ফেসবুক; মুখ না মুখোশ.......
ফেসবুকের কথা ব্লগে লিখছি বলে কোনো সাধু সন্ত ব্লগার মাইন্ড খাইয়েন না।
২০০৯ সনে ফেসবুকে জুলভার্ন নামে যখন আইডি খুলি তখন অনেক কিছুই জানতাম না, এখনো খুব কমই জানি এই সামাজিক মাধ্যমটি সম্পর্কে।
যেহেতু ব্লগে লেখালেখির জন্য কিছুটা পরিচিতি ছিলো তাই প্রথমদিকে ব্লগার বন্ধুরাই ফেসবুক বন্ধু ছিলেন। তারপর সমমনা ও অন্যান্য রাজনীতি সমর্থক বন্ধুদের সাথে সাথে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি জগতের অনেক জ্ঞানী গুণীজনদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পাই। ২০১৮ সনের অক্টোবর পর্যন্ত ফ্রেন্ড সংখ্যা চার হাজারের কাছাকাছি হলেও "ফলোয়ার" সংখ্যাটা ৪৬ হাজার প্লাস হয়ে যায়। যদিও অনেকের তুলনায় এটা নগণ্য হলেও আমার মতো অতি ক্ষুদ্র ও নগণ্য মানুষের জন্য অনেক বড়ো অর্জন ছিলো। তাই বন্ধুত্বের হাত যাঁরাই বাড়িয়েছেন, বা আমার ডাকে সাড়া দিয়েছেন; কৃতজ্ঞ চিত্তে আমি তাঁদের স্মরণ করি। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে Humayun Kabir নামে সর্বশেষ আইডি করে টুকটাক লেখালেখি করছি। দুই বছরের কম বয়সী এই আইডি ইতোমধ্যে ৭/৮ বার বিভিন্ন সময় রেস্ট্রিশনের কবলে পেরেছে। বর্তমানে আমার ফেসবুক বন্ধু ২০০০+।
ফেসবুক আমাকে দিয়েছে অনেক কিছুঃ-
* দেশ বিদেশের বহু পুরাতন বন্ধু, যাঁদের সাথে বহুদিন যোগাযোগ ছিলোনা, নতুন করে তাদের অনেকের সাথে যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে।
* বহু বন্ধু আত্মীয়, যাঁদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ দূরের কথা- নিয়মিত ফোনেও যোগাযোগ করে ওঠা হয় না, তাদের সাথে ফেসবুকে নিয়মিত ভাবের ও ভাবনার আদানপ্রদান ঘটে।
* নতুন অনেককে বন্ধু হিসেবে পেয়েছি, তাঁদের অনেকের সাথেই গভীর সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে।
* অনেক গুণী ও অভিজ্ঞ মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখার সুযোগ হয়েছে; যা কিছুটা আলোকপ্রাপ্তি ও জীবনের প্রতি উৎসাহ বেড়েছে।
অন্যদিকে, ফেসবুক করে হারিয়েছিও অনেক কিছু.... খারাপটুকু অপ্রকাশিতই থাক....
কিন্তু বিগত বেশ কয়েকটি ঘটনা মনটাকে অশান্ত করেছে। কখনো মনে হয়েছে, বেশিরভাগ মানুষই সামাজিক নয় বলেই এই বিভ্রান্তিকর সামাজিক মাধ্যমের রমরমা। এদের মুখের আড়ালে মুখোশ....কিম্বা মুখোশের আড়ালে মুখ!
তাই ফেসবুক বন্ধুদের আমি আমার মতো করে কয়েকটি "ক্যাটাগরি"তে ভাগ করেছি (কেউ ব্যক্তিগতভাবে নেবেন না, প্লিজ)।
(১) অতিবন্ধু: আপনি হয়তো একটি দীর্ঘ অনুচ্ছেদ লিখে পোস্ট করলেন, লেখাটা পড়তে নূনতম তিন-চার মিনিট হয়তো লাগার কথা। তিন-চার সেকেন্ডেই এঁরা আপনাকে লাইক দেবেন।
(২) গুপ্ত বন্ধু: এঁরা ফেসবুকে কিছু পোস্ট করবেন না। কিন্তু বন্ধু সংখ্যা বাড়িয়ে যাবেন। আর আপনি কি করছেন, কি ভাবছেন, সবকিছুই নজরদারি করতে থাকবেন। এঁদের উপস্থিতি অনেকটা ভৌতিক গা-ছমছমে ব্যাপার।
(৩) সুপ্ত বন্ধু: এঁরা আপনাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাবেন; বন্ধু হবেন। কিন্তু আপনার কোনো পোস্ট দেখার সময় পাবেন না। এরা বোঝা হলেও, ক্ষতিকারক নয়, ভালো কারকও নয়।
(৪) রুষ্ট বন্ধু: আপনি যাই পোস্ট করুন, এনাদের কাছে চক্ষুশূল হবেন। আপনার প্রতিটি বক্তব্যকে এনারা বাঁকাচোরা কথায় "ইয়ার্কি" করবেন! আপনার লেখায় কোনো ভুলত্রুটি থাকলে এনারা তা শুধরে নিতে সাহায্যও করবেনা।
(৫) ভালো বন্ধু: এনারা আপনার সমালোচনা ও প্রশংসা দুই করবেন।
(৬) বিজ্ঞাপনি বন্ধু: আপনার লেখা পড়ে মন্তব্য করতে না পারার জন্য তাদের হাহাকারে আকাশ বাতাস বিদীর্ণ। আপনাকে মেসেঞ্জারে খোঁচাবে। এঁরা বন্ধু হয়েই এক মিনিটে ঝটপট ২০/২৫ টা পোস্টে লাইক দেবে, কদাচিৎ কমেন্টও করবে। তারপর আপনাকে তার পেইজে লাইক করতে ইনভাইট করবে। বিজ্ঞাপন খারাপ নয়, সহ্যের সীমা অতিক্রম না করলেই হলো।
(৭) চোর বন্ধু: 'হাইপো' বন্ধুও বলতে পারেন। এরা ব্লগেও সক্রিয়। এরা অন্যের তোলা ছবি, লেখা এবং সাহিত্যানুরাগীদের প্রবন্ধ, বিশ্লেষণ কপি করবে। কিছু শব্দ, বাক্য পাল্টে বা হুবহু একই রেখে অন্য কোথাও ব্যবহার করবে।
এ তালিকা অনেক বাড়ানো যায়। তবে এই পর্যন্ত পড়েই মনে হয় আমার অর্ধেক "বন্ধু" আমার প্রতি বিরাগভাজন হয়েছেন।
এই লেখা আমার কোনো অহংকার প্রকাশের জন্য নয়। কাউকে আঘাত দেওয়ারও জন্য নয়। বরং নিজ মনের বাইরে একটা প্রাচীর দেওয়ার জন্য।
যেসব বন্ধুদের ফেসবুক আইডি আছে তাদের উদ্দেশ্য করে বলছি- আপনি যদি লাইক কমেন্টস এটেনশন শিকার না হন তাহলে অধিক বন্ধু রাখার দরকার নেই। অনেককে বন্ধুত্বের দায় থেকে রেহাই দেবেন। হয়তো আগাছার সাথে কিছু ভেষজসম্পদও বাদ পরে যাবে- তবুও স্বস্তিতে থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




