স্যোশাল মিডিয়া আমি কি লিখি....
গত পনেরো বছরের উপর ব্লগে, ফেসবুকে লেখালেখি করি। অবশ্য ছাত্র জীবন থেকেই স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাগাজিনে নিয়মিত লেখা ছাড়াও কয়েকটি অখ্যাত পত্রিকায় টুকটাক লেখা প্রকাশিত হয়েছে.....
সোশ্যাল মিডিয়ায় কম বেশি সবাই ফাপর নেয়, কারন এখানে সরাসরি কেউ কাউরে দেখে না, সে যেটা দেখাতে চায় বা বলতে চায় সেটাই আপনার দেখতে পান, শুনতে পান। জাজ করার সুযোগ খুব কম থাকে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় বলছি, সবার স্বার্থে নতুন এই পাগল গুলাকে থামানোর চেষ্টা করা উচিত অথবা সবার ইগনোর করা উচিত।
স্যোশাল মিডিয়ায় লেখার সবচাইতে ভালো দিকটা হচ্ছে ইনস্ট্যান্ট পাঠক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়, যা প্রিন্ট মিডিয়ায় পাওয়া যায়না। যদিও স্যোশাল মিডিয়ার সিংহভাগ বন্ধুই আমার লেখা পড়েন না। তবু কারণে অকারণে লিখি। মন খারাপ হলেও লিখি। মন উৎফুল্ল থাকলেও লিখি। আমার লেখালেখির নির্দিষ্ট কোনো বিষয় বস্তু নাই- যখন যা মনে আসে তাই লিখি। লোকজ সংস্কৃতি, মিথ, ধর্ম বিশ্বাস, ইতিহাস, রাজনীতি, প্রাচীন সভ্যতা, বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, আত্মদর্শন, সাহিত্য, প্রবন্ধ সব কিছুই পড়ার আগ্রহ আমার; এসব থেকেই কিছু কিছু বিষয় নিয়েই নিজের মতো লিখতে চেষ্টা করি। অর্থাৎ আমি বারোয়ারি লেখক। কখনওই মনে করি না, স্যোশাল মিডিয়ায় লিখে আমি নজরুল-রবীন্দ্র নাথ হয়ে যাবো। আমার লেখা পড়ে বিশ্ববাসীর কেউ জ্ঞান অর্জন করবেন তেমন ভাবার মূর্খতা আমার নাই। আমি নিজেকে সক্রেটিস, আইনস্টাইন মনে করার ধৃষ্টতা দেখানোর মতো বেকুব নই।
আমার লেখা কতজন পড়ে কয়টা মন্তব্য করেছে, কত হিট হলো- সেগুলো গোনার মতো মানসিকতাও নাই। দুই চারজন যারা আমার লেখা পড়ে মন্তব্য করেন তাতে আমি উৎসাহিত হই। এমনকি মতামত নেতিবাচক হলেও সেখানে আমার উদ্দেশ্যহীন লেখালেখির কিছুটা সার্থকতা খুঁজে পাই। আমি ভিন্ন মতকে স্বাগত জানাই। ভিন্ন মত আমাদের মননকে সমৃদ্ধ করে সন্দেহ নাই। কিন্তু হীনমন্যতায় ভোগা, মানসিক বিকারগস্তদের আমি এড়িয়ে চলি।
লেখালেখির আর একটা কারণ, লেখালেখির মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে হৃদয়ের একটা সংযোগ তৈরি হয়। আসলে লেখা ছাড়া অন্য কোন উপায়ে না বলা কথা জানানোর উপায় থাকে না। সেই তাড়না থেকেই আমি লিখি। আমাদের চিন্তার আশ্রয় মানসিক অভিজ্ঞতা। প্রতিভা নিয়ে সবাই জন্মগ্রহণ করে না। মানসিক অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের ইচ্ছা ও উৎসাহ আর প্রক্রিয়াটির চাপ ও তীব্ৰতা সহ্য করবার শক্তি অনেকগুলো বিশ্লেষণযোগ্য বোধগম্য কারণে সৃষ্টি হয়। এটা বাড়ে অথবা কমে।
আসলে লেখার ঝোঁকও অন্য দশটা ঝোঁকের মতোই হয়। লিখতে পারাটাও আসলে নির্ভর করে লিখতে শেখার একাগ্রতার ওপর। তবে বিষয়বস্তুর তথ্য-উপাত্ত মজুদ থাকাটাও জরুরী। লিখতে হলে পড়তে হবে। পড়লেই লেখক হওয়া যায় না, এটা সত্যি। তবে লিখতে গেলে প্রচুর পড়াশুনা চাই। একজন ভালো পাঠকই হতে পারে- একজন ভালো লেখক।
আমাকে আমার অতীত প্রচন্ড রকম আকর্ষণ করে। গুরুজনদের বলা গল্প, আমাদের এই শহরের গল্প, শৈশব-কৈশোরের নানা কাহিনী, স্কুল কলেজে, হোস্টেলে ছাত্রজীবনের অনেক ঘটনাই আমার মনের অলিন্দে তোলপাড় করে। তবে পারিবারিক ইতিহাসের অনেকটাই সেই গুরুজনদের বিদায়ের সঙ্গেই বিলুপ্ত হয়েছে। সেইসব তথ্য লিপিবদ্ধ থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে অমূল্য সূত্র হতে পারতো- কিন্তু বলতে দ্বিধা নেই, তেমন লেখার যোগ্যতা আমার নাই।।
তাই যা মনে আসে লিখে যাই স্যোশাল মিডিয়ায়। মনগড়া গল্প নয়, জীবন নামে একটি মহার্ঘ প্রাপ্তি থেকে নেওয়া টুকরো টুকরো শিক্ষা বা ঘটনার গল্প। আমাদের এই প্রজন্মের অনেকেই একই কাজ করছেন। আমরা সবাই মিলে লিপিবদ্ধ করছি এই ইতিহাস। একদিন হয়ত এই ছড়ানো ছিটানো লেখাগুলিকে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে একটা সময়ের চিত্র তুলে ধরবে। তবে আমার ধারণা, স্যোশাল মিডিয়ার আবেদন এবং আয়ু খুবই সীমিত।
অথবা, বলা যায়- স্যোশাল মিডিয়ায় যা লিখি এটা আমার ডায়েরি। যে লেখাগুলো জনসমক্ষে বা ভিড় ভাটটায় লেখা পছন্দ করিনা। সেগুলো এখানে লিখে রাখি, যা কোনো মহাজ্ঞানীর মহাজ্ঞান নয়- শুধুই হাবিজাবি.....এইসব লেখালেখির জন্য যদি আমাকে ব্লগ কতৃপক্ষ ব্লক/ব্যান করে তারজন্য কোনো ওজর আপত্তি করবোনা। আমার আইডি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যও ঘ্যানরঘ্যানর করবোনা।
পরিশেষে বলবো- আমি নিখুঁত নই; আমি সব সময় ভুল করি। আমি যা করতে পারি তা হল আমার ভুল থেকে শিখতে, তার দায়িত্ব নিতে, এবং আগামীকাল একটি ভাল কাজ করতে আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।
সবার জন্য শুভ কামনা।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:৪২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




