'Oud' 'Scent from Heaven' সুগন্ধি আগর আতর........
প্রিয়জনকে মোহিত করতে সুগন্ধির ভূমিকা অপরিসীম...
পৃথিবীর অন্যতম প্রাকৃতিক দামী সুগন্ধি হলো 'Oud Attar' বা উদ আতর..
এক কেজির উদের দাম প্রায় এক কেজি স্বর্ণের দামের সমান! ধনবান আরব'রা Oud ব্যবহার করেন। আরবীয়দের খুব কড়া সুগন্ধি ব্যবহারের অভ্যস্ত! কিছুদিন আগে 'Oud' নিয়ে 'Scent from Heaven' শিরোনামে আল-জাজিরা একটি ডকুমেন্টারি প্রচার করেছিল। Oud কোথা থেকে আসে, কি প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয়, কারা ব্যবহার করেন, কিভাবে ব্যবহার করেন এসবের উপর ভিত্তি করে এই ডকুমেন্টারি।
মূলত, আগর গাছের কাঠ থেকে এ মহা-মূল্যবান আতর তৈরি হয়...

এবার জেনে নেয়া যায়- আগর সুগন্ধির তৈরী প্রণালীঃ-
চিরসবুজ এক বৃক্ষ আগর গাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘Aquilaria agalloa’।এই গাছের নির্যাস থেকেই তৈরী হয় আতর বা সুগন্ধি। কালচক্রে বনভূমি উজাড় হয়ে যাওয়ায় আগরগাছও বিলীন হতে থাকে এবং আগর আতরের উৎপাদন ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৪৭ সালে আগর চাষের প্রায় বিলুপ্তি ঘটে। পরবর্তী সময়ে ১৯৭১ সালের পর থেকে আগর থেকে আতর তৈরি পুনরায় শুরু হয়। বৃহত্তর সিলেটের সংরক্ষিত বন ও পাহাড়ি অঞ্চলে প্রায় ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আগর চাষ করা হয়েছে। ১৯৯৮ সালে সিলেট বন বিভাগ মূল্যবান বৃক্ষ প্রজাতি আগরকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা, নতুন বাগান সৃজন করে পরীক্ষামূলক আগর উৎপাদনের মধ্যে এ শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এই প্রকল্পের অধীনে বৃহত্তর সিলেটে আগর চাষের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে গত কয়েক বছর যাবৎ ব্যক্তিগত সহ বন বিভাগের উদ্যোগে সৃজন করা হচ্ছে আগর গাছের ছোট-বড় অনেক বাগান। আগর বাগান সৃজনের পাশাপাশি আগর-আতর প্রক্রিয়াজাতকরণের উদ্দেশ্যে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার অন্তর্গত মারিশ্যাতে ব্যক্তি উদ্যোগে স্থাপন করা হয়েছে আতর প্রক্রিয়াজাতকরণের দুইটি কারখানা। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা সুজানগর আগর-আতরের জন্য বিখ্যাত। এর আশেপাশের অঞ্চলে আগর চাষ করা হয়। এ গাছের উচ্চতা ৬০ থেকে ৭০ ফুট পর্যন্ত হয়। একটি পূর্ণাঙ্গ আগর গাছ হতে অন্তত ২০/ ২২ বছর পর্যন্ত সময় লাগে। পরিপূর্ণ একটি আগর গাছ দুই লাখ থেকে পঁচিশ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়। আগর গাছের কাঠ থেকে মহা-মূল্যবান আগর ও আতর তৈরি হয়। সিলেটের সুনামগঞ্জের ছাতকে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে সরকারিভাবে আতর উত্পাদিত হচ্ছে। এমনকি ব্যক্তিগতভাবেও অনেকেই আগর চাষ করছে।
বর্তমানে কিছু ব্যবসায়ী সহজ ভাবে আগর গাছের ভেতরে কৃতিম উপায়ে কারো করে আতর তৈরী করছে- যদিও সেই আতর প্রাকৃতিক ভাবে বড়ো হওয়া গাছের আতরের মতো মানসম্পন্ন হয়না। জেনে নেওয়া যাক- কৃতিম উপায়ে কিভাবে আগর গাছকে পরিপক্ক করা হয়ঃ- কমপক্ষে পাঁচ বছর বয়সী গাছের পুরু কাণ্ডের নিচ থেকে উপর পর্যন্ত লাইন ধরে খুব ঘন ঘন করে মাঝারী আকারের পেরেক পুতে দেয়া হয়। কখন গাছে পেরেক পুততে হবে সেটি নির্ভর করে গাছের পুরুত্ব ও আকারের উপর, বয়সের উপরে নয়। ঠিকমতো না বাড়লে অনেক সময়ে দশ বছরের পুরনো গাছেও পেরেক পোতা সম্ভব হয় না। পেরেক পোতার পরে কমপক্ষে পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হয়। এ সময়ের মধ্যে কাণ্ডের পেরেকের গা সংলগ্ন অংশসহ ভেতরের অংশ কালো বর্ণ ধারণ করে বা আগর তৈরি হয়।
বাগান থেকে পূর্ণ বয়স্ক আগর গাছ কেটে এনে প্রথমে তা টুকরো করে কেটে আলাদা করা হয়। এ টুকরোগুলোর কয়েকভাগে ভাগ করা হয়। এক ভাগ ঘন কালো, হালকা কালো, তামাটে, অল্প তামাটে বর্ণের কাঠের টুকরা। অন্য ভাগে ধূসর, প্রায় সাদা বর্ণের কাঠের টুকরা থাকে। হালকা কালো, তামাটে ও অল্প তামাটে রঙের আগর কাঠের লগগুলোকে লম্বালম্বিভাবে কাটা হয়। এগুলোকে ফালি বলা হয়। অত্যন্ত যত্ন ও সুনিপুণভাবে ফালি করা হয় যেন কালো অংশ বা আগরগুলো আস্ত থাকে। গাছের ভেতরের কালো অংশটাই সব থেকে উন্নত মানের আগর আতর এর আরক।

চেরা ফালিগুলো কুচি করে কাটা টুকরোগুলো পানির ট্যাঙ্ক, ড্রাম, বড় হাঁড়িতে ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত ভেজানো থাকে। এরপর কাঠগুলো তুলে পানি ঝরিয়ে ঢেকিতে গুঁড়া করা হয়। কাঠের গুড়োকে স্থানীয় ভাবে ছুরন বলা হয়।
এবার সুগন্ধি তৈরির পালাঃ

পরবর্তীতে, ঢেকিতে গুড়ো করা ছুরন কমপক্ষে আট থেকে দশ দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। ছুরনগুলো খুব ভালোভাবে পচে কাঁথ তৈরী হয়। সেগুলো তুলে একটি পানি ভর্তি স্টিলের তৈরি বিশেষ পাত্রের মধ্যে রেখে আগুনে তাপ দিতে হয়। পাত্রের চারিদিক খুব ভালোভাবে বন্ধ করা থাকে, অনেকটা এয়ার টাইটের মতো। এভাবে অনবরত ১০ থেকে ১২ দিন তাপ প্রয়োগ করতে হয়। পাত্রের উপরের দিকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় একটা নল সংযুক্ত করা হয়। নলটির অপরপ্রান্ত আরেকটি পাত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করা থাকে। আগুনের তাপে ছুরন সিদ্ধ হয়ে বাষ্পাকারে ওপরের নলে প্রবেশ করে। সেই বাষ্পগুলোই ঘনীভূত হয়ে অপর প্রান্তের পাত্রের মধ্যে ফোঁটায় ফোঁটায় পড়তে থাকে এবং সেই গড়িয়ে পরা নির্যাসই হলো আগর তেল।

আতর বের করার পর উচ্ছিষ্টগুলো দিয়ে আগর বাতি তৈরী করা হয়। তাছাড়া উচ্ছিষ্ট অংশগুলোও মধ্যপ্রাচ্যে রফতানি করা হয়।
তথ্যসূত্রঃ 'Oud' 'Scent from Heaven' আল-জাজিরা একটি ডকুমেন্টারি। ছবি এবং তথ্য আগর উইকিপিডিয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:১৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



