সিস্টেম লসঃ
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় স্বাধীনতা পদক পেয়েছে!
মারহাবা!! মারহাবা!!!
প্রথমেই একটা বাণী উগরে দিচ্ছিঃ "ঘুষ দিবেন না, ঘুষ দাতা জাহান্নামে যাবে"!
সম্পুরক বাস্তবতাঃ ঘুষ গৃহীতা কানাডা- মালেশিয়া বেগম পাড়ায় সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করিবে।
বাংলাদেশে সরকারী সেবাখাতে সিস্টেম লস কথাটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং মুখরোচক একটি শব্দ। প্রথমেই বলে নেই-সিস্টেম লস কি? সহজ কথায়-সাধারণত যখন কোন জিনিস তার নিজস্ব গতিপথে চলে তখন তাকে সিস্টেম বলে। আবার যখন নিজস্ব গতিপথে না চলে ভিন্ন পথে অনিয়মিত ভাবে চলে তখন তাকে আমরা সিস্টেম লস বলি। বাংলাদেশে অর্থনীতিতে সিস্টেম লস কথাটি ব্যাপক ভাবে পরিচিত। বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে স্বধীনতা সংগ্রামীরা স্লোগান দিত-"সরকারকা/ কোম্পানীকা মাল দরিয়ামে ঢাল"! কিন্তু স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে কথাটি ব্যাবহৃত হয় রাস্ট্রায়ত্ব বা সরকারি যাবতীয় মালামাল নিজের মনে করে ইচ্ছামত খরচ করা ও লুটপাট করা বোঝাতে।
চুরি করে বি্দ্যুত ব্যাবহার, পানি ব্যাবহার, ব্যাংকের ঋণ লোপাট করা, গ্যাস চুরি/অপচয় করা, লাইনম্যান, মিটার রিডারকে ঘুষ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার বিদ্যুত/গ্যাস বিল মাত্র কয়েক হাজার টাকায় নামিয়ে নিয়ে আসা ইত্যাদি গহির্ত কাজে এক শ্রেণীর কর্মকর্তা কর্মচারী জড়িত। সীমাহীন দুর্ণীতি এবং অপচয়ের পিছনে যে বিশয়টি কাজ করে তাহলো সরকারী সম্পদ আত্মস্বাত 'অনৈতিক নয়' মনে করা। এধরনের অপকর্মের কারনেই সরকার প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা সিস্টেম লসের খাতায় নাম লেখাচ্ছে। এই সিস্টেম লসের একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ সত্যি সত্যি চলে যায় যান্ত্রিক সিস্টেমের ত্রুটির জন্য যা সর্বোচ্চ ১০ শাতাংশ। কিন্তু বৃহত অংশ যা প্রায় ৯০ ভাগ চলে যায় দূর্ণীতির কারনে বিশেষ কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীর পকেটে।
আমার দেখা বিদ্যুৎ বিভাগের একটা দুর্নীতির চিত্রঃ আমাদের নিকট প্রতিবেশীর একটা বহুতল বানিজ্যিক ভবনের দুইটা ফ্লোর কোচিং সেন্টার হিসাবে ভাড়া দেওয়া। স্বাভাবিক নিয়মে মাসে ৫০/৬০ হাজার টাকা বিল হওয়া উচিৎ। কিন্তু মিটার রিডার-বিল্ডিং মালিক কারসাজি করে দুটি ফ্লোরে মাসে বিল করা হতো ২৫০০/-- ৩০০০/- মধ্যে। মালিকের শত্রুপক্ষের অভিযোগে ডেসার কেন্দ্রীয় অফিস থেকে একটা টিম এসে সত্যতা প্রমাণ পায়। দেখা যায় দুই বছরে ৬৪ লক্ষ টাকার বিল ফাঁকি দিয়েছে। বিল্ডিং মালিক দেশের সুনামধন্য একজন সাংবাদিকের ফাস্ট কাজীন....যথাযথ ভাবে তদ্বির করে নামমাত্র জরিমানা দিয়ে যথারীতি বিদ্যুৎ চুরি করে যাচ্ছে।
বিদ্যুত খাতের সিস্টেম লসের শুধুমাত্র একটা কারন/ঘটনা বর্ণনা করছি। বাংলাদেশে বিদ্যুত খাত উতপাদনে এবং বিতরণ খাতে বেশ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। যেমন পি ডি বি, ডেসা, ডেসকো, প্ললী বিদ্যুত এরকম আরো কয়েকটি সংস্থা। তার মধ্যে বেশ কয়েকটা অধিদপ্তর নিজস্ব নিয়ম নীতিতে কাজ করে। এর মধ্যে চুরি চামারিতে তথা সিস্টেম লসের সম্রাট হলেন মিঃ ডেসা এবং মিঃ পি ডি বি। লাইন ম্যান, মিটার রিডার চুরি করে কোটি পতি হবার কাহিনী এখন সবাই জানেন। তবে মেন্টেইন্যান্স ডিপার্ট্মেন্টের চুরির দিকে কেউ খেয়াল এখনো করেনি বোধ করি। মেন্টেইনেন্স ডিপার্ট্মেন্টের চুরি করা হয় মুলত ডেসা/ পি ডি বি'র ঠিকাদারদের মাধ্যমে। ধরা যাক-ঢাকা শহরের ডেসা'র চলতি বছর মেন্টেনেন্স খাতে ১০০০ কোটি টাকা বরাদ্ধ আছে। এখোন সেই বরাদ্ধকৃত টাকাটা ভাগ বাটোয়ারা করে খেতে হবে- নামে মাত্র(কাগজে কলমে)মেন্টেনেন্স করার নামে।
এ টু জেড কর্তিপক্ষ বিভিন্ন এরিয়ার মেন্টেনেন্স কাজের সেডিউল বানাবে ছোট ছোট (প্রতিটা কাজ ১০/২৫ লক্ষ টাকার মধ্যে। বিদ্যুত বিভাগের মেন্টেনেন্স কাজে ২৫ লক্ষ টাকার নীচের কাজের টেন্ডার নোটিশ পত্রিকায় দেয়া লাগেনা)বরাদ্ধ দিয়ে। তারপর পছন্দের ঠিকাদারদের ডেকে ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের বাড়ীতে মিটিং করবেন। ঠিকাদার ইঞ্জিনিয়ার সাহেব তথা বিদ্যুত কর্তিপক্ষদের ৫০% বরাদ্ধের টাকা এডভান্স দিয়ে দিবেন। বাকী টাকা বিল করে ঠিকাদার তুলে নিবেন। ভিতরের যা কিছু কাজ-অর্থাত ঠিকাদার কাজ করেছে, ইঞ্জিনিয়ার সরেজমিনে গিয়ে কাজ তদারকী করেছেন ইত্যাদি সেডিউল মত তৈরী করে নোট দিবেন যার যার টেবিলে বসেই। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই বিল পেয়ে যাবেন। কাজ কিন্তু মোটেই হয়নি। যদি দুর্ভাগ্যবশত কোথাও কাজ হয়েই থাকে-তবে তা মাত্র ৩-৪% ! এক্ষেত্রে ডেসা/ পি ডি বি কর্তিপক্ষ কিন্তু অনেক উদার তথা দিল দরাজ কর্মকর্তা! যে টুকু কাজ হয়েছে কিম্বা হবে সেই পরিমান টাকা তারা বাদ দিয়েই ৫০% টাকা নিবেন এবং রেশিও মোতাবেক সবাই ভাগ করে নিবেন! যদি বিশ্বাস না হয়-সরকারের যেকোন গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে গোপনে পরীক্ষা করে দেখা হোক- সত্যতা মিলবে(যদিনা সেই গোয়ান্দাদেরকেও ভাগ বাটোয়ারা না দিতে হয়)!
এক্ষেত্রে সরকার পানি, গ্যাস, বিদ্যুত, রেলওয়ে, বিমান সেক্টরকে বেসরকারী সেক্টরে ছেড়ে দিতে পারে। যদিও বিনিয়োগের তুলনায় খুব সামাণ্য লাভের কারনে বেসরকারী উদ্যোক্তারা এই সব খাতে বিনিয়োগে খুব উতসাহিত হবেনা। কাজেই সরকারকেই তাদের বিভিন্ন সংস্থার মাথা ভারী প্রশাসান ছোট করে প্রতিটি স্তরে জবাবদিহি মুলক প্রশাসনিক ব্যাবস্থা গ্রহন করতে হবে। কিন্তু রক্ষক যদি ভক্ষক নয়- তাহলে পদেপদে সিস্টেম লস আরও বাড়বে। খেসারত দিতে হবে আমজনতার।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




