somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার আর্থিক পার্থক্য বিশাল অংকের....! মন্ত্রীর পছন্দ সেকেন্ড লোয়েস্ট কোম্পানি। আমার কোম্পানিকে বাদ দেওয়ার জন্য নানাবিধ ত্রুটি-বিচ্যুতি/ অনভিজ্ঞতা ইত্যাদি খুঁত বের করেও সুবিধা করতে পারছেনা। অফার ভ্যালিডিটি শেষ হয়ে যাচ্ছে অথচ আমার কোম্পানিকে NOA ইস্যু করছেনা। আমার প্রিন্সিপাল কোম্পানি বারবার জানতে চাচ্ছে- কেন এমন হচ্ছে? একপর্যায়ে আমার প্রিন্সিপাল কোম্পানি আমার দক্ষতা / যোগ্যতা নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করতে শুরু করে।

ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী (*) যিনি আমার জানামতে ছাত্রলীগের ইতিহাসে সর্বকালের সজ্জন সৎ হিসাবে পরিচিত, তিনি আমার জুনিয়র হলেও আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং শুভার্থী। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের সময় থেকেই আমাদের সুসম্পর্ক। অফিস সময়ের পর প্রায়ই মঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী ছাড়াও অন্যান্য ছাত্রলীগের নেতা আমার ইস্কাটন অফিসে আসতেন। চলতো জম্পেশ আড্ডা। মঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী যখন দেখলেন- আমার প্রতি অবিচার হচ্ছে তিনি খাদ্যমন্ত্রী আমির হোসেন আমু সাহেবের সাথে কথা বলে পূর্ব নির্ধারিত সময় রাত নয়টা নাগাদ আমাকে নিয়ে তার ইস্কাটনের বাড়িতে গেলেন....

এই প্রথম আমু সাহেবকে এভাবে ঘরোয়া পরিবেশে দেখছি। বিশাল ড্রইং রুমে বিশাল সাইজের পেট নিয়ে আমু সাহেব বসে আছেন। নাভির ৪/৫ ইঞ্চি নিচে-উরুস্বন্ধিস্থল ছুঁই ছুঁই সাদা লুংগী পরিহিত, লুংগীর গিট্টু খোলা, মিশ্র আবলুস রঙের উদোম শরীর, ঘর ভর্তি লোক। ১৮/২০ বছর বয়সী এক যুবক তার মাথা-পিঠ দুমড়ে মুচড়ে মেসাজ করছে...আমু সাহেব সুখে চক্ষু মুদিত করে নাকের লোম ছিড়ে একনজর পরখ করে দেখে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছেন। আবার আধা খোলা লুংগীর ভেতর হাত ঢুকিয়ে কখনো সামনের দিকে, কখনও পেছনের দিকে চুলকে গন্ধ শুকছেন....

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন অনেক উপঢৌকন নিয়ে আসছে এবং সালাম দিয়ে কদমবুসি করে দোয়া নিচ্ছে....মঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী তাকে সালাম দিয়ে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমি তার নোংরা হাতে হ্যান্ডশেক করার ঝুঁকি এড়িয়ে আচ্ছালামুয়ালাইকুম বলে দূরত্ব বজায় রেখেছি। মঈনুদ্দিন হাসান ভাই বললেন- লিডার, আপনার সাথে একটু আলাদা ভাবে কথা বলতে চাই.....

লিডার সাহেব লুংগীটা কোনো রকম পেঁচিয়ে ধরে পাসের রুমে ডেকে নিয়ে গেলেন। তিনি বসে বগল চুলকিয়ে গন্ধ পরখ করতে লাগলেন..... আমি আমার সমস্যার কথা বললাম...... তিনি চোখ দুটো আধাআধি মুদিত করে- বললেন, "এত কোম রেট দিছো ক্যান, জানো না- অফিসে কতো খরচাপাতি আছে? যেই রেট দিছো হেই রেটে কাম কর্তে পার্বানা। রি-টেন্ডার কইর‍্যা দিমুয়ানে, পরের বার বুইজ্জা-হুইন্ন্যা রেট দিবা। মঈনুদ্দিন, অরে লইয়া ভাত খাইয়া যাও"- বলেই তিনি আবারও মজলিসে আসন গ্রহণ করলেন।

স্বাধীনতার পর আমু সাহেবকে নিয়ে বিটলা পোলাপান ছড়া কাটতোঃ

(ক) "ছাত্রলীগ খাইছি, যুবলীগ খাইছি-
এবার আওয়ামী লীগ খামু, আমার নাম আমির হোসেন আমু"!

(খ) "লবণ চোরা আমু, বেজ্ঞুনেরে খামু,
কম্বল কাটা মুজিব কোট, আর দেবোনা নৌকায় ভোট"!

(গ) "শুনলে মোদের হাসি পায়, লবণ চোরা ভোট চায়"!

(*) বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী তাঁর সততা আর সাদামাটা জীবনযাপনের জন্য রাজনৈতিক মহলে সুপরিচিত। তবে প্রচারবিমুখ হওয়ায় সব সময়ই আলোচনার বাইরে। লোভ-লালসার রাজনীতির মধ্যেও নিজ আদর্শে অটল এই নেতা নীরবে-নিভৃতে দুই যুগ ধরে বসবাস করছেন রাজধানী ঢাকার মালিবাগে দুই রুমের এক ভাড়া বাসায়। রাজনীতির মাঠে চলাচল নিয়মিত হলেও ছিলেন না কোনো সাংগঠিনক দায়িত্বে। তার সমসাময়িক সবাই বিত্ত-বৈভবের মালিক হলেও মঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরীর বিরুদ্ধে লাগেনি কোনো দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি বা ক্যাসিনোবাজির তকমা। দল পরপর তিনবার ক্ষমতায় থাকলেও নিজেকে সব লোভ-লালসার উর্ধ্বে রেখে ব্যক্তি ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন তিনি। তার সততা ও সাদামাটা জীবন আমাদের সম্পর্ক গভীর এবং অটুট করেছে।

(লিডারের তসবির নিয়েছি গুগল থেকে)

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৭
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এনসিপির ভোট কিভাবে বাড়ানো যায়?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৫ ই নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৩



একটি নিরপেক্ষ সংস্থার জরিপ অনুযায়ী এখন বিএনপির ভোট ১৯% (প্রায়), জামায়াতের ভোট ১৬% (প্রায়), আওয়ামী লীগের ভোট ৯% (প্রায়), এনসিপির ভোট ৩% (প্রায়) সিদ্ধান্তহীন ভোট ৩০% (প্রায়), ভোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা কেমন আছেন?

লিখেছেন জেনারেশন একাত্তর, ১৫ ই নভেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৪



আমি আশা করছি, তিনি ভালো আছেন! কেহ কি জানেন উনি শারীরিকভাবে কেমন আছেন বর্তমানে? সর্বশেষ জেনেছিলাম (বছর খানেক আগে ) যে, উনি ভালো আছেন, চিকিৎসা চলছিলো। এরপর আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কমলাপুর টু নারায়ণগঞ্জ - ১ : কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৫ ই নভেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৯



সময়টা ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসের ৬ তারিখ।
উত্তর বাড্ডা থেকে রওনা হয়ে সকাল ১১টার দিকে পৌছাই কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। উদ্দেশ্য রেললাইন ধরে হেঁটে হেঁটে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত যাবো

হাঁটা শুরু হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি ব্লগ ........

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৬ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৪

২০১২-১৩ থেকে কয়েক বছর পছন্দ এদেশে ছিল ডিএসএলআর যুগ। মানে একটি ভালো মানের ক্যামেরা থাকা মানে ছিল সোস্যাইটি বা বন্ধ মহলে ছিল সম্মান, মর্যাদা, আর অহংকারের প্রতিক। সোস্যাল মিডিয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আঁধারের মাঝেও আলো থাকে

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ১৬ ই নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৮


আমাদের মানব জীবনে আলো আঁধারের দ্বন্দ্ব চিরন্তন
ইতিহাস বারবার করেছে প্রমান অন্ধকার যত গভীরই হোক
তার ভিতরেই পরবর্তী আলোর বীজ লুকিয়ে করে অঙ্কুরণ।

আঁধারেও আলো থাকে শুধু একটি কবিত্বময় বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×