somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

এতদ্বারা সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে......

১১ ই এপ্রিল, ২০২২ সকাল ৯:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"এতদ্বারা সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে".........

যে কোনো বিজ্ঞপ্তির সূচনাবাক্য হিসেবে উপরের লাইনটি যে এযাবৎ লক্ষকোটিবার ব্যবহৃত হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সভা আহ্বান, জনগুরুত্বসম্পন্ন বার্তা কিংবা প্রশাসনিক ঘোষণা প্রচারের প্রয়োজন হলেই অনিবার্য এই সূচনাবাক্যটি ব্যবহার করি। এই বাক্যের অন্য কোনো বিকল্প হতে পারে কি না, এ নিয়ে কেউ কোনোদিন ভেবেছেন কিনা জানিনা। সুতরাং এ এক অনিবার্য মুখস্থ বয়ান হয়ে দাঁড়িয়েছে : "এতদ্বারা সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে"।

এভাবেই চলছে "অনাদি কাল হতে"! কিন্তু আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি, বাক্যের এই সূচনাংশটি দু-দুটি ভুলে আক্রান্ত। আবহমান অভ্যস্ততার স্রোতে ভেসে আমরা অবলীলায় ভুল দুটো করে চলেছি। প্রথমে "এতদ্বারা" নিয়েই কথা বলা যাক। এটি একটি ভুল শব্দ এবং ভুলটি সন্ধিসংক্রান্ত। "এতৎ" ও "দ্বারা" এ দুটি শব্দ মিলে আলোচ্য শব্দটি গঠিত হয়েছে। সন্ধিনিষ্পন্ন নির্ভুল শব্দটি হবে "এতদ্দ +দ্বারা"। "এতৎ"-এর "ৎ" (খণ্ড ত) "দ্বারা"র "দ"-র সঙ্গে মিলিত হলে "ৎ" "দ"-এ পরিণত হয়। "দ্বারা"র "দ" আর "ৎ" থেকে জাত "দ" মিলিয়ে হয় "দ্দ", আর "ব"-ফলা তো আছে আগে থেকেই। সুতরাং শব্দটি হবে "এতদ্দ+ দ্বারা"। কিন্তু অভিধানগ্রন্থ ব্যতীত "এতদ্দ+দ্বারা"র শুদ্ধ বানানের দেখা পাওয়া প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার বললেও অত্যুক্তি হবে না।

সন্ধির নিয়মটি ভাল করে খেয়াল না করার ফলেই এই ভুলটি বিরামহীনভাবে ঘটে চলেছে। সমজাতীয় আরও দুটি সন্ধির উদাহরণ দিচ্ছি। এতৎ+উদ্দেশ্যে=এতদুদ্দেশ্যে, এতৎ+দেশীয়= এতদ্দেশীয়। যদি "এতদ্বারা" শুদ্ধ হয়, তাহলে "এতউদ্দেশ্যে" ও "এতদেশীয়"কে শুদ্ধ বলে গণ্য করতে হবে এবং এই বানানেই শব্দ দুটি লিখতে হবে। সুতরাং সন্ধির সূত্র মান্য করে আমাদের লিখতে হবে "এতদ্দ+দ্বারা", "এতদুদ্দেশ্যে" এবং "এতদ্দেশীয়"।

এবার দ্বিতীয় ভুল প্রসঙ্গেঃ আমরা লিখছি, "সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে,"। এরকম বাক্যাংশ যে রীতিমতো হাস্যকর ব্যাপার, আপাত বিচারে তা আমাদের কাছে ধরা পড়ে না। "অবগতি" শব্দের মানে কী? যে কোনো অভিধানই বলবে, এর মানে হচ্ছে, "জানা"। তাহলে "সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে"-একথার মানে দাঁড়াচ্ছে "সকলের জানার জন্য জানানো যাচ্ছে"। এর অনুসরণে এমনও কি বলা হবে, "শোনার জন্য শোনানো হচ্ছে" কিংবা "দেখার জন্য দেখানো হচ্ছে"!

এখন ভেবে দেখুন, একটি বিজ্ঞপ্তি রচনা করতে গিয়ে তার সূচনাবাক্যে কী সব আজগুবি কাণ্ড আমরা ঘটাচ্ছি! আসলে ভাষাব্যবহারে বাহুল্যের প্রতি একটা দুর্মর ঝোঁক আমাদের মধ্যে বিদ্যমান। তাই তো "সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে" এরকম ভুল বাক্যাংশের চিরাভ্যস্ত প্রয়োগের মধ্যে আমরা ডুবে আছি। আমরা নির্দ্বিধায় এরকম বাক্য লিখতে পারি : "সকলের অবগতির জন্য খবরটা প্রকাশ করা হল।" এরকম বাক্য রচনাতেও কোনো দোষ নেই: "আপনার অবগতির জন্য পেশ করা হল" কিংবা "আপনার অবগতির জন্য উপস্থাপন করা হল।" কিন্তু "সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে" বা "জানানো হল" একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিজ্ঞপ্তির শুদ্ধ সূচনাবাক্যটি হবে এরকম: "এতদদ্বারা সকলকে জানানো যাচ্ছে যে"।

কতরকমের ভুল যে আমরা করি, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। অনেকে লেখেন: "আপনার জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে যে,’। "অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে"-এই বাক্যাংশেরই সহোদর ভাই এটি। এরা একই দোষে দুষ্ট। কেবল শব্দগত তফাত এই যা। কিন্তু "অবগতির জন্য" তো স্বতন্ত্র শব্দ হিসেবে শুদ্ধ, "জ্ঞাতার্থে"র সেই শুদ্ধতাটুকুও নেই। "জ্ঞাত" মানে "অবগত" আর "অর্থে" মানে "জন্য"। সুতরাং "জ্ঞাতার্থে" শব্দের মানে দাঁড়াচ্ছে "অবগত জন্য"। নিঃসন্দেহে এটি ভুল শব্দ। "অবগতির জন্য জানানো" আর "জ্ঞাতার্থে জানানো" এ দুটিই পরিত্যাজ্য। যদি জানাতেই হয়, তাহলে সোজা লিখতে হবে, "আপনাকে জানানো যাচ্ছে যে" কিংবা "আপনাকে অবগত করা হচ্ছে যে"।
আমরা যখন দরখাস্ত বা আবেদনপত্র লিখি, তখনও তাতে অনর্থক বাহুল্য ঘটাই। এর ফলে আড়ষ্ট বাক্য রচিত হয়। অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে "মহোদয়" বা "জনাব" বলে সম্বোধন করার পরই লেখা হয়, "আপনাকে অবগত করা যাচ্ছে যে, গত ১৫ মার্চ ২০২২ থেকে ১৮ মার্চ ২০২২ পর্যন্ত শারীরিক অসুস্থতাহেতু আমি অফিসে উপস্থিত হতে পারি নি।" এই বাক্যের "আপনাকে অবগত করা যাচ্ছে" অংশটুকুর কোনো প্রয়োজন নেই। "মহোদয়" সম্বোধন করে সরাসরি বক্তব্য বিষয়ে প্রবেশ করাই ভাল। তাতে বাক্য অনর্থক জটিলতার কবলে পড়ে না, ভাষাভঙ্গিও সপ্রতিভ হয়।

যে কোনো ভাষায় শব্দ ও বাক্য ব্যবহারে নির্ভুল হতে হলে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। তাহলে অনেক বিভ্রান্তি সহজেই এড়ানো চলে।

অঃ টঃ-আমার বাংলা বানানে প্রচুর ভুল হয় যা আমি স্বীকার করি। তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ভুল না, টাইপো হয়। কিন্তু শব্দ এবং বাক্য গঠনে কিম্বা ব্যকরণগত ভুলটা আমি কিছুটা হলেও বুঝতে পারি।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:১৩
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বই : টক অব দ্য টাউন

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০৮

বই : টক অব দ্য টাউন



একটি বই হঠাৎ করে এতটা আলোচনায় আসবে আমরা কি ভাবতে পেরেছি ?
বাংলাদেশের মানুষ অতি আবেগপ্রবন , বর্তমান রাজনৈতিক অস্হিরতার মধ্যে ও
বাঙালীর স্বভাবসুলভ অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাদ্রাসা শিক্ষা, বৈশ্বিক রাজনীতি, সহিংসতা ও জঙ্গিবাদ

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৫


লেখাটির শুরুতে একটি ভূমিকা দেওয়া যাক। সর্বশেষ দেশে গিয়ে কয়েকদিন গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। উত্তরবঙ্গে, নিতান্ত অনুন্নত আমাদের সেই গ্রামে এতগুলো কওমি মাদ্রাসা হয়েছে দেখে অবাক হয়েছিলাম। আগে গ্রামে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকার মানুষের জীবন

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪


ঢাকাতে মানুষ বড় বিচিত্র ভাবে বেঁচে থাকে। নিয়মিত ঢাকার রাস্তার ঘুরে বেড়ানোর কারণে এই রকম অনেক কিছু আমার চোখে পড়ে। সেগুলো দেখে মনে হয় মানুষ কত ভাবেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছর বৃষ্টিপাতের কারণ কী?

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯

পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছর বৃষ্টিপাতের কারণ কী?



পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছরই বৃষ্টিপাত হয়। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আফ্রিকার কিছু দেশ এবং দক্ষিন আমেরিকার কিছু দেশ ও অঞ্চলে বছরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ কখনো এমন করে বলতে পেরেছে কি?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


ভারতে গরু ও গোমাংস নিয়ে হত্যা বা সহিংসতার নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা কঠিন কারণ এটি রাজ্য, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং 'গরু রক্ষা' বাহিনী ইত্যাদীর কারণে একেক যায়গাতে একেক রকম। ভারত গোমাংস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×