জাকজমকহীন এবং অনাড়ম্বর বিবাহ
আজ যদি আমরা নিম্নোক্ত আদর্শে আদর্শিত হতাম, তাহলে দেশে খুন, ধর্ষণ, ব্যাভিচার, আত্বহত্যার মত কোন ঘটনা ঘটত না। প্রত্যেক মা বাবা প্রাপ্ত বয়সের সন্তানকে যদি যথারীতি বিয়ে দিত এবং করাত, তাহলে বিশ্বের অর্ধেক অন্যায় হ্রাস পেত। সহজলভ্য বিবাহ-শাদীকে আমরা আজ আকাশচুম্বী বানিয়ে রেখেছি বিধায় আমরা পরস্পর (বরপক্ষ বা কনে পক্ষ) পরস্পরে (কনে পক্ষ বা বর পক্ষ) বিপাকে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছি। আমরা কেউ-ই এ থেকে মুক্ত নই। যৌতুকের বিশালাকারের বিস্তৃত ভেড়াজালে আটকা আছি আমরা সন্তান অভিভাবকরা। এতো নিজের দোষে নিজে দোষী। বর হোক অথবা কনে পক্ষ হোক তাদের সবারই তো কন্যা রয়েছে, তাহলে সাধাসিধে বিয়ে-শাদিটাকে কেন আমরা কঠিন থেকে কঠিনতর করে রেখেছি। এটা কি সন্তানদের উপর এক প্রকার জুলম নয়?
বেশী বলার প্রয়োজনবোধ মনে করছি না, হযরত ফাতিমা রা.এর বিবাহ প্রসূত হযরত মোহাম্মাদ সা. কর্তৃক আমাদের জন্য রেখে যাওয়া আদর্শ হল-
সেই ১৪০০ শত বছর আগের মহামানব হযরত মোহাম্মাদ সা.-এর কলিজার টুকরা হযরত ফাতিমা রা. এর বিবাহের ঘটনা দেখি। এ অনুষ্ঠানে কি হয়েছে। ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, হযরত আলী রা. এর কাছে ১ শ’ ২৫টি রুপা এবং ভেড়ার একটি চামড়া। তাছাড়া একটি পুরনো চাদর, যা ছিল ইয়ামনী। এছাড়া তার কাছে কোন কিছুই ছিল না।এ ছিল বরের পক্ষে কনের উপঢৌকন মাত্র।
পক্ষান্তরে বিশ্ব মানবতার শান্তির দূত স্বীয় প্রিয় জানের জান কলিজার টুকরা হযরত ফাতেমা রা.-এর বিবাহে যা উপহার স্বরূপ হিসেবে দিয়েছেন তা ছিল, শয়নের জন্য মাত্র একটি রশির চৌকি। চামড়ার একটি গদি, যা খেজুরের পাতা দিয়ে ছিল ভরপুর। মাটির একটি লোটা। একটি পানপাত্র। দু’টি মাটির কলস এবং দু’টি যাতাকল। এগুলো ছিল হযরত ফাতেমা রা. এর (কনে) পক্ষ থেকে বিবাহের উপহার বরের প্রতি।
আপনারা ভাবতে পারেন, এগুলো মনে হয় হযরত আলী রা. যৌতুক দাবী করেছেন। না, যৌতুক নয়, বরং রাসুল সা. স্বদিচ্ছায় হযরত আলী রা. কে উপহার স্বরূপ প্রদান করেছিলেন।
স্মর্তব্য যে, হযরত আলী রা. যখন বিবাহের প্রস্তাব রাসুল সা.-এর নিকট উপস্থাপনা করেন, তখন রাসুল সা. কনের অর্থাৎ ফাতিমা রা.-এর জন্য মহর হিসেবে কিছূ আছে কি না জিজ্ঞেস করেন। তদুত্তরে তিনি প্রথমে কিছু নাই বলেন। তখন রাসুল সা. ফের বললেন, বদর যুদ্ধ থেকে গনিমত স্বরূপ প্রাপ্ত যে লৌহবর্মটি তুমি পেয়েছিলে সেটা কোথায়? হা বলে তিনি ইতিবাচক উত্তর দিলেন। আর এর মূল্য তেমন চড়াও ছিল না। পাঠকরা মনে করতেন পারেন, এটার দাম অনেক বেশী হবে। না, উপরে যে ১শ’ ২৫টি রুপার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেটাই তার মূল্য।
এখানে লক্ষণীয় যে, রাসুল সা. কিন্তু কনের পক্ষে মহর আদায় স্বরূপ কিছু চেয়েছিলেন। আর শুধু চাওয়া নয় বরং এটা আদায় জরুরী। যা আমরা বিভিন্ন হাদিছ থেকে জেনেছি।
কিন্তু বিবাহে বরপক্ষ কোন চাওয়ার নিমিত্তে দাবীদাবা থাকবে না। যা রাসুলের কন্যা ফাতিমা রা.এর বিবাহ অুনষ্ঠান প্রমান করে। কি সহজ-সরলতা এবং অনাড়ম্বর বিবাহ অনুষ্ঠান। আনন্দায়ক অনুষ্ঠানের জন্য এর চেয়ে আর কি আদর্শ হতে পারে আমাদের জন্য? এটাই আমাদের নবী সা. এর জীবনী এবং নিজের সন্তানদের জীবনী দিয়ে আদর্শ উপস্থাপন করে রেখে গেছেন। যা আমাদের জন্য অত্যাবশ্যক।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



