বৈশাখের প্রথম দিন রাস্তায় যখন সাদা শাড়ী লাল পাড় আর সাদা পাঞ্জাবী পড়ে মেয়েরা ছেলেরা বের হয়,আরাফাতের মন তখন অতীতের একপশলা বৃষ্টিতে ভিজে যায়। সেই ভেজা মনে সতেজ হয়ে উঠে উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার স্মৃতি। নাকের নিচের পাতলা গোঁফের সদ্য কৈশোর পেরুনো সেই বয়সে আরাফাতের দিনগুলোও ছিল পহেলা বৈশাখের মতই উচ্ছল,উৎসবমুখর। শেষ বিকেলে অফিস থেকে ফেরার সময় রিকশায় আর সিএনজি-তে,ডিসি হিল-সিআরবি সংলগ্ন ফুটপাতে প্রাণ উচ্ছল তরুণ-তরুণীদের দেখে তাই সে নষ্টালজিক হয়ে পড়ে। কি দিনই না ছিল সেদিন গুলো। সকাল হওয়ার পর থেকে কলেজে যাওয়ার আগপর্যন্ত মনের ভিতর দারুণ রোমাঞ্চ কাজ করতো। কলেজ ক্যাম্পাসে কাটানো প্রতিটি সময় ছিল স্বপ্নের মত। চোখে হাজার স্বপ্নের জাল বোনা সেই দিনগুলোতে আর দশটি ছেলেমেয়ের মত আরাফাতও ভালবাসায় মজেছিল। আবেগে টইটুম্বর বয়সটাতে ভালবাসার জন্য বাকি সব বিসর্জনের চরম এক নেশা ছিল। প্রতিটি সময়,প্রতিটি মূহুর্ত সেই নেশায় বুঁদ ছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠছে,মসজিদে যাচ্ছে,গোসল করছে,স্যারের বাসায় যাচ্ছে,কলেজে ক্লাসে অথবা রাতে গান শুনতে শুনতে পড়া আদায় করছে- সব করতো সেই নেশায় নিমজ্জিত থেকেই। জীবন তখন ছিল দুইভাগে বিভক্ত। একপাশে ছোট থেকে সেই বয়সে আসার আগপর্যন্ত চেনা জগৎ,আর অন্য পাশে তার ভালবাসার জগৎ। বড় পাগলাটে ছিল সেই ভালবাসা। না মানতো কাঠফাটা রোদ,মুষলধারে বৃষ্টি আর কনকনে শীত। না করতো কোন সময়জ্ঞান। পহেলা বৈশাখের এই কপোত-কপোতী’র মনে কি আছে সে পরিমাণ ভালবাসা? চোখে কি আছে সে পরিমাণ স্বপ্ন আর প্রত্যয়, যে স্বপ্নে আর প্রত্যয়ে ভালবাসার জন্য সব প্রতিকূলতা মোকাবেলার সাহস করা যায়?
দিন শেষে ছেলেমেয়ে গুলোকে নিজ নিজ ঘরে ফিরে যেতে দেখলে আরাফাত মনে করার চেষ্টা করে ঠিক কতদিন হলো সে ঘরে ফিরে না। ভালবাসার জন্যই তো ঘর ছাড়তে হয়েছে তাকে। সিনেমায় ঘর পালানো দেখায়,আর সে সত্যি ঘরছাড়া। উচ্চ মাধ্যমিকের সেই দূর্বার ভালবাসা টানেই পরবর্তী জীবনে কঠিন জীবনসংগ্রামের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্তের পাশাপাশি স্নাতকে ভর্তির টাকা জোগাড় থেকে শুরু করে স্নাতকোত্তর পাশ করা পর্যন্ত নানা পেশায় তাকে নামতে হয়েছিল। পরিচয় পাওয়া গেলে সে বিশ্বাস করবে কিন্তু রিকশায় চড়ে হাসতে হাসতে যাওয়া জোড়া বিশ্বাস করতে চাইবে না,রিকশাওয়ালা ছেলেটাও হয়তো কোন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এইদেশের,এই সমাজের কাছে এমন জীবনসংগ্রামীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মুখরোচক আলাপ ছাড়া আর কিছুই না। অথচ একমাত্র আরাফাতের মত মানুষরা জানে মুরব্বিদের কোন পর্যায়ের ভুলে মানুষের জীবন এভাবে বদলে যায়। স্বাভাবিক জীবনের বাইরে,সত্যিকারের পরিচয় গোপনে রেখে অন্য জীবন অন্য পরিচয় বহনের কষ্ট করার সাহস তাও শুধুমাত্র ভালবাসার জন্য ক’জনে করতে পারে?
ভালবাসা খুব অদ্ভুতুড়ে,যার পাশে “সত্যিকার” আর “মিথ্যা” এই শব্দ দুটো বেমানান। ভালবাসা সবসময়ই একপ্রকার,একরকম। গভীরতা ছাড়া ভালবাসার আর কোন আকার নেই,তাই একমাত্র গভীরতা দিয়েই ভালবাসাকে পরিমাপ করা যায়। ভালবাসা মানুষকে বন্দি করে নেয়,পঙ্গু করে দেয়,নিজস্বতা কেড়ে নিয়ে ফেলে। এই বন্দীত্ব,পঙ্গুত্ব মানুষ স্বইচ্ছায় মেনে নিয়ে নিজেকে ভালবাসার ছাঁচে নতুন করে গড়তে চায়। কিন্তু যারা রিকশায়-সিএনজিতে প্রেমিকার হাত ধরে ভালবাসার ঘর বাঁধার স্বপ্ন সাজাচ্ছে,কোনদিনও কি বুঝতে পারবে চালকের আসনে বসে থাকা মানুষটা ভালবাসার জন্য নিজ পরিচয় আর ঘরছাড়া?
মানুষটা একটা আদর্শকে ভালবাসে।
আলোচিত ব্লগ
জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানা আপু
শুভ জন্মদিন আপু! আপনার জন্মদিনে সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন কর্মব্যস্ত সুখী জীবন কামনা করছি। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আপনি এবং দুলাভাই অনেক প্রজ্ঞাবান মানুষ। দেশের স্বার্থে জাতির স্বার্থে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আসুন তারেক রহমানের দুর্নীতির নিয়ে আরো কিছু জেনে নেই
‘তারেক রহমানের উপর আস্থা রাখবো কিভাবে? দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার, হাওয়া ভবন দিয়ে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার কী না করেছেন তিনি’, আলাপচারিতায় কথাগুলো বলতেছিলো বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক বিপ্লবী ছোটভাই।... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিপদের সময় কোনো কিছুই কাজে আসে না
কয়েক মাস আগে একটা খবরে নড়েচড়ে বসলাম। একটা আরব দেশ থেকে বাংলাদেশি দুটো পরিবারকে প্রায় দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। কীসের ক্ষতিপূরণ সেটা খুঁজতে গিয়ে যা পেলাম, তা হলো:... ...বাকিটুকু পড়ুন
পদ ত্যাগ না করলেও ছেড়ে যাওয়া পদ কি শেখ হাসিনা আবার গ্রহণ করতে পারবেন?
তিনি ছাত্র-জনতার ধাওয়া খেয়ে পদ ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে প্রাণে বেঁচে গেছেন। পদের লোভে তিনি আবার ফিরে এসে ছাত্র-জনতার হাতে ধরাখেলে তিনি প্রাণটাই হারাতে পারেন। ছাত্র-জনতার হাত থেকে রক্ষা পেলেও তাঁর... ...বাকিটুকু পড়ুন