
২০০ বছর ভারত বর্ষ শাসন ও শোষনের কারণে বৃটিশদের উপর উপমহাদেশের সাধারণ মানুষের একধরনের ক্ষোভ আর অভিমান আছে নিঃসন্দেহে। শুধু উপমহাদেশেই নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শাসকের আসনে বসে শুধু সেইসব দেশ শোষণ করেই থেমে থাকেনি বরং সেইসব দেশ থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে নেওয়ার আগে কোনো না কোনো সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কিম্বা জাতিগত বিষবৃক্ষ রোপণ করে এসেছে..... সেই বৃটিশরা এখন প্রায় একঘরে হয়ে মার্কিনীদের বরকন্দাজ হিসেবে নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানতে পারলাম- রাণীর ৭০তম করোনেশন উত্সবে মেতেছে বৃটেন(আমি জানিনা সেটা কতো বর্ষব্যাপী হবে)। রাণীর শাসন নিয়ে উচ্ছ্বসিত শিশু থেকে বৃদ্ধ, নিগ্রো-এশিয়ান-সাদা চামড়ার ইউরোপীয়-সবাই উদ্বাহু হয়ে উৎসবে মেতেছে। কেউ কারো খুঁত ধরে উৎসবের মেজাজ নষ্ট করছে না।
আমাদের অক্ষমতায় যতই রাগ ক্ষোভ থাকুক, বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা রাণীর প্রাক্তন প্রজারা রাণীর দেশের অনেক কিছুকেই বিশ্বসেরা মানতে দ্বিধা করিনা। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, গোটা দুনিয়া থেকে এখনো উচ্চশিক্ষার জন্য, চাকুরীর সন্ধানে যেকোনো ভাবে বেশীরভাগ মানুষ ইংল্যান্ড যেতে চায়। ওদের ডাক্তারী শিক্ষা প্রশিক্ষন, আইনী শিক্ষা এখনো বিশ্বসেরা। ওদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো জ্ঞানের চর্চা হয়। ধর্ম-বর্ণের অন্ধগলিতে এখনো ওরা খুব একটা পথ হারায়নি। সামন্তবাদের পীঠস্থানে ধ্রুপদী সাহিত্য চর্চা যেমন হয় তেমনি সারা পৃথিবী থেকে গণতন্ত্রপ্রিয় নির্বাসিত মানুষেরও আশ্রয়ভূমি এই ছোট্ট দেশটি।

বৃটিশদের থেকে বিশ্ববাসী অনেক কিছু শিখেছে। আমরাও বৃটিশ এর উত্তরসূরি। বৃটেনে রাজতন্ত্রের ভিতর গণতন্ত্র পুরো মাত্রায় বিদ্যমান থাকলে অনেক দেশেই গনতন্ত্রের ছ্দ্মাবরণে স্বৈরতান্ত্রিক রাস্ট্র ব্যবস্থা চালু আছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই যেখানে আন্দোলন সংগ্রাম করেও স্বৈরশাসকদের সিংহাসনচ্যুত করা যায়না, সেখানে বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী অল্পতেই গদি ছেড়ে দেন- এটা অবশ্যই সম্মানের। আমরা বৃটিশ এর উত্তরসূরি হয়েও ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার মোহ চ্যুত হতে পারিনি।
বৃটিশ ইতিহাসের একদিকে সিভিলিয়ানদের অত্যাচারের কাহিনী যেমন লেখা আছে, তেমনি আছে শিক্ষা-সাহিত্যে তাদের অবদান। দেশ ভাগ করে যে বিষবৃক্ষ তারা রোপন করে গেছেন তার ফল আমরা ভোগ করে চলেছি, আরো কত প্রজন্ম সেই বিষ পান করে চলবো জানিনা।
তবু, জ্ঞান ও শিক্ষার পীঠস্থান ইংল্যান্ড যে তার সমন্বয়ের সংস্কৃতি ধরে রাখতে পেরেছে, সারা পৃথিবীর জন্য স্বাস্হ্য-ব্যবস্থার একটি উন্নত মডেল প্রস্তুত করতে পেরেছে তার জন্য অবশ্যই প্রশংসা দাবী করতে পারে।
কাজকর্ম না থাকলেও রানীর সিংহাসন অটুট থাকুক; তার সাথে অটুট থাকুক মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ, শিক্ষার উন্নত আদর্শ ও স্বাস্থ্যের যুগান্তকারী সর্বজনীন ব্যবস্থা।
ছবিঃ গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




