কেন আমি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চাই....
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার বিগত ১৬ বছরে কয়েক হাজার মানুষকে গুম-খুন করেছে, লাখ লাখ মানুষকে নিপীড়ন করেছে। সারাদেশে তুমুল বেগে লুটপাট চালিয়েছে এবং দেশের মানুষের টাকা যেই পরিমাণ পাচার করেছে, তা চিন্তারও বাইরে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ হাজার দু'য়েকের মত মানুষ মেরেছে এবং পঁচিশ হাজারের বেশি মানুষকে চিরতরে আহত করে পঙ্গু করছে- শুধু এইটুকু দ্বারাই লিগের অপকর্মের গ্র্যাভিটির ফিরিস্তি শেষ হয় না।
এতকিছুর পরও লীগের লোকজনের কোন রিমোর্সবোধ দেখেছেন? কোন রিয়ালাইজেশন নাই এদের বরং এখনও তারা প্রতিশোধ নেওয়ার পাঁয়তারা খোঁজে। আর অবধারিতভাবেই দেশের মানুষের ভোটাধিকার পুরোপুরি হরণ করেছিলো, একবার দুইবার না, বার বার- এই প্রত্যেকটা কু-কাজের জন্যই লীগের বিচার হতেই হবে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনই বিকল্প নাই। এত এত অপরাধের পরও এদের সংগঠনের কোন বিচার না হলে, সেই দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে না।
আওয়ামী লিগকে সংগঠন হিসাবে নিষিদ্ধ করা উচিৎ যা আমি বহু আগ থেকেই আমার মতামত জানিয়েছি বিভিন্ন সেমিনারে, মার্চের শেষের দিকে বিটিভি তে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এবং নিয়মিত লেখালেখির মাধ্যমে। সেই অবস্থান এখনও পাল্টায় নাই।
আমি চাই আওয়ামী লীগকে ব্যান করা হোক। তবে এক্সিকিউটিভ অর্ডারে লীগকে ব্যান করার ব্যাপারে আমার আপত্তি আছে। এই ধরনের সিদ্ধান্ত এক্সিকিউটিভ অর্ডারে করলে, সেটার প্রকৃত ইম্প্যাক্ট আশানুরূপ হবে না বলেই মনে করি, যার উদাহরণ আওয়ামী লীগ কতৃক জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ করা। কাজেই লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে- শেখ মুজিবুর রহমান কতৃক "১৯৭৪ সালের রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করণ আইন" এর ১৯ ধারা", "রাজনৈতিক দল অধ্যাদেশ ১৯৭৮" এবং "সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ আইন"র মাধ্যমে রাজনৈতিক দল বরখাস্ত, সাময়িক বরখাস্ত এবং আজীবন নিষিদ্ধ করার সুযোগ আছে। সেই বিচার ব্যবস্থাও হতে হবে ফেয়ার প্রসেসে (আওয়ামী মার্কা ফরমায়েশি রায়ের বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে নয়)। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি লীগের বিচার করার জন্য কোন বাইরের ইনফ্লুয়েন্স দরকার হবে না, এদের অপকর্মের ফিরিস্তি এত লম্বা যে ফেয়ার ট্রায়ালের মাধ্যমেই সেটা সম্ভব। তাছাড়া সংবিধানের আর্টিকেল ধরেও বিচারিক প্রক্রিয়ায় সহজেই আগানো সম্ভব।
আওয়ামী লীগ বিগত তিন টার্ম নির্বাচনের নামে প্রহসন করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিলো। কাজেই বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এদের নিষিদ্ধের ইস্যু ডিল করা সম্ভব এবং সামনের তিন টার্ম ইলেকশনে পার্টিসিপেট করা থেকেই এদেরকে বিরত রাখা সম্ভব। মানে সামনের তিন টার্ম নির্বাচনে লীগ যাতে পার্টিসিপেট না করতে পারে সেটা আইনি প্রসেসেই নিশ্চিত করা সম্ভব।
এরপর পার্লামেন্ট গঠিত হলে প্রথমে পার্লামেন্ট ডিবেট এবং সেই সূত্র ধরে পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ব্যান করার ইস্যুটা 'গণভোট' এর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে। বিচারিক প্রক্রিয়া এবং গণভোটের মাধ্যমে যদি লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে প্রসিড করা যায়, সেটা হতে পারে টেকসই এবং উপযুক্ত পন্থা। এই মতামত আমি বিগত কয়েকমাসে বহুবার বলেছি।
আর এগুলোর পাশাপাশি আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু আছে। লীগের লোকজনের হিউজ অবৈধ ইনকাম এবং বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচুর টাকা কামানোর সেটেলমেন্ট অক্ষুণ্ণ আছে। অবৈধ ইনফ্লুয়েন্স খাটিয়ে করা এদের এই ক্যাশ ফ্লো বন্ধ করতে হবে এবং আওয়ামী লীগের অপ-প্রভাবে ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, শিল্পপতিদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করে লুটপাটে অর্জিত সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে। সেই সম্পদ বিক্রি করে রাষ্ট্রীয় সকল ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আনফরচুনেটলি এই ব্যাপারে সিরিয়াস কোন স্টেপ এই সরকারকে নিতে দেখি নাই।
আওয়ামী লীগ ইস্যু ডিল করা উচিৎ খুবই সেন্সিবল প্রসেসের মাধ্যমে, হুট করেই গোঁজামিল দিয়ে কোন একটা কিছু করার প্রক্রিয়া নইলে খুব একটা কাজের কাজ হবে না এবং দীর্ঘমেয়াদে তা সিরিয়াসলি ব্যাকফায়ার করতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১:৪৮