somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

হুজুগে-গুজবে বাংগালী....

২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হুজুগে-গুজবে বাংগালী....

"হুজুগে-গুজবে বাংগালী"- বলে আমাদের একটা দুর্নাম প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে। গুজব আর হুজুগ যমজ ভাই।
গুজব বা হুজুগের সবকিছু মানুষ কিনতে পারে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্যোতনা দেয় অন্ধ বিশ্বাস। হুজুগ আর বাঙালির পথচলা সমান্তরাল হলেও গুজব-হুজুগের পেছনে কম-বেশি অনেক দেশের মানুষকেই দৌঁড়াতে দেখা যায়। তবে রাজনৈতিক গুজব এবং হুজুগে আমরাই সর্বশ্রেষ্ঠ। সুশিক্ষার অভাব, ব্যাক্তি ও সামাজিক, রাজনৈতিক অসচেতনতা, নাগরিকদের মৌলিক অধিকার বঞ্চনা, রাজনৈতিক নেতাদের কূটকৌশল তেমনতর বহুবিধ কারণে এমনটা হয়েছে।

বাংলাদেশের মানুষ রাজনীতির মাধ্যমে সুশাসনের প্রত্যাশা করে এসেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অধিকাংশ সময়েই রাজনীতি সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। গত ৫৪ বছরে কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে, দেশের রাজনীতি সাধারণ মানুষের সুখ-শান্তির নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। বিশেষ করে গত ১৭ বছরে যে টক্সিক বা বিষাক্ত রাজনীতির চর্চা হয়েছে, তাতে জনগণের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে এক ধরনের বিতৃষ্ণা জন্মেছে। ফলে তারা ধীরে ধীরে রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়েছে।

এটা জনগণের দোষ নয়। বরং ইতিহাস বলে, যতবারই দেশে অরাজনৈতিক সরকার এসেছে, জনগণ রাজনৈতিক সরকারের চেয়ে তাদের ওপর বেশি আস্থা রেখেছে। এজন্যই এসব সরকার শুরুতে জনগণের কাছ থেকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এমনকি বিতর্কিত এক-এগারোর সরকারও শুরুর দিকে প্রশংসা পেয়েছিল। বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ ও বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলো তো এখনো সবচেয়ে জনপ্রিয় অরাজনৈতিক সরকারের উদাহরণ হিসেবে গণ্য হয়।

তবে এটাও সত্য, এসব সরকার কখনোই স্থায়ী হয়নি, হতে পারেনি। কারণ, যতই রাজনীতি বিকৃত বা বিষাক্ত হোক, পৃথিবীর কোনো দেশই রাজনীতিহীনভাবে চলতে পারে না। রাজনীতি হলো রাষ্ট্র পরিচালনার মস্তিষ্ক- যেখানে সমস্যা হলে মাথা কেটে ফেলা নয়, বরং সঠিক চিকিৎসা করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। বর্তমানে সেই চিকিৎসার কাজটিই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার করবে তেমনটাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিলো।

বাংলাদেশে এখন রাজনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সরকার বিভিন্ন খাতে সংস্কারের জন্য অরাজনৈতিক সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। পাশাপাশি প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোও নিজেদের সংস্কার প্রস্তাব দিচ্ছে। এসব প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে এবং একটি ঐক্যমত ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ‘ঐক্যমত কমিশন’ গঠিত হয়েছে। এই প্রক্রিয়া একটি দেশের রাজনীতিতে স্বাস্থ্যকর ও ইতিবাচক অনুশীলন বলেই বিবেচিত হয়। তবে ঐক্যমত্য বাধ্যতামূলক করাও ফ্যাসিস্ট প্রক্রিয়া বললে ভুল বলা যাবেনা।

তবে সমস্যা হলো- এই ‘ট্রানজিশন পিরিয়ড’ বা পরিবর্তনের সময়কে কাজে লাগিয়ে একটি মহল ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। একপক্ষ সংস্কারকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, অন্যপক্ষ সেই ছুতায় ক্ষমতা কুক্ষিগত এবং দীর্ঘায়িত করতে চায়।

"জনগণ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দীর্ঘমেয়াদে দেখতে চায়"- এটা মূলত অতীতের তিক্ত রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকেই আসে। তবে এটা বুঝতে হবে- একটি দেশ দীর্ঘ সময় রাজনীতিহীন থাকতে পারে না। বরং এখন প্রয়োজন, জনগণকে বোঝানো- আসন্ন রাজনীতি আর আগের মতো হবে না। যদি এই আশ্বাস ও গ্যারান্টি জনগণকে দেওয়া যায়, তবে তারা রাজনীতির প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনবে। এটা করতে হবে সমাজের সকল মহলকে একযোগে।

রাজনীতি এক বিশাল মহাসমুদ্র। এই সমুদ্রে টিকতে হলে রাজনীতি নামক জাহাজ প্রয়োজন। ছোটখাটো ডিঙি নৌকা দিয়ে এই সমুদ্রে টিকে থাকা সম্ভব নয়, কারণ এতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ও স্থিতিশীলতা থাকে না। ফলে সেইসব ছোট যানবাহন দিয়ে যদি মহাসাগরে পাড়ি দেওয়া হয়, পরিণতি কী হবে তা সহজেই অনুমেয়। তাই রাজনীতির সংকট থেকে উত্তরণের জন্য একটি শক্তিশালী, সুগঠিত, টেকসই রাজনৈতিক কাঠামোই একমাত্র পথ।

আমরা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছি। আমরা রক্ত দিয়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। তার পরও কি আমরা ‘হুজুগে-গুজবে বাঙালি’ অপবাদ নিয়ে থাকবো?
নিশ্চয় না।
আসুন আমরা সবাই সজাগ হই।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:২৩
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশের কিছু নাগরিক উভয় দেশের মানচিত্র মুছে দিতে আগ্রহী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১১ ই মে, ২০২৫ রাত ৯:০১



ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশের কিছু নাগরিক উভয় দেশের মানচিত্র মুছে দিতে আগ্রহী। পাকিস্তান+ভারত= পাকিস্তান অথবা ভারত+পাকিস্তান=ভারত- এ ধরনের ইচ্ছা কিছু লোকের। তবে যে পক্ষের ইচ্ছাই পূরণ হোক তারা আমাদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সে দূরে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১১ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:১৫

সে দূরে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

সে দূরে, দূরে আছে সে
হঠাৎ ইচ্ছে হলো পেতে।
মনমতো কতকিছুই নজরে পড়ে
দিন যায়, যায় তারে ভেবে।
ছোঁয়া যায় না, ধরা যায় না
কেবল খেয়ালে আসে, অন্যমনা।
উৎসাহ না পেয়ে, পেয়ে, শেষ
একটু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা নিয়ে ছোট্ট দুটি কথা।

লিখেছেন অন্তর্জাল পরিব্রাজক, ১১ ই মে, ২০২৫ রাত ১১:৪৩


আওয়ামী লীগের কার্যক্রম তো নিষিদ্ধ হল। অনেক আলোচনা সমালোচনা চারিদিকে। থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কিছু কথা আছে যেগুলো এড়ানো যায়না। আফটার অল,অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এহেন সিদ্ধান্ত ঠিক এদেশের আমজনতার ম্যাণ্ডেট... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিচারের জায়গা না পেলে মানুষ প্রেত হয়ে ওঠে

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ১২ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:৩৯


(সামাজিক অবিচার, রাষ্ট্রীয় অনুপস্থিতি এবং আন্ডারওয়ার্ল্ড কাঠামোর মধ্যে সাধারণ মানুষ কীভাবে হারিয়ে যায়।)

মানুষ যখন বারবার অবিচারের শিকার হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

Bangladesh bans ousted PM's Awami League under terrorism law

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ১২ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫৬





হায়রে এরেই বলে কর্মফল। ১৭ টা বছর গুম , খুনের মাধ্যমে এক ভয়ের রাজ্য তৈরী করে কেড়ে নেয়া হয়েছিল মানুষের বাকশক্তি। চোখ, কান, মুখ থাকতেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×