somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিল্পী (সত্য গল্প অবলম্বনে)

১০ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"আকাশের মত নেই বিশালতা হৃদয়ে, কষ্ট সয়ে সয়ে রইব সুনীল/আমি ক্ষুদ্র অতি বিশাল আকাশ জুড়ে উড়ে বেড়ানো এক একা গাংচিল"
শিল্পী একা দাঁড়িয়ে আকাশ দেখে দেখে গাইছিলেন। সিঁড়ি বেয়ে রাজ শিল্পীর একাকীত্বকে বিরক্ত করলো। শহরের এক বেনামী চাইনিজ রেস্টুরেন্টের তিনতলার ব্যালকনিতে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে রাজ আর শিল্পী। দুজনের অবস্থান একই ব্যালকনিতে কিন্তু অভ্যন্তরীণ দূরত্ব অনেক। রাজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া,এই শহরের অনেক যুবকের মতই যার চোখে বড় হওয়ার অনেক রঙ্গিন স্বপ্ন। আর সেই স্বপ্ন এখনো সুদূরে পড়ে রয়েছে,অন্যদিকে শিল্পী এমন একজন মানুষ যার নামই এখন ইতিহাসের অনুষঙ্গ। অসংখ্য হৃদয় ও কালজয়ী গানের এই শিল্পীকে তাই পরিচয় করিয়ে দেয়ার আর প্রয়োজন নেই। রাজ আর শিল্পী এই যে একই ব্যালকনিতে দাঁড়ানো,এর মূল হোতা হলেন মোসাদ্দিক রাইয়ান। উনি এখন এই চাইনিজ রেস্টুরেন্টেরই দোতলায় বসে আরো অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সাথে ব্যবসার ফন্দি ফিকির করছেন। উনিই শিল্পীকে ওপার থেকে এপারে এনেছেন,আর রাজ সহ আরো কিছু ছেলেকে শিল্পীর দেখাশোনার দায়িত্বে লাগিয়েছেন। রাজ আর ঐ ছেলেগুলো মোসাদ্দিক রাইয়ানের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এ কাজ করে।
- ঐ গানটি শুনাবেন? 'পাহাড়ের অশ্রু ঝর্ণা হয়ে ঝরে/আমরা তা না বুঝেই করি উল্লাস/মানুষ এমনই হায় অপরের কান্নায় পাষাণের মত করে শুধু উপহাস'..
- নাহ,
শিল্পী দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ালেন,
- নিচে ভাল লাগছিল না তাই এখানে দাঁড়ালাম। আরো দেরী হবে নাকি?
- মোসাদ্দিক ভাইয়ের দেরী হবে। আপনি চাইলে হোটেলে ফিরতে পারেন।
- হোটেলে ফেরার মত কোন তাড়া নেই আমার্। কি করবো হোটেলে ফিরে? তবে জানো কি,এখানটায় তেমন ভাল লাগছে না।
- চলুন তাহলে নিচেই চলুন। নিচে আরো ছেলেপেলে আছে। সবার সাথে আড্ডা দিবেন।
শিল্পী কিছুক্ষণ যেন রাজ এর প্রস্তাব নিয়েই ভাবলেন,এরপর গটগট করে নেমে যেতে শুরু করলেন সিঁড়ি ভেঙ্গে। উনার পিছু পিছু নিচে নামতে নামতে রাজ নিজেকে মনে মনে তিরস্কার করতে লাগল, কি ছেলেমানুষীটাই না করে ফেলেছিল সে। একাকী মূহুর্তে শিল্পীকে পেয়ে গানের বায়না ধরেছিল। উনি কি তোর জিগারে দোস্ত হয়,বোকচুদ ?
কুলিং ফ্যানের রোটরের গড়গড় আওয়াজ আর এসির তপ্ত বায়ু পেরিয়ে আধো আলো আধো অন্ধকার সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলো রাজ আর শিল্পী। গাড়ি বারান্দায় মোটরবাইকগুলোর উপর গ্রুপের বাকি ছেলেরা বসে আড্ডা দিচ্ছিল। এদের এই আড্ডায় হৃদ্যতা নেই,শুধুই সময়ক্ষেপন। ছেলেগুলো আসলে অপেক্ষা করছে সুলতান ভাইয়ের জন্য। সুলতান ভাই মোসাদ্দিক রাইয়ানের ডানহাত। উনি এসে খরচাপাতির জন্য টাকা দিবেন তারপরই এরা যার যার পথ ধরবে। রাজ আর শিল্পী নিচে নেমে আসার পর ছেলেগুলো শিল্পীকে দেখেই এটেনশন হয়ে গেল। নমস্কারের রব পড়ে গেল। শিল্পী হাত উঁচিয়ে ইশারায় সেসব উত্থিত নমস্কারকে যেন নিচে নামালেন।
- কি খবর ? কি ? খুব আড্ডা হচ্ছে বুঝি ?
শিল্পী একটি বাইকে বসতে বসতে প্রশ্ন ছেড়ে দিলেন হাওয়ায়। একজন সেটাকে ধরলো।
- না,দাদা। এ আর তেমন কি আড্ডা। এখন আপনি এসে গেছেন, এখনই তো আড্ডা শুরু হবে।
উপস্থিত সবাই ওর কথায় হেসে দিল। শিল্পীও মুচকি হেসে উঠলেন।
- পর্দার আড়ালে সবাইকেই তো খুব কর্মঠ দেখলাম। বাংলাদেশের ইয়ুথদের এই ব্যাপারটা আমার খুব ভাল লাগে। তা শুনি বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা কে কি করেন এইসব বাদে।
শিল্পীর আগ্রহে সবাই একে একে নিজের পরিচয় দেয়া শুরু করলো। কে কোথায় পড়ে, টুকটাক আর কি কি করে ইত্যাদী। শিল্পীও চেহারায় প্রবল আগ্রহ নিয়ে সেসব শুনতে লাগলেন।

সুলতান ভাই নিচে নেমে এসে শিল্পীকে এখানে দেখে কেমন চুপসে গেলেন। রাজ উনার চেহারা দেখেই কারণটা বুঝছে। এতদিন একসাথে কাজ করে সুলতান ভাইয়ের চেহারা সে পড়তে পারে। শিল্পী সুলতান ভাইকে খেয়াল করে আরো একটু চড়ে বসলেন বাইকে। ছাই কালারের শার্ট আর ব্লু জিনস্‌ পরিহিত শিল্পীকে বসার এই ভঙ্গিমায় আরো ড্যাশিং লাগছে দেখতে।
- সুলতান অব ঢাকা, কি ফরমান নিয়ে এসেছেন ?
শিল্পীর কৌতুকের জবাবে সুলতান ভাই শুধু মুচকি হাসিই দিলেন। মুখে কিছু বললেন না। বরঞ্চ এমন ভাব নিয়ে দাঁড়ালেন যেন যে আড্ডাটা চলছিল সেটাতেই উনি ধ্যানমগ্ন শ্রোতা হতে চান। সুলতান ভাইয়ের কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে শিল্পী আবার আড্ডায় মন দিলেন। তাঁর ইশারায় আরেকটি ছেলে নিজের বয়ান দেয়া শুরু করে দিল।
- তোরে না কইছিলাম সামলে রাখতে। এইখানে আনলি ক্যান।
সুলতান ভাই রাজের কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন। রাজ বোকার মত ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল সুলতান ভাইয়ের দিকে।
- সামনে তাকা উদাস বাউল !!
সুলতান ভাই চাপা ঝাড়ি দেন রাজকে। রাজও সামনে তাকায় তাড়াতাড়ি। আসলেই বোকার মতই কাজ করেছে সে। শিল্পীকে নিচে নিয়ে আসা ঠিক হয়নি। নিজের অজান্তে কেন যে প্রায়ই এমন বোকার মত কাজ করে বসে বুঝে উঠতে পারে না কিছুতেই।

- ও মাই গড, ......দা !!
চিকন এক মেয়েকন্ঠের উচ্ছ্বাসে আড্ডার সবার মনোযোগ ঘুরে গেল। একটা ডুডমার্কা ছেলে আর সাথে চার-পাঁচজন ওয়াওমার্কা মেয়ে, সেখান থেকেই একটি মেয়ে শিল্পীর সামনে এসে আবেগে লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে। শিল্পী ওর দিকে চেয়ে মুচকি একটি মিষ্টি হাসি দিতেই পুরো ব্যাটালিয়ন হাজির। শিল্পীর অনুমতির তোয়াক্কা না করে কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই শিল্পীকে ঘিরে দাঁড়িয়ে গেল ওরা। রাজ শিল্পীর গা ঘেঁষেই ছিল। জায়গা থেকে নড়ার সুযোগটি পর্যন্ত পেল না সে। শিল্পীর সাথে ওদের জটলায় আটকা পড়ে গেল। মেয়েগুলোর মধ্যে প্রথম মেয়েটি অনবরত বকবক করতে লাগলো,আর বাকি গুলো শিল্পীর গায়ের উপর ঝুঁকে ফটোসেশনে মগ্ন। কোন ফাঁকে যে ওরা গ্রুপের আনিসকে ক্যামেরাম্যান বানিয়ে ফেলেছে সেটাও খেয়াল করতে পারেনি রাজ। অগত্যা শিল্পীর সাথেই ওদের ফটোসেশনে শামিল হল রাজ। সামনের মেয়েটা নিজেকে শিল্পীর অনেক বড় ভক্ত প্রমাণের চেষ্টায় মত্ত,সেই সাথে সবার নানা ভঙ্গিমায় পোজ। রাজ হঠাৎ অনুভব করলো ওর হাতের উপর এক মেয়ের স্তন চেপে বসেছে। কি বিব্রতকর !! মেয়েটার হয়তো ছবি তোলার প্রতি মনোযোগ,তাই টের পায়নি। রাজ নিজে হাত সরাতে পারছে না। বাধ্য হয়েই অনুভূতিহীনের মত আচরণ করতে লাগল সে। যদি কোন মূহুর্তে একটু আলগা হয় অমনি নিজের হাত সরিয়ে নিবে। হঠাৎ রাজ এর মনে হলো চাপটা বেড়ে গেছে। চট করে মেয়েটার দিকে ফিরতেই চোখাচোখি হয়ে গেল। মেয়েটা মুচকি হাসছে। রাজ এর সারা শরীর ঘৃণায় রি রি করে উঠলো। সামনের দিকে তাকাতেই দেখলো ওদের ফটোসেশনের সুবাদে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সুলতান ভাই বাকিদের বিদায় করছে। রাজ এর খুব ইচ্ছে হল সেখানে চলে যেতে। টাকা খুব দরকার ওর,আর এই অসভ্য বেহায়া মেয়ের কাছ থেকে নিস্তার।
- দেখি আমাকে জায়গা দাও তো,ভাইয়া।
রাজ সামনের মেয়েটিকে বলল। ওমনি বকবক করে যাওয়া মেয়েটি উত্তর দিল,
- আপনি থাকলে সমস্যা নাই।
- থাকো না রাজ।
শিল্পীও সমর্থন দিলেন। রাজ এর পিছনে অস্ফুটস্বরে কারা যেন ওর নাম উচ্চারণ করলো। বোধহয় সেই মেয়েটি আর তার কোন বান্ধবী। রাজের আবার গা গুলিয়ে উঠার অনুভূতি হলো।

মেয়েগুলো অবশেষে আর কিছু ছবি তুলে ক্ষান্ত হলো। সুযোগ পেয়েই রাজ জটলা থেকে বেরিয়ে সুলতান ভাইয়ের দিকে ছুটলো,ছুটতে ছুটতে শুনতে পেল মেয়েগুলোর মধ্যে কেউ শিল্পী কোন হোটেলে উঠেছে তার খোঁজ নিচ্ছে।

সুলতান ভাইয়ের কাছাকাছি আসতেই তিনি বলে উঠলেন,
- উনারে নিয়া হোটেলে দিয়া আয়। আজকে উনার এইখানে কোন কাম নাই। কালকা রেডিওতে একটা শো আছে আর পরশু কক্সবাজারে। ভাল কইরা রেস্ট নিতে কইবি। রাইতে হোটেলে আর আসার দরকার নাই, আজকে হোটেলে আমি ডিউটি দিমু।
- আচ্ছা ভাই।
- ধর,এই টাকাগুলো নে। আজকে গাড়ি আসবো না,ক্যাব নিয়া নিস।
- সুলতান ভাই, আমার সিগারেট শেষ কিন্তু।

শিল্পী ভক্তকুলকে বিদায় করে রাজ এর পিছনে এসে দাঁড়িয়েছেন। সুলতান ভাই তাড়াতাড়ি করে রাজ এর হাতের মুঠোয় টাকা গুঁজে দিয়ে হাল্কা চাপ দিলেন। রাজ টাকাগুলো পকেটে চালান করে দিলো।
- কি বলেন দাদা, শেষ হয়ে গেছে ? প্রবলেম নেই, রাজকে বলে দিচ্ছি কিনে দিবে। আপনি ওর সাথে হোটেলে ফিরুন। আমি আর মোসাদ্দিক ভাই এদিকটা সেরে রাতে হোটেলে আসছি। আপনি যান,গিয়ে রেস্ট নিন।

সুলতান ভাই রাজ এর দিকে ফিরে কাঁধে হাত দিয়ে তাগাদা লাগালেন,
- যাহ,দাদাকে নিয়ে যাহ। ক্যাব নিস,আর মনে করে “মোহনভোগ” সিগারেট কিনে নিস।
- “মোহনভোগ” ??
রাজ এর কন্ঠে বিস্ময়। শিল্পী হেসে এগিয়ে এসে রাজ এর হাত ধরলেন।
- সে অনেক পুরনো আর খানদানী অভ্যাস। “মোহনভোগ” আমাদের ওদিকের অনেক পুরনো দেশী ব্র্যান্ড।
- যাওয়ার সময় শাঁখারীপট্টিতে ঢুঁ মারিস। ওখানকার দোকানগুলোতে পাবি। বেশী করে নিস।

রাজ আর শিল্পী বেরিয়ে রাস্তায় আসে। রাজ ট্যাক্সি ক্যাব দেখতে শুরু করে দেয়। শিল্পী নিজের চোখে কালো সানগ্লাস দিয়ে চারদিকের বাকি চোখগুলোকে অগ্রাহ্য করে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আছেন। ক্যাবের ড্রাইভাররা শিল্পীকে চিনতে পেরেছে কিনা কে জানে,সবাই কেমন ন্যায্য ভাড়া দাবি শুরু করেছে। মিটারে তো যাবেই নাহ,বাড়তির পরিমাণেও তেমন আগ্রহ অনেই কারো। রাজ কি করবে ভাবছে এমন সময় পিছন থেকে শিল্পী ডাক দিয়ে উঠলেন,
- এই রাজ,ভাই এখান থেকে হোটেলটা আসলে কতদূর ?
- হবে পাঁচ-সাত কিলোমিটার। কেন দাদা ?
- নাহ,ভাবছিলাম তেমন তো কোন তাড়া নেই। ওটুকু পথ নাহয় পায়ে হেঁটেই ফিরি। ঢাকা শহর দেখা হলো।
- কেন আগে কখনো ঢাকা দেখেননি?
- এই দেখো না,একেবারে ছেলেমানুষের মত প্রশ্ন। ঢাকা দেখা হবে না কেন ? ঢাকা তো আমি সে কতবারই এসেছি। তবে জান কি, সবসময় তো গাড়িতে চলাফেরা হয়েছে। ফুটপাত দিয়ে হাঁটা হয়নি আগে।
- তাহলে একটা কাজ করি দাদা। এখান থেকে শাঁখারীপট্টি মাত্র দেড়-দুই কি.মি. হবে। ঐপথটুকু হেঁটে যাই। আপনার সিগারেট কিনে তারপর গাড়িতে চড়বো।

রাজ আর শিল্পী ফুটপাথ ধরে হাঁটতে শুরু করলো। বিকেলটা ক্লান্ত হয়ে ঘুমানোর জন্য বিছানা খুঁজছে। নাগরিকরা ধীরে ধীরে নীড়ের পথে নামছে। আস্তে আস্তে এটি এক মহা স্রোতে পরিণত হবে। সেই স্রোতে প্রবল জোয়ার আসবে তারপর ভাটা। মানুষও এমনি করে জীবনের মূল স্রোত ধরে নিজের ঠিকানায় পৌঁছুতে চায়। একসময় সেই স্রোতেও জোয়ার আসে তারপর ভাটা। মানুষকে শুধুমাত্র ভাটার আগেই কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছুতে হয়। শিল্পী নাগরিক স্রোতের ভেতর দিয়ে ফুটপাত ধরে হাঁটছেন এই নাগরিকদেরই একজনকে সঙ্গী করে। আশ্চর্য হওয়ার মত ব্যাপার হলো,কেউই শিল্পীকে খেয়াল করছে না। যেন কেউ টেরই পাচ্ছে না এক কালপুরুষ হেঁটে যাচ্ছেন। অথচ অনেকদিন নতুন এ্যালবাম না বেরুলেও এখনো শিল্পী গানের প্রতি অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের পছন্দের গানের প্রচুর অনুরোধ আসে। শিল্পী নির্জন পথে পৌঁছে রাজ এর কাঁধে হাত রাখলেন। তারপর হঠাৎ গলা ছেড়ে গেয়ে উঠলেন,
- চাকুরী,চাকুরী,চাকুরী-চাকুরী
কর্মের যজ্ঞে খুঁজে ফেরা দু’কড়ি
হোক সে এমডি,অফিসের নকর-ই
ঠাকুর কিংবা ঘোষ, অঞ্জন-বেলা বোস
সকলের আরাধনা,বাঁচা-মরা চাকুরী।।

রাজও শিল্পীর সাথে সাথে গলা মেলায়,
- চাকুরি,চাকুরী,চাকুরী-চাকুরী ।।

রাজ এর কাঁধে হাত রেখে একসাথে গলা মিলিয়ে গান গাইতে গাইতে শিল্পী আরো কিছু পথ হেঁটে যান। রাজ এরও ভাল লাগে প্রিয় শিল্পীর সাথে গলা মিলিয়ে প্রিয় একটি গান গাইতে। গান থামার কিছু পরে শাঁখারীপট্টি চলে আসে ওরা। খুঁজে ফিরে এক দোকানে পায় “মোহনভোগ”। ঐ দোকানে ওপারের আরো অনেক প্রোডাক্ট পাওয়া যায়। ওদের ব্যবসাই এটা। দোকানীকে পেমেন্ট করার সময় হঠাৎ করেই শিল্পীকে চিনে ফেলে সে। আর যায় কোথায়। সিগারেটের টাকা তো সে নিবেই নাহ, উল্টো নাস্তা-পানির আয়োজনে ব্যতিব্যস্ত। অবশেষে সেই ঝামেলা থেকে বাঁচা গেল তবে শিল্পীর অটোগ্রাফ আর “মোহনভোগ” হাতে ফটোগ্রাফ এর বিনিময়ে। ভদ্রলোক ছেলে পাঠিয়ে ক্যাব ভাড়া করিয়ে আনালেন। চড়ার আগপর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে আসলেন আর বারবার করে বাসায় নেমন্তন্ন দিতে লাগলেন। শিল্পী তাকে পরের বার আসলে তার নেমন্তন্ন গ্রহণ করবেন বলে আশ্বস্ত করলেন তারপর ক্যাব ছাড়লো।
রাস্তায় এসে উঠতেই কাঁচ গলে ঠান্ডা বাতাস এসে গায়ে লাগলো। অনেকক্ষণ ধরে চুপ করে থাকা রাজ-ই নিরবতা ভাঙল।
- আপনার অনেক গানের ভীড়ে আমার সবচেয়ে প্রিয় হলো ঐ গানটা...
- কোনটির কথা বলছো ?
- এ সমাজ চায় না নিতে সেই মেয়েটির খোঁজ
যে মেয়ে ভোরের আলোয় কাজের জন্য বাইরে বেরোয় রোজ
সাথে নিয়ে দিনের খাবার যে মেয়েটি সংগ্রামে যায় রোজ
এ সমাজ চায় না নিতে সেই মেয়েটির খোঁজ।।

- তোমার গানের গলা খুবই ভাল। আমার এই অনুরোধ রেখো,নিয়মিত সারগম কোরো। তোমার অনেক বড় শিল্পীর গলা আছে। ড্রাইভার, এসি অন করুন তো।

ক্যাবের জানালায় কাঁচ উঠে গেল,ধীরে ধীরে এসি’র ঠান্ডা হাওয়ায় ক্যাবের ভেতরের পরিবেশ ঠান্ডা হলে এলো। জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে থাকা রাজ এর মনে হলো এই বুঝি সে জমাট বরফ হয়ে যাবে। যদিও তার চোখের কোণে জমা জলটুকু তখনও আগেরমতই তরল।


০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×