
'নার্গীস মুহাম্মদী'- বয়স ৫৩ বছর। নিবাস ইরান। পেশায় চিকিৎসক এবং খ্যাতিমান মানবাধিকারকর্মী। নার্গিস মোহাম্মদীত প্রতি ইরান সরকারের আচরণ দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনার মুখে। বিভিন্ন সময়ে নার্গিসকে ১৩ বার গ্রেপ্তার, পাঁচবার দোষী সাব্যস্ত করে প্রথমে ৩১ বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও তাকে ১৫৪ বার বেত্রাঘাতের দণ্ড দেওয়া হয়। তারপর একই অপরাধ একাধিক বার করায় তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ছিলেন।
বর্তমানে তেহরানের কুখ্যাত ইবন কারাগারে বন্দী। সেখানে খুনী আসামিদের মত ভয়াবহ অপরাধীদের সঙ্গে তাঁর বসবাস এক ছোট্ট কুঠরীতে। বিভিন্ন অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে নার্গিস মোহাম্মদি এরই মধ্যে ১২ বছর কারাভোগ করেছেন, এর মধ্যে শেষ ছয় বছর একটানা জেলবন্দী। দম বন্ধ করা পরিবেশ। বর্তমান ইরানের প্রেসিডেন্ট দয়াপরবশ হয়ে মৃত্যুদণ্ড ক্ষমা করে এক বছর সাজা কমিয়ে ৩৫ বছর জেল দণ্ড এবং তারপরও বেঁচে থাকলে ১৫৬ ঘা প্রকাশ্যে চাবুক থেকে মাফ নাই।
অপরাধ?
ইরানি আইনে ভয়াবহ!
প্রকাশ্যে তিনি হিজাব বা বোরখা না পরে বেরিয়েছিলেন। সেই অপরাধে চাবুক মারার শাস্তি। তার পর আরো ভয়াবহ অপরাধ, "নারীদের হিজাব বোরখা বাধ্যতামূলক পরার আইন রদ করার দাবি জানিয়ে ছিলেন। নারীর শিক্ষার অধিকার, পুরুষের সমান অধিকার দাবী করার দাবী ছাড়াও নিজের গর্ভের অধিকার- অর্থাৎ নারী নিজে না চাইলে গর্ভবতী হবেন না, তিনি জন্ম নিয়ন্ত্রনের পদ্ধতি ব্যবহার করবেন স্বেচ্ছায়। নারীরও অধিকার থাকবে তালাক দেবার। নারী চিকিৎসক না পেলে পুরুষ চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করার অধিকার"- ইত্যাদি।
উনি কিন্তু সালমন রুশদি বা তসলিমা নাসরিনের মতন
ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধ ঘোষনা করেননি। বরং উনি রীতিমতন ইসলাম ধর্ম পড়াশুনা করেই প্রমাণ করেছিলেন, রাষ্ট্রের কাছে নাগরিকদের কোনো দাবীই ইসলাম বিরোধী নয়। উনি নিজেও সাধারনত হিজাব পরেন বেশীরভাগ সময়, ধর্মও পালন করেন নিয়ম অনুযায়ী। কিন্তু কোনো রকম জোর জবরদস্তির বিরোধী। সবার আগে নারীর শিক্ষা, চাকরী এসবের অধিকার দাবী করেছিলদন- এই ভয়ানক অপরাধে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
এই মহান অপরাধীকে ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক নোবেল কমিটি নোবেল শান্তি পুরস্কার দিয়েছে।
সেই নার্গিস মোহাম্মদী সাময়িক মুক্তি পেলেন।
নার্গিস মোহাম্মদী মারাত্নক অসুস্থ। তার শরীর থেকে তিন সপ্তাহ আগে একটি টিউমার অপসারণ এবং হাড়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। এসব কারণে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়।
চিকিৎসার প্রয়োজনে কারাগার থেকে তিন সপ্তাহের জন্য সাময়িক মুক্তি পেয়েছেন। তার আইনজীবী মোস্তাফা নিলি জানান, তেহরানের ফরেনসিক চিকিৎসকের সুপারিশের ভিত্তিতে আদালত তার তিন সপ্তাহের কারাদণ্ড স্থগিত করেছেন।
আইনজীবী মোস্তাফা নিলি জানিয়েছেন, ‘টিউমারটি ক্ষতিকারক ছিল না, কিন্তু তার শারীরিক অবস্থার উন্নতিতে নিয়মিত চিকিৎসা প্রয়োজন। তিন মাস পর পর তাকে মেডিকেল পরীক্ষার আওতায় রাখা হবে। সাময়িক মুক্তি পেলেও নার্গিসের ভবিষ্যৎ এবং চিকিৎসার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিয়ে এখনো উদ্বেগ রয়ে গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:০৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



