somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"Bajrangi Bhaijaan" : মুভি রিভিউ

৩০ শে জুলাই, ২০১৫ ভোর ৫:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি হলাম গিয়ে আবেগের এক পোটলা (যদিও আমার ভুড়ি নাই), একটু এদিক ওদিক হলেই চোখের কোণ ভিজে যায়। এরপর সেই আবেগ আমাকে খায় কুড়ে কুড়ে। ধুম করে প্রেমে ফেলে,অভিমানী করে,দৃঢ় প্রতিজ্ঞ করে,অসীম সাহসী করে,বেকুব বানায়,ধরা খাওয়ায়,অপমানিতও করে। তারপরও আমি আবেগী লোক।
হাতে লেখার জন্য পড়ে আছে দুই দুই খানা চিত্রনাট্য,কবি আল মাহমুদকে নিয়ে অনুলিখন, দুইটি সিনেমার রিভিউ (অগ্নি ২ আর Miracle in cell no.7) এর ফরমায়েশ। আর আমি এসব ফেলে দেখতে বসে গেছি সালমান খানের এ বছরের আলোচিত ছবি Bajrangi Bhaijaan । ডাউনলোড কমপ্লিট হতেই দেখা শুরু। আর দেখা শেষ হতেই রিভিউ লেখা শুরু।


সর্বশেষ লিখছিলাম কোরিয়ান ফিল্ম "Miracle in cell no.7" নিয়ে ত্রৈমাসিক "মুক্তকণ্ঠ" সম্পাদক আবদুস সামাদ রাজু এর অনুরোধে তাদের চলচ্চিত্র নিয়ে নিয়মিত আয়োজনের জন্য। "Miracle in cell no.7" অনেক আবেগী একটি মুভি। এক নির্দোষ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বাবার ফাঁসি আর তার ছোট্ট কন্যা সন্তানের বাবাকে নির্দোষ কাহিনী। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাবানদের নির্দয় অন্ধ আক্রোশের শিকার বাবা-মেয়ের সুষ্টু বিচার খুঁজে ফেরার কাহিনী নিয়ে নির্মিত এই ফিল্মটি দেখিয়ে ইতিমধ্যেই আবেগায়িত করেছি বন্ধু আবুল কালাম ইরফান,আহমাদ উল্লাহ, আবু সুফিয়ান আর বুনো হুমায়ুন কে।


ফিল্মটিতে দুর্দান্ত অভিনয় করে নবাগত শিশু শিল্পী Kal So-won জিতেছিল Best New Actress এবং Special Jury Prize। আর ফিল্ম হয়েছে fifth highest grossing Korean film of all time। সেই ফিল্মের রিভিউ লেখা অর্ধেকে আটকে দিয়ে Bajrangi Bhaijaan শুরু হল। কারণ সালমানের এই ফিল্মে শাহিদা চরিত্রে অভিনয় করা নবাগত Harshaali Malthotra কে নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে,আর ফিল্মটাও ইতিমধ্যে অন্যতম highest-grossing Bollywood film ।

প্রথম ১৬ মিনিটের সময়ই চোখের কোণ ভিজে গেছে। দুর্দান্ত চিত্রনাট্যের এক চলচ্চিত্র। দক্ষিণী হিট ছবি Magadheera(২০০৯),Eega (২০১২),হালের Baahubali এর চিত্রনাট্যের সাথে যুক্ত যার নাম,সেই K. V. Vijayendra Prasad এর কাহিনী ও চিত্রনাট্যে নির্মিত এই ফিল্ম। অনেক গুলো পুরষ্কার নিয়ে যাবেন K. V. Vijayendra Prasad নিজের ঘরে এবছর।

এক হারিয়ে যাওয়া বোবা পাকিস্তানী কন্যাশিশুকে নিজের ঘরে ফিরিয়ে দিতে ভারতীয় হিন্দু যুবক বাজরাঙ্গী'র ইনসানিয়াতের কাহিনী এই ফিল্ম। সালমানের শতকোটি টাকার ফিল্মের কাতারে এটি অন্যতম। সেই ২০০৬ সাল থেকে সল্লু ভাই মুসলমানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর এ মুক্তি দিয়ে যাচ্ছেন একের পর এক শতকোটি টাকার মুভি। পূর্বের গুলোর সাথে "Bajrangi Bhaijaan" এর পার্থক্য এই- সালমান এখানে কোনভাবেই আইনের রক্ষাকর্তা নন,সালমানের মারপিটের দৃশ্য কম এবং বেচারার কাপড় খোলা হয়নি। এছাড়া সেই উৎসব কেন্দ্রিক গান,সালমানের বিশাল বাহিনী নিয়ে নাচ,কস্টিউম কেন্দ্রিক ফ্যাশনের নতুন ট্রেন্ড চালু সবই আছে। আবহ সংগীতের কাজ ভাল লাগছে,একদম নতুন করা বোধকরি। Julius Packiam এর পূর্বেকার কাজ ( Kick,Dhoom 3,Ek Tha Tiger) এর তুলনায় অনেকগুন ভাল। মিউজিকের দায়িত্বে তো নামের সাথে চুরির বদনাম লেগে থাকা প্রিতম,গানগুলোও তেমন ছোঁয়নি। সবচেয়ে মনকাড়া সিকোয়েন্সটা হলো,আটকে পড়া ভেড়ার বাচ্চাকে বাঁচাতে গিয়ে শাহিদার ট্রেন মিস আর সেই ট্রেনের পিছনে বোবা শাহিদার দৌঁড়ানোর দৃশ্য। কমেডি সিকোয়েন্সগুলোর মধ্যে মুসলমানের ঘরে শাহিদার মুরগি খাওয়ার দৃশায়নের আইডিয়াটা ভাল লাগছে।

Nawazuddin Siddiqui তো বলিউডে শ্রদ্ধার আসনে ইতিমধ্যেই বসে গেছেন তার তুখোড় অভিনয়ের জন্য। তবে এই ফিল্মে বেচারার এন্ট্রি সিকোয়েন্সটা সত্যিকার ভিডিওটার মত অতটা হাস্যকর হয়নি। এর চেয়ে উনার ঐ সিকোয়েন্সটাই বেশি হাসিয়েছে, কথিত শ্বশুরকে জড়িয়ে ধরে মান ভাঙ্গানোর প্রচেষ্টার।

ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের খোলসের বাইরে পা বাড়িয়ে এক ধার্মিক যুবকের সহজ স্বীকারোক্তি "হাম বাজরাঙ্গী বালী কি ভাক্ত হ্যায়" দেখতে ভালই লেগেছে। সকল পরিস্থিতিতে সত্য বলার সাহস,পরিচ্ছন্ন মন,সর্বাবস্থায় সৃষ্টিকর্তার প্রতি অগাধ বিশ্বাস দেখতে ভাল লেগেছে। কিন্তু ইসলাম মানেই পীরের দরগা বা মাজার নয়,হোক সেটা পাকিস্তান,বাংলাদেশ,কিংবা পুরো ভারতবর্ষেই। মুসলমানের কোন অপূর্ণ ইচ্ছা পীরের মাজারে মাথা ঝুকানোতে পূর্ণ হবে অথবা লাল-হলুদ সুতোর গিট দেয়া মানত এ,এই উপস্থাপনা নিতান্তই ইচ্ছাকৃত বিকৃতি। আর বলিউডের সিনেমায় কি আইটেম সং,কি কাহিনীসূত্রে পতিতালয়ের উপস্থিতিকে গা সওয়া করার প্রচ্ছন্ন প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে সৃষ্ট সরলতাকে নিয়েও রসিকতা করার ট্রেন্ড চালু হয়েছে।


অনেক বড় বড় অভিনেতা অভিনেত্রীর ভীড়ে নবাগত Harshaali Malthotra এর অভিনয়ই মন কেড়েছে। কারিনা'র উপস্থিতি পুরোপুরি ব্যবসায়িক কারণে। Kick মুভিতে সালমানের "সাত সামান্দার" গানের নাচের মুদ্রা অনেকদিন হাসিয়েছিল,এই মুভিতে প্রেমিকার বাবার শর্ত দেয়ার সিকোয়েন্সে সালমানের এক্সপ্রেশন হাসালো। Nawazuddin Siddiqui তার অভিনয় ক্ষমতার জন্য একটা পর্যায়ে গিয়ে সহশিল্পী থেকে সালমানের প্যারালাল চরিত্র হিসেবে নিজের অবস্থান করে নিয়েছেন।
Bajrangi Bhaijaan এর ২৪৫ কোটি রুপির ঘর পেরুনো Salman Khan Films এর মার্কেটিং টিমের জন্য অত্যন্ত খুশির খবর। তবে পিছনের কুশীলবরা যথার্থ সম্মাননা পেলে সেটা হবে আরো ভাল।

অনেক বছর আগে পারকির চরে এক পিকনিক শেষে বাড়ি ফেরার পথে এক জুনিয়র দুষ্টুমি করেছিল সামান্য। আমার তাতেই একটা ছোট বোনের শখ চেপেছিল। সে শখ উপরওয়ালা আর পূরণ করেননি। জীবনে প্রচুর বড় বোনই জুটলো। ছোট বোন আর না জুটলেও খুব একটা সমস্যা নেই। তবে অন্তত তেমন ভাই যেন হতে পারি- যে ভাইয়ের ভরসায় বোনেরা নিরাপদে নিজের সম্ভ্রম আর অলংকার নিয়ে চলাচল করতে পারবে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া,কিছুই না হারিয়ে। Bajrangi Bhaijaan দেখে জাগ্রত হোক আমাদের মধ্যকার সেই ভাইজান।
[yt|https://www.youtube.com/watch?v=9IljK3W07aw

নতুন রিভিউ পড়ুন
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৫
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×