কৃত্রিম চিনি সংকট.....
বাজারে অন্যান্য নিত্যপণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চিনির দাম। প্রতি কেজি লাল চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা ও সাদা চিনি ১১৫ টাকা দরে। কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি চিনির দাম প্রায় ৩০ টাকা বেড়েছে। গত ২৫ বছরের বাজার পর্যবেক্ষণঃ কখনও চাল, ডাল, তেল,পেঁয়াজ, চিনিসহ এক একটা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম রাস্ট্রীয় আনুকূল্যে ব্যবসায়ীরা চক্রান্ত করে বাড়িয়ে আমজনতাকে সর্ব শান্ত করছে! যার বর্তমান সংযোগ চিনির দাম।
২০২০ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের ১৫টি রাষ্ট্রীয় চিনিকলের মধ্যে ৬টিতে আখমাড়াই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ কলগুলো হলোঃ পাবনা, কুষ্টিয়া, রংপুর, পঞ্চগড়, শ্যামপুর ও সেতাবগঞ্জ চিনিকল।
দেশে চিনির পর্যাপ্ত চাহিদা আছে, আমাদের চিনিকল আছে। তা সত্ত্বেও চিনি শিল্পের এই বেহাল দশা কেন?
এই প্রশ্নের সহজ সরল জবাব- চিনি কলগুলো নিয়ে আমাদের সরকারের সদিচ্ছা ও পরিকল্পনার অভাব। সরকার ব্যবসায়ীদের বিশেষ সুবিধা দিতেই চিনিকলগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সাধারণ জনগণের কথা সরকারের ভাবনায় নেই। এই সরকার ব্যবসায়ীবান্ধব সরকার। সরকার ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ এখন এক হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরাই এখন রাজনীতিবিদ। তারা জনগণের স্বার্থের কথা আর বিবেচনা করে না। যারা সরকার, তারাই যখন ব্যবসায়ী হয়ে যায় বা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে থাকে, তখন জনস্বার্থের চেয়ে ব্যক্তি স্বার্থ বড় হয়ে যায়। দেখা যায় জনগণের করের টাকা জনগণের স্বার্থ রক্ষায় ব্যবহৃত হয় না। জনগণের সম্পদ লুটপাট বান্ধব অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে ব্যক্তিখাতে চলে যায়। সেটিই আমাদের এখানে ঘটছে। যার প্রভাব পড়েছে চিনিকলগুলোতে।
ওপেন সিক্রেটঃ চিনি আমদানি হয় মূলত এস আলম,
সিটি, মেঘনা গ্রুপের মাধ্যমে। এই তিনটি কোম্পানি বাজারে চিনির সংকট তৈরি করেছে এবং তারা সরকারের ঘনিষ্ঠ৷ এর মধ্যে এস আলম গ্রুপ সরকারের থেকে বহু সুবিধা পেয়ে থাকে। দুই বছর আগে সরকারের কাছ থেকে তারা তাদের চট্টগ্রাম পাওয়ার প্রজেক্ট এর ৩ হাজার ৭শো কোটি টাকার কর মওকুফ করিয়ে নিয়েছ...এরা এখন দেশের আটটি প্রাইভেট ব্যাংকের ৮৫ ভাগ মালিক।
* বাংলাদেশ পৃথিবীর চতুর্থ চিনি আমদানি কারক দেশ। ২০ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে মাত্র ৮০ হাজার টন চিনি দেশে উৎপাদিত হয়। দেশীয় চিনি খুবই মান সম্পন্ন কিন্তু সেই চিনি মিলে পড়ে থাকে, বিক্রি হয়না কেন? দেশের মিলগুলোকে লোকসানের অজুহাতে বন্ধ রেখে এতো বিপুল চাহিদা সম্পন্ন খাতটি ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে....
* ব্যবসায়ীদের হাত পা ধরে পুলিশ- মোবাইল কোর্ট দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারের বিকল্প বাজার চেইন থাকতে হয়।
* সরকার সব সংকটের জন্য রাশিয়ার যুদ্ধকে কারন হিসেবে দেখাচ্ছে কিন্তু এই যুদ্ধের আগে এখানে অযৌক্তিক অস্বাভাবিক মূল্য বাড়েনি? এবার প্রথম জিনিসপত্রের দাম বাড়লো?
* আমাদের দেশে ছোট বা বড় বেশিরভাগ ব্যবসায়ী অসৎ
তারা রাতারাতি ধনী হতে চায়- অবৈধভাবে ধনী হতে চায়, সে ধর্ম কর্ম করে কিন্তু ধর্মের বিধান মানে না। মানুষের প্রতি তাদের কোন দায়িত্ব অনুভব করে না। এখানে যে পুঁজিবাদী অর্থনীতি তা মূলত রাক্ষুসে পুঁজিবাদ....
সরকারের দুর্বলতায়- কয়েকজন ব্যবসায়ীকে তোয়াজ করার জন্য তারা বাজার থেকে চিনি গায়েব করার সাহস পেয়েছে...চিনিকলে তো শুধু চিনি হয় না, আরও অনেক কিছু হয়। গত চার বছর কেরু এন্ড কোং লিকার উৎপাদন করেই শতশত কোটি টাকা লাভ করেছে। জীবাণুনাশক স্যানিটাইজার পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে। চাইলে প্রতিটি চিনিকলকে লাভজনক করা যায় কাউকে ছাটাই না করে ও মিল বন্ধ না করেই।
* চলতি অর্থবছরে চাহিদার চেয়ে বেশি চিনি আমদানি হয়েছে, যুদ্ধ শুরু বা ডলারের দাম বৃদ্ধির আগে আমদানি করা চিনি কেন ১২০ টাকার বেশি দামে কিনতে হবে? মূলত, সরকার ব্যবসায়ীদের বিশেষ সুবিধা দিতেই চিনিকলগুলোকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে।
* আরটিভিতে চিনির সংকট নিয়ে আলোচনায় ভোক্তা অধিকার এর মহাপরিচালক সাইফুজ্জামান শরীফের বক্তব্যের চুম্বক অংশ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:১৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




