেঁচে থাকা ঘিরে নানা অভিযোগ, এটা নেই, ওটা নেই, ক্ষুদ্র অভিযোগে আনন্দগুলোকে পার করে যাওয়া। একটা জীবন কত সময় কেটে যায় শুধু অভিযোগ করতে করতে, মুঠো থেকে জীবন বেরিয়ে গেলে হঠাৎ বোঝা যায়, যাহ্ বাঁচাইতো‌ হল না, এই তো এত অভিযোগের পাহাড় নিমেষে শেষ!
এ যে বাজিকরের খেলা।

যিনি চলে যান তারও কতকিছু অপূর্ণ থাকে, অপূর্ণ থেকে যায়। যারা থেকে যায় তাদের স্মৃতিজুড়ে থাকে কত অপূর্ণতা। মানে জীবন থাকতে আফসোস, জীবন গেলে আফসোস। আমার এই বয়সে এসে এই শূন্যতাটা বড় আপন মনে হয়- "কিছুই কিছু না" এর বোধ।
আমার বাড়ি, আমার গাড়ি, আমার সন্তান, আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ... আসলে সে ভবিষ্যতে আমি নেই, আমরা কেউই আমাদের সন্তানের ভবিষ্যতে চিরস্থায়ী নই, আমাদের ভবিষ্যত বলে কিছু কাল না থাকতে পারে, দপ্ করে নিভে যেতে পারে প্রদীপ।

তবে কেন এত দৌড়ঝাপ?
এই ভগ্নাংশ কাল যেটা আমাকে অধিকার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সেখানে নিজেকে জাহির করার অপপ্রয়াসে কখন যেন ধাঁম করে চলে যায় জীবনটা, প্রিয় মানুষগুলোর সঙ্গে দুদন্ড বসে হেসে কথা বলা হয়না।

আমার বড় ও ছোট চাচা মারা গেছেন কমবেশি সত্তর বছর বয়সে। বাবা আরও কম বয়সে। আমার বাবা চাচা, মামা মামী, খালা খালু, শশুর শাশুড়ী অনেক আগেই মারা গেছেন। কয়েকজন চাচাতো ভাই ছাড়া মুরব্বি স্থানীয় কেউ বেঁচে নেই আমাদের বৃহত্তর পরিবারে। স্নেহ পেতে দাঁড়ানোর জায়গাগুলো কমছে। অভিভাবক শব্দটার খুব গুরুত্ব, যত বয়স বাড়ছে। প্রিয় মানুষেরা চলে যায়, আর আমার মধ্যে জেগে ওঠে প্রতিবার এক তুচ্ছতার বোধ, এক শূন্যতা, আফসোসে ভরা একটা জীবনের প্রতি করুণা।

একজনের পর একজন কাছের লোককেই হারাচ্ছি। এখন আর শুধু পেশাগত ভাবে আত্মীক সম্পর্কের নয়, সরাসরি অতি ঘনিষ্ঠ মানুষদের অত্যন্ত সংকটজনক অবস্থা বা জীবনাবসনের সংবাদ প্রায় নিত্যনৈমিত্যিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হয়ত আমরা এমনিতেই জীবনসায়াহ্নে এসে পৌঁছেছি.... আমাদের অনেকের এই বয়সে ইনিংস শেষ করার কথা। After all.."we have attained the dieable age"..। অদ্ভুত ভাবে দেখা যাচ্ছে, কোনো সতর্কতা ছাড়াই বেশীর ভাগ মানুষ আরামে রয়েছে আবার সতর্কতা সত্বেও কিছু মানুষের ক্ষেত্রে morbidity ও mortality অত্যন্ত বেশী। বাছাই বা selective কিছু মানুষ কেনই বা most vulnerable তার কোনো না কোনো কারণ তো নিশ্চয়ই আছে, যদিও এই মুহূর্তে তা আমাদের সুনির্দিষ্টভাবে অধিগত নয়। কেবলমাত্র co-morbidity দিয়ে সমস্তটার ব্যাখ্যা আদৌ যুক্তিগ্রাহ্য হবে বলে মনে হচ্ছে না।

গত দুই বছরে কোভিডে এবং প্রাকৃতিক নিয়মেই আমরা আমাদের অনেক সেরাদের হারিয়েছি। এখনো হারাচ্ছি। মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। যা কখনই কাম্য ছিল না তাই মেনে নিতে হচ্ছে অনেক কষ্টে........
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০১
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকার মানুষের জীবন

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪


ঢাকাতে মানুষ বড় বিচিত্র ভাবে বেঁচে থাকে। নিয়মিত ঢাকার রাস্তার ঘুরে বেড়ানোর কারণে এই রকম অনেক কিছু আমার চোখে পড়ে। সেগুলো দেখে মনে হয় মানুষ কত ভাবেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ কখনো এমন করে বলতে পেরেছে কি?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


ভারতে গরু ও গোমাংস নিয়ে হত্যা বা সহিংসতার নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা কঠিন কারণ এটি রাজ্য, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং 'গরু রক্ষা' বাহিনী ইত্যাদীর কারণে একেক যায়গাতে একেক রকম। ভারত গোমাংস... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ, পাকিস্তানের ধর্মীয় জংগীবাদ ভারতের মুসলমানদের সাহায্য করছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৪০



এনসিপির জল্লাদরা, ফেইসবুক জেনারেলরা ও ৫/১০ জন ব্লগার মিলে ৭ সিষ্টার্সকে আলাদা করে দিবে বলে চীৎকার দিয়ে ভারতের মানুষজনকে অবজ্ঞা ও বিরক্ত করার ফলে ভারতের ২২ কোটী... ...বাকিটুকু পড়ুন

গৃহবধূ থেকে প্রধানমন্ত্রী; অভিভাবক শূন্য হলো বাংলাদেশ |

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১২


খালেদা জিয়া। ইস্পাতসম বজ্রকঠিন দেশপ্রেমের নাম খালেদা জিয়া। যিনি ভালো বেসেছেন দেশকে, নিজের জীবনের চেয়েও দেশকে ভালো বেসেছেন। দেশের বাহিরে যার নেই কোন লুকানো সম্পদ। নেই বাড়ি, গাড়ি অথবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেগম খালেদা জিয়াঃ এক দৃঢ়চেতা, সাহসী অধ্যায়ের সমাপ্তি

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭



প্রিয় ব্লগার,
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া আর আমাদের মাঝে নেই, ইন্না লিল্লাহি ওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

×