মাতৃত্ব.....
তিনমাস আগে বেজমেন্ট গ্যারাজে ৫/৬ দিন বয়সী একটা পরিত্যক্ত বিড়াল ছানা পেয়ে বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড, কেয়ার টেকার সহ আমরা সবাই বিড়াল ছানার মাকে খুঁজে পাইনি। শেষ চেষ্টা হিসেবে ২৪ ঘন্টার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আবিস্কার করি- বেজমেন্টে পাওয়ার সাব স্টেশন সংলগ্ন স্তুপ করে রাখা কয়েকটি বাতিল টায়ার টিউব ভেতর থেকে মা বিড়াল চারটি ছানা সহ বেড়িয়ে যাচ্ছে....তিনটি ছানা নিয়ে গেলেও অজ্ঞাত কারণে একটি ছানা গ্যারাজে রয়ে যায়। অগত্যা আমাদের নাতনির আগ্রহে পরিত্যক্ত রুগ্ন বিড়াল ছানাটি বাসায় নিয়ে আসি.....

খুব দূর্বল বিড়াল ছানাটিকে প্রায় ১৫ দিন দুধ, তারপর নরম করে দুধভাত খাওয়ানোর পর এক মাসেই বেশ তরতাজা আর ঝরঝরে প্রানবন্ত হয়ে গিয়েছে। আমাদের নাতনী বিড়াল ছানাটির নাম দেয় "বিল্লু সোনা"। ছানাটি খাওয়ার পর খুব দুষ্টুমিতে মেতে থাকে আর ঘুমায়। ইতোমধ্যে পেরিয়ে গিয়েছে তিন মাসের বেশী।
যখন বিড়াল ছানাটির বয়স এক মাসের কাছাকাছি- একদিন একটা মজার ঘটনা ঘটে.... আমি অফিস থেকে ফিরে চেঞ্জ করে খালি গায়ে বসে আছি...নিত্যকার স্বভাবমতো বিড়াল ছানাটি লাফিয়ে আমার কোলে ওঠে...আমি যখন ওকে আদর করছিলাম তখন বুকে দুধ খাবার চেষ্টা করছিলো....বুঝতে পারি- ছানাটি এখনো প্রাকৃতিক নিয়মে ওর মায়ের দুধের জন্য আকুলতা....
বিড়াল এবং আমাদের বাসার সকলের সতর্কতার জন্য বড়ো ছেলে বিড়াল ছানাটি ভেটেরিনারি হাসপাতালে নিয়ে ভ্যাক্সিন দিয়ে এনেছে। ওর থাকার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা এবং পিটি করার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। সপ্তাহে একদিন শ্যাম্পু দিয়ে শাওয়ার করিয়ে দেই, নখ কেটে দেই, নিয়ম করে গা ব্রাশ করে দেই...ইতোমধ্যে আমরা বিড়াল ছানার মা আর ওর ভাই বোনদের আবিস্কার করি- পাশের বিল্ডিংয়ে.... যেহেতু ছানাটি এখন পোষমেনে আমাদের সবার আদর সোহাগের পোষা প্রাণী হয়েছে তাই ওকে মুক্ত করে দিতে পারিনি।
সম্ভাব্য মা বিড়ালটি(সম্ভাব্য বলার কারণ, একই রকম দুটি বিড়াল দেখা যায়) প্রায়ই আমাদের বিল্ডিংয়ে এসে গ্রাউন্ড ফ্লোরে কেয়ার টেকার, গার্ড-রুমে এসে খাবার খেয়ে চলে যায়....অন্যদিকে আমাদের পোষা বিড়াল ছানাটি ফ্ল্যাটের বাইরে ফায়ার এস্কেপ, লিফটের সামনে খোলা বারান্দায় এবং কখনো কখনো আমাদের নিচের তলা/উপর তলায় দৌড়ে যেয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফিরে আসে- এটা ওর রুটিন স্পোর্টস। আমাদের বিল্ডিংয়ে আরও দুই ফ্ল্যাটে বিড়াল পোষে এবং সেগুলো বয়স ও সাইজে বেশ বড়ো, তবে সেই বিড়াল দেখলেই আমাদের বিড়াল ছানাটি ভয়ে দৌড়ে চলে আসে। গ্রাউন্ড ফ্লোরে কেয়ার টেকার, সিকিউরিটি গার্ড দুটো বিড়াল পোষে। আমাদের বিড়াল ছানাটিকে সেই বিড়ালের সাহচর্য দিতে কয়েক দিন সেই বিড়ালদের কাছে নিয়ে গিয়েছি- বড়ো বিড়ালগুলো আমাদের বিড়ালের দিকে তেড়ে আসে... আর আমাদের বিড়াল ছানাটি ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আমার কোলে উঠে মিউমিউ করে অভিযোগ করে!
আমরা বাসার যে কাউকে দেখলেই বিড়াল ছানাটি দৌড়ে পায়ের সাথে গা ঘষতে থাকে....আমরা কোলে তুলে নিলেই মায়াবী চোখে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। গায়ে হাত বুলিয়ে দিতেই চোখ বন্ধ করে গায়ের সাথে মিশে থাকে....। যেখানেই থাকুক 'বিল্লু সোনা' বলে ডাক দিলেই দৌড়ে ছুটে আসে....

নিত্য দিনের মতো গত দুই দিন আগে আমাকে দরজা খুলতে দেখেই যথারীতি বিড়াল ছানাটি দৌড়ে আমার পায়ের কাছে চলে আসে....দরজা খুলে দেখি সম্ভাব্য মা বিড়ালটি সিড়ির সামনে শুয়ে আছে....মা বিড়ালটি মাত্র একবার মিউ করে ডাক দিতেই বিড়াল ছানাটিও মিউ মিউ করে দৌড়ে মা বিড়ালের কাছে চলে যায়। সাথে সাথে মা বিড়ালটি ছানা বিড়ালের গা চাটতে থাকে আর ছানাটি একেবারে চার পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ে! ছানা বিড়ালটি ওর মায়ের গায়ের গন্ধ শুকতে শুকতে মৃদুস্বরে মিউমিউ করছিলো.... আমি মুগ্ধ হয়ে মা-মেয়ের মিলন দৃশ্য দেখছি....... "বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে"!
হঠাৎই মা বিড়ালটি হেটে সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে থাকে, সাথে আমাদের আদরের পোষা বিড়াল ছানাটিও অনেকটা নাচার ভংগিমায় লেজটা খাড়া করে পিছু পিছু চলে যাচ্ছে.....আমি যতই 'বিল্লু সোনা আয় আয়' বলে ডাকি- সে ফিরেও তাকালো না.....
তিন দিন পেরিয়ে গেছে.... আমাদের বিল্লু সোনা ফিরে আসেনি!
বিল্লু সোনা, তোমাকে আমরা খুব মিচ করি....
যেখানেই থাকো, ভালো থেকো- আদরের বিল্লু সোনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



