আম নিয়ে পাক - ভারত বিবাদ....
আম অত্যন্ত সুস্বাদু ফল। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছেও আম খুব পছন্দের। সেই আম নিয়েই একটি বিবাদ আছে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে। হাজারো বিষয়ে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে দ্বন্ধ থাকলেও আম নিয়ে বিবাদ কিন্তু ব্যতিক্রমীই। অত্যন্ত তুচ্ছ এই বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক থেকে কূটনৈতিক স্তর পর্যন্ত একটি ঠান্ডা লড়াই রয়ে গিয়েছে অমীমাংসিত ভাবে গত চল্লিশ বছর ধরে।

ঘটনার সূত্রপাত ১৯৮১ সালে। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউল হক ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও রাষ্ট্রপতি নীলম সঞ্জীব রেড্ডিকে কয়েক ঝুড়ি 'রাতাউল' আম পাঠান। সঙ্গে পাঠান একটি ম্যাসেজও। বলেন, তাঁর দেশের ‘স্পেশাল ম্যাঙ্গো 'রাতাউল'। সেই আম খেয়ে ইন্দিরা এতটাই আপ্লুত হয়ে পড়েন, যে তিনি রাতাউল আমের প্রশংসা করে জেনারেল জিয়াকে খোলা চিঠি লেখেন, তাতে সার্টিফিকেট দেন, ওই সুস্বাদু আম শুধু পাকিস্তানেই ফলে।
অতি সাধারন এই সৌজন্য বার্তার ঘটনা থেকেই শুরু হয় বিতর্ক। ইন্দিরা গান্ধী যে এমন চিঠি দিয়েছেন, তা জানাজানি হতেই উত্তরপ্রদেশের রাতাউল জেলার আমচাষীরা ছুটে আসেন তত্কালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
বারবার তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে কার্যত ধর্নায় বসেন তাঁরা। তাঁদের দাবি ছিল, এই আম কোনোভাবেই পাকিস্তানের হতে পারে না। কারণ উত্তরপ্রদেশের ওই গ্রামে আফাক ফারিদি নামে এক ব্যক্তি প্রথম এই আমের চাষ শুরু করেন ব্রিটিশ শাসনকালে। এরপর, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় ওই আফাক ফারিদির সন্তান নাতি রাতাউল আমের বেশ কয়েকটি চারা সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তান চলে যান। মুলতানে গিয়ে তিনি ওই আম ফলান। নিজের বাবার স্মৃতিতে তার নাম দেন আনোয়ার রাতাউল। তারপর থেকেই মুলতানি আমের রমরমা আর আমের রাজা ওই আনোয়ার রাতাউল আম। পাকিস্তানে ওই আমের ওপর স্ট্যাম্পও বার করেছে।
তাঁদের গ্রামের বাগানে ফলে থাকা আমের ওপর পাকিস্তানের এই দাবী স্বাভাবিকভাবেই চটিয়ে দেয় রাতাউলের বাসিন্দাদের। তাঁরাও এক বাক্স আম ইন্দিরা গাঁধীকে পাঠিয়ে অনুরোধ করেন, ওই আম যেন পাক প্রেসিডেন্টকে উপহার দেন তিনি। ভারতীয়দের বক্তব্য, বাগপত ও আশপাশের এলাকার ২,০০০ বিঘারও বেশি জায়গায় শুধু রাতাউল আম ফলছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই আম খেয়ে বড় হয়েছেন তাঁরা। তাহলে কী করে তাঁদের গ্রামের নামে রাতাউল আম পাকিস্তানের হয়ে যায়?
এই ঘটনা শোনার পর কিছুটা বিপাকেই পড়েন ইন্দিরা গান্ধী। যদিও, বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে সমাধান করার আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়, তাঁর মৃত্যুর পরও এই রাতাউল আমের মালিকানা নিয়ে বহু টানাটানি হয়েছে। কিন্তু, সুরাহা মেলেনি। ফলে, বিশ্ব আম উত্সবের সময় যখনই এই দুই দেশ মুখোমুখি হয়, তখনই তাদের মধ্যে রাতাউল আম নিয়ে শুরু হয় ঠান্ডা লড়াই। কিন্তু, আম তুমি কার?
সে প্রশ্নের উত্তর এখনও অমীমাংসিতই রয়ে গেছে।
তথ্যসূত্রঃ হিন্দুস্তান টাইমস।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




