জীবন সুন্দর হোক......
অকাল প্রয়াত ব্লগার ইমন জুবায়ের তার প্রোফাইল বায়োতে লিখেছিলেন-
"জীবন মানে শুধুই যদি প্রাণ রসায়ন
জোছনা রাতে মুগ্ধ কেন আমার নয়ন।"- এই উপলব্ধি আমরা সবাই করতে পারিনা।
জীবনের প্রাণ রসায়ন- বোঝার আগে একটা প্রবাদ মনে করিয়ে দেই- "টাকা দিয়ে সব কেনা যায় না"। যেমন- সুখ, সম্মান, ভালোবাসা ইত্যাদি। আমি এই প্রবাদে সম্পুর্ণ বিশ্বাসী না। এই ভীষন প্রতিযোগিতামূলক পৃথিবীতে একটা মিনিমাম ভদ্রোচিত জীবন কাটাতে হলে অবশ্যই অর্থের দরকার আছে- তবে টাকা দিয়ে এসব কেনা যায় না। এগুলো মার্কেটের শপ থেকে শপিং করা যায় না এটা ঠিক।
কিন্তু আপনাকে সম্মানজনক একটা জীবন করতে হলে একটা সম্মানজনক পেশাতে (সব পেশাই সম্মানিত হলেও এখানে মূলত আর্থিক মানদন্ডকেই বোঝানো হয়েছে) থাকতেই হবে এই যুগে। দেখানতো একজন বেকারকে সমাজ সম্মান করে? কঠিন সত্য হচ্ছে, লেখাপড়ার পেছনে অর্থ, সময় শ্রম ইনভেস্ট করে যখন আপনি একজন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাঙ্কার, শিক্ষক, ল'য়ার, বিজনেস ওনার কিম্বা একজন কর্পোরেট এক্সিকিউটিভ হয়ে উঠবেন- তখন যে সম্মান সমাজ আপনাকে দিবে তা আপনি বিশ্বের তুখোড় সুন্দরী কিম্বা ম্যাচোম্যান হয়েও কখনোই পাবেন না বেকার থাকলে, দোকানদার হয়ে, আম গুড় মধু বিক্রেতা হয়ে অথবা বসে বসে বাবার সম্পত্তি ভোগ করে। শুনতে রুঢ় হলেও এটাই বাস্তবতা।
ভালোবাসা পেতে হলেও অবশ্যই আপনার একটা সাউন্ড এবং সিকিউরড ফাইন্যান্সিয়াল সেটেল লাইফ লাগবে এ যুগে। তা নাহলে একজন পুরুষ হয়ে আপনি কখনোই ভালো অবস্থানে থাকা স্ত্রী পাবেন না, এবং নারীও স্বামী পাবেন না। আজকাল তো ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার, বহুজাতিক কোম্পানির পদস্থ ইত্যাদি পেশাদার পুরুষেরা বিয়ের সময়ে আলাদা করে বলেই দেয়- মিনিমাম অনার্স পাশ হতে হবে ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে, এলাকার সোনা মিয়া ব্যাপারী কলেজ থেকে না। ছেলেরাও এখন চায় পেশাগত মানানসই একজন যোগ্য স্ত্রী, শোকেসে সাজিয়ে রাখার জন্য তুলতুলে পাপেটিং স্ত্রী নয়। বেকার শো-পিস স্ত্রী এখন আর কোন স্ট্যান্ডার্ড পুরুষ চায় না।
জরুরী না কখনোই সমাজের সব ছেলেদের স্ত্রীকে প্রথম শ্রেণির জব করা উপযুক্ত স্ত্রী পেতেই হবে। তবে সমস্যা হচ্ছে, আজকাল অধিকাংশ পুরুষই আশা করে একজন স্ট্যাব্লিসড নারীকে স্ত্রী হিসেবে, একজন নারী আশা করেন একজন এস্টাবলিস্টড স্বামী। কিন্তু যখন নিজের অযোগ্যতার জন্য তা পান না তখন এই ব্যার্থ পুরুষেরাই ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স থেকে এসব বলে বেড়ায়- "উচ্চ শিক্ষিত চাকরি করা নারীরা সংসারী হয় না"। আরে উজবকু, উচ্চ শিক্ষিত কর্মজীবি নারীর তো নিজেরই হ্যাডাম আছে সংসার সাজানোর জন্য ঘর তৈরি করার। সে কেন একজন ঘরহীন, পরিচয়হীন, কম শিক্ষিত, চরিত্রহীন, financially unstable পুরুষের ফাঁদে পা দিয়ে নিজের জীবনকে আমৃত্যু দৌঁড়ের উপরে রাখবে? এক দুদিন চলে বেকার পুরুষকে পোষা কিন্তু আজীবন বেকার, আনহেলদি লাইফ স্ট্যাইল মেইনটেইন করা পুরুষকে বেবি সিটিং করার কোন মানেই হয় না। পুরাই সময় নষ্ট প্রোজেক্ট এটা। আজকালকার মেয়েরা বেকার ছেলেদের সাথে বড়োজোর পার্ট-টাইম প্রেমের নামে টাইমপাস করে... শিক্ষিত এবং ফাইন্যান্সিয়ালী সেটেল কোনো নারী কেন এই ঝুঁকি নিবে? সে কি হাবা নাকি? একজন ফাইন্যান্সিয়ালী সেটেল পুরুষই বা কেন আইডেন্টিহীন বেকার নারীকে পালবেন এই যুগে? পুরুষের ক্লাস বোঝা যায় তার স্ত্রীকে দেখে, ইট'স জাস্ট সিম্পল।
এবার আসুন সুখের বিষয়ে। সুখ এক অলীক বিষয়। একে দেখা যায় না, ধরা যায় না। শুধু অনুভব করা যায়। মানে পুরোটাই মাইন্ড সেটের বিষয়। আপনার যখন পেটে হেলদি ফুড থাকবে, মাথার উপরে নিশ্চিত ছাদ থাকবে, ভদ্রোচিত শৌখিন পোশাক থাকবে আলমারিতে, শরীর মনের যত্ন নিতে আপনি ক্যাপাবল থাকবেন তখন মন খারাপ বলুন আর অসুখ বলুন, সবকিছু কিউর করার জন্য আপনি উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারবেন। কিন্তু টাকা পয়সা না থাকলে রুম বন্ধ করে ফ্যাচফ্যাচ করে কান্নাকাটি করা আর ভিক্টিম কার্ড প্লে করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারবেন না।
সুতরাং উঠুন, রেডি হন, বেরিয়ে পড়ুন ক্লাস করতে কিংবা অফিসের দিকে। অনেক অর্থের দরকার নেই জীবনে, কিন্তু মিনিমালিস্টিক লাইফ স্ট্যাইল মেইনটেইন করার জন্য অতোটুকু অর্থ সৎ পথে রোজগার করুন। নারী পুরুষ সবার জন্যই কথাগুলো প্রযোজ্য।
ব্লগার কবি সুলতানা শিরিন সাজি তার বায়োতে লিখেছিলেন- "বেঁচে থাকাটা দারুণ ব্যাপার....."- সেই দারুণ ব্যাপারটা হোক সার্বিক সততায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৩:২২