মূত্রস্নান........
ভালো ব্যায়ামগুলোর একটি হলো সাঁতার। শরীরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে একই সঙ্গে চালাতে হয় সাঁতারের সময়। ফলে, বলা হয় এক সাঁতারেই সব ব্যায়াম। আর এই গরমে যাঁরা সাঁতার কাটেন, তাঁরা ভালোই জানেন কিছুক্ষণ পানির ভেতর থাকার মজাটাই অন্য রকম। ব্যায়াম এবং শরীর ঠান্ডা—এক ঢিলে দুই পাখি মারা হয়। আবার পানিতে নিরাপদ থাকার জন্যও সাঁতার জরুরি।
কেউ যদি একই সঙ্গে ফিজিক্যাল ফিটনেস এবং অনেক জটিল রোগ থেকে মুক্ত হতে চান, তবে তাঁর নিয়মিত সাঁতার কাটা উচিত। প্রতিদিন এক ঘণ্টা সাঁতার একদিক থেকে যেমন শরীরকে রোগমুক্ত ও সুঠাম রাখে, তেমনি মনকেও করে চাঙা। যেকোনো বয়সেই সাঁতার শেখা যায়।
গ্রামের মতো শহরে পুকুর নেই, ফলে সাঁতার শেখা একটু কষ্টকর। তবে রাজধানীতে সরকারি-বেসরকারি কিছু সুইমিংপুলে সাঁতার কাটা ও সাঁতার শেখা যায়। এসব পুলে নির্দিষ্ট ফির মাধ্যমে প্রশিক্ষকের কাছ থেকে সাঁতার শেখা যায়। তবে সুইমিংপুলে সাতারুরা অনেক নোংরা কাজ করে.....
বিশ্ববিখ্যাত মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেট এও সমীক্ষায় প্রমাণ পেয়েছেঃ ছেলে-মেয়ে যাই হোক না কেন, সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে গিয়ে প্রতি পাঁচ জনের একজনই পানির ভেতর প্রসাব করে আর পেশাদার সাঁতারু যারা আছে, তাদের শতভাগই সুইমিং পুলে নিয়মিত প্রসাব করে।
এই জন্য সুইমিংপুলকে বলা হয় ব্লু টয়লেট...যদিও সুইমিংপুলের সাথেই লাগোয়া টয়লেট থাকে, তবে খুব কম লোকই পানিতে নামার আগে প্রসাব সেরে নেয়।
সুইমিংপুলে গোসলের সময় দেখা যায় চোখ লাল হয়ে যায়...কিংবা হঠাৎ হাঁচি উঠে...
আগে ধারণা করা হত, এটি হয় পানি পরিষ্কারের জন্য ব্যবহৃত ক্লোরিনের জন্য কিন্তু আমেরিকার সিডিসির এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, শুধু ক্লোরিন নয়, এর জন্য বহুলাংশে দায়ী হল প্রসাব। সাতারুরা সুইমিং পুলে নেমে পানিতেই প্রসাব করে এবং প্রসাবের নাইট্রোজেন ক্লোরিনের সাথে মিশে সায়ানোজেন ক্লোরাইড তৈরি করে।
এই সায়ানোজেন ক্লোরাইডই চোখ লাল করে তোলে... নাকে গিয়ে হাঁচি সৃষ্টি করে... এমনকি প্রসাবের পরিমাণ বেশি হলে চামড়াতেও চুলকানোর অনুভুতি তৈরি করতে পারে।
সুইমিং পুলে যারা গোসল করেন তাদের হয়ত জানা নেই, এখানে পানিতে থাকে বিপুল পরিমাণ মূত্র। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে ফক্স নিউজ। আপনি যদি পাবলিক সুইমিং পুলে সাঁতার কাটেন তাহলে এর পানির একটি বিশেষ স্বাদের সঙ্গে পরিচিত হবেন। এটি প্রধানত ক্লোরিনের স্বাদ, যা পানিতে মেশানো হয়। এছাড়া এ পানিতে আপনি স্বাদ পাবেন মানুষের মূত্রেরও! সাঁতার কাটতে যারা পানিতে নামেন তাদের অধিকাংশই সবার অগোচরে পানিতে মূত্রত্যাগ করেন। যদিও বিষয়টি অন্যরা জানতে পারছে না বলে মনে করেন তারা। আর এ অভ্যাসটি অধিকাংশ মানুষেরই রয়েছে। একটি সাধারণ পাবলিক সুইমিং পুলের পানিতে ৭৫ লিটার মূত্র থাকে বলে জানা গেছে পরীক্ষায়। আর এর পেছনে রয়েছে মানুষের এ পানিতে মূত্রত্যাগের অভ্যাস। কারণ, পানিতে নামলে মূত্রত্যাগ থেকে বিরত থাকেন, এমন মানুষ কমই রয়েছে। সম্প্রতি এক গবেষণাতেও বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এ গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক লিন্ডসে ব্ল্যাকস্টক বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে মানুষ পাবলিক সুইমিং পুলে ও হট টাবে মূত্রত্যাগ করে।’ আর এ বিষয়টি অনুসন্ধানে কানাডারার ৩১টি সুইমিং পুলের পানি পরীক্ষা করেন গবেষকরা। এ বিষয়টি স্বীকার করেছেন মার্কিন অলিম্পিস সাঁতারু রায়ান লচেট ও মাইকেল ফেলপস। স্বর্ণবিজয়ী এ সাঁতারু বলেন, ‘আমার মনে হয় সবাই সুইমিং পুলে মূত্রত্যাগ করে। আর সে জীবাণুগুলো ধ্বংস করে ক্লোরিন। তাই এটি ক্ষতিকর নয়।’
গবেষকদের মতে, সুইমিং পুলের মূত্র স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। এর কারণ, মূত্রের ইউরিক এসিড ও ক্লোরিন একত্রে মিলে বিষাক্ত উপাদান তৈরি করে, যার নাম কিয়ানোজেন ক্লোরাইড (সিএনসিআই) ও ট্রাইক্লোরামাইন (এনসিআই৩)। এর মধ্যে প্রথম সিএনসিআই মানুষের কেন্দ্রীয় নাভার্স ব্যবস্থা, ফুসফুস ও হৃৎযন্ত্রের ক্ষতি করে। এছাড়া এনসিআই- ৩ ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি করে। এছাড়া, এ মূত্র চোখের ও দেহের আরও কিছু অঙ্গের ক্ষতি করে। সুইমিং পুলের এ মূত্র মোটেই হালকাভাবে দেখার উপায় নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে সুইমিং পুলে মূত্রত্যাগের এ অভ্যাস যেন সবাই বাদ দেয় সেজন্য জনসচেতনতা তৈরি ও ক্ষতিকর বিষয়গুলো সবাইকে জানানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাই ফ্যান্টাসি কিংডমের পানিতে নামার সময় কিংবা লোভনীয় কোন সুইমিং পুল দেখে ঝাঁপিয়ে পরার আগে সাবধান।
(পত্রিকার নিউজ দেখে তিন বছর আগে ফেসবুকে লিখেছিলাম)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:১২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




