ছবিটি বাংলাদেশের একটি অনলাইন দৈনিক থেকে নেওয়া। পতাকা বৈঠকের পর লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, বুড়িমারী স্থলবন্দর সীমান্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশকারী বিএসএস সদস্যের ফেলে যাওয়া শটগান, গুলি এবং ওয়াকিটকি শনিবার ফেরত দিচ্ছে বিজিবি।
স্বেচ্ছায় দেওয়া আর বাধ্য হয়ে দেওয়া মধ্যে মেলা পার্থক্য আছে। কারো সুবিধা বিবেচনা করে আপনি তাকে কিছু দিলে সে আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে। আপনাকে মনে রাখবে। কিন্তু আপনাকে মাইনকা চিপায় ফেলে কেউ আপনার নিকট থেকে কিছু আদায় করলে, সেটাকে সে তার ক্রেডিট হিসেবেই গণ্য করবে। আর তাই সে কখনোই আপনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না। আপনাকে মনে রাখবে না। এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে এটাই ঘটে আসছে।
স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত যা চাইছে আমাদের সরকারগুলা তাই দিচ্ছে। এর ধারাবাহিতা বর্তমান সরকারও অব্যাহত রেখেছে। কিছুদিন পূর্বের কলকাতা সফরে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, "বাংলাদেশ ভারতকে যা দিয়েছে, তা চিরকাল মনে রাখবে।" কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কথার বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে না। ভারতীয়রা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কথার মর্যাদা রাখছে না। তারা নির্বিচারে সীমান্তে হত্যা অব্যাহত রেখেছে। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যাটুকু আমাদের দিচ্ছেনা। একটু আগে 'প্রথম আলো'তে দেখলাম, আসামের এনআরসি থেকে বাদ পড়া ১৯ লাখ ৬ হাজার বাংঙ্গালিকে বাংলাদেশী বলে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিতে চাইছে ভারত! তাদের রাজনৈতিক নেতা, সেনাসদস্য তথা অনেককেই ইদানীং বাংলাদেশের ভূখণ্ড দখল করার দুঃসাহসিকতা দেখিয়ে বক্তব্য রাখছেন। এসবের বিপরীতে আমাদের সরকার নবীর, নিস্তব্ধ। যেনো মুখে প্রতিবাদ জানানোর সাহসটুকো তাদের নেই। সরকারের এহেন নীরবতা একটাসময় আমাদের স্বাধীনতা, সর্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা, অনুপ্রবেশ, খবরদারীর বিপরীতে বিজিবির নীরবতার কারণ | প্রতিবাদের স্মরণীয় দুটো ইতিহাস ও ফলাফল:
১। মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল ফজলুর রহমান ২০০০ সালের ২৯ ই ফেব্রুআরি তিনি বিডিয়ারের ডিজির পদে অধিষ্ঠিত হন। তার সময়কালে; ২০০১ সালের ১৬, ১৮ ও ২৯ এপ্রিল পাদুয়া নিয়ে বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) (বর্তমান বিজিবি) ও ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স(বিএসএফ) মধ্যেকার তিনটি যুদ্ধে অনুষ্ঠিত হয়। এবং বাংলাদেশের বিডিআরের জোয়ানরা বিজয় অর্জন করে। উইকিপিডিয়া, বিবিসি অনলাইনে পাওয়া তথ্যমতে ঐসব যুদ্ধে ভারতের ১০০জন ও বাংলাদেশের ১২ জন সৈন্য শহীদ হয়।
ফলাফল: মেজর জেনারেল ফজলুর রহমানকে দ্রুত পদচ্যুত করেও গাদি ধরে রাখতে পারেনি আওয়ামীলীগ। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের পরাজয় ঘটে। এবং বিএনপির নতুন সরকার গাদিতে বসেই মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল ফজলুর রহমানকে চাকুরীচ্যুত করে। চাকুরীচ্যুত হওয়ার পরে একুশে টিভিকে এক সাক্ষাৎকারে মেজর জেনারেল ফজলুর রহমাম বলেছিলেন,”এক সরকার আমাকে পদচ্যুত করে,অন্য সরকার আমাকে চাকরীচ্যুত করে”।
(২০০১ নির্বাচন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা কিছুদিন আগে কলকাতা সফরকালে বলেছেন, "২০০১–এ তো আমেরিকার নির্দেশে ভারতকে তুষ্ট করেই বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল! হাসিনা বললেন, ভারতকে গ্যাস বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় সেবার অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামি লিগকে জিততে দেওয়া হয়নি।")
২। ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল আখাউড়া সীমান্তে ভারতের সশস্ত্র বিএসএফ সদস্যদের একটি টিম ৬০-৭৫ জন ভারতীয় নাগরিকসহ বাংলাদেশের ৩০০ গজ অভ্যন্তরে 'সীমান্তবর্তী হীরাপুর গ্রামে' অনুপ্রবেশ করে স্থানীয়দের মারধর ও লুটতরাজ শুরু করে। গ্রামবাসী বাধা দিলে বিএসএফ গুলি বর্ষণ শুরু করে; গ্রাম দখল করে রাখে।
বাংলাদেশী নাগরিকদের উদ্ধার এবং বিএসএফ কে বাংলাদেশের ভূখন্ড থেকে বিতাড়িত করার উদ্দেশ্যে উপস্তিত বিডিআর সদস্যদের সাথে নিয়ে লেঃ কর্ণেল কামরুজ্জামান তাৎক্ষণিক সম্মুখ যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেন। এবং তার নেতৃত্বে বিডিআর ও বিএসএফ এর মধ্যে সামনা-সামনি প্রায় ৪/৫ ঘন্টা গুলি বিনিময় হয়। গুলি বিনিময়ের এক পর্যায়ে বাংলাদেশ সীমান্তের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশকারী বিএসএফ এর কোম্পানী কমান্ডার এ্যাসিটেন্ট কমান্ড্যান্ট শ্রী জীবন কুমার গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত এবং কনষ্টেবল কে কে সুরেন্দার গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতরভাবে আহত হন (পরে মারা যান)। তিব্র গুলি বিনিময়ের কারনে সশস্ত্র বিএসএফ দল অন্য কোন উপায় না দেখে কোম্পানী কমান্ডারের লাশ ও আহত কনষ্টেবল (অস্ত্রসহ) কে ফেলে রেখে বাংলাদেশের ভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
ফলাফল: সীমান্ত সংঘর্ষে উপস্থিত বুদ্ধি, অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পরবর্তীতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ লে কর্নেল কামরুজ্জামানসহ ২ জনকে বাংলাদেশ রাইফেলস পদক ৩ জনকে প্রেসিডেন্ট রাইফেলস পদক খেতাবে ভূষিত করেন যা বিডিআর এর সর্বোচ্চ সম্মান পদক। এবং ৮ জন কে ডিজি’র কমেনডেশন মেডেল প্রদান করা হয়।
(২০০৯ সালের বিডিয়ার বিদ্রোহের পূর্বের দিন (২৪ শে ফেব্রুয়ারী ২০০৯ সালে) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক রাইফেলস সপ্তাহ- ২০০৯ প্যারেড শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে বিডিআর এর সর্বোচ্চ পদক “বিআরএম" নিজ হাতে লে কর্ণেল (অব: ) কামরুজ্জামানকে পরিয়ে দেন। তার পরদিন ২৫ শে ফেব্রুয়ারির২০০৯-এ ঘটা জঘন্য হত্যাকাণ্ড থেকে ভাগ্যগুণে বাংলাদেশের এই সীমান্ত রক্ষী, সফল যোদ্ধা প্রাণে বেচে যান।)
উপরে উল্লিখিত ঘটনাগুলোর প্রথমটাতে ভারতে অলৌকিক ক্ষমতার ছাপ স্পষ্ট। (একদল পদচ্যুত করে খুশি করতে চেয়েছে তো আরেকদল ক্ষমতায় গেলে কালপ্রিটকে চাকুরীচ্যুত করার অঙ্গীকার করেছে।)
দ্বিতীয় ঘটনার ৪ বছর পর, 'বিডিয়ার বিদ্রোহের নামে ৫৭ সেনা সদস্য হত্যার' পেছনেও ভারতের অলৌকিক ক্ষমতার ছায়া থাকবার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
লক্ষণীয়, শেষের ১৪ বছরে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে সীমান্তে আলোচিত কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। অথচ পত্রিকায় প্রায়ই বিএসএফের অবৈধ অনুপ্রবেশ, হত্যা, নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হচ্ছে। এসব ঘটনার বিপরীতে বিজিবি ও সরকারী কর্মকর্তারা দিনেরপর দিন পতাকা বৈঠক করে যাচ্ছেন। তাদের কর্মকান্ড দেখে মনে হচ্ছে, সব নিরবে সহ্য করার অঙ্গীকার করেছেন!
দেশের স্বার্থ পরিপন্থী গাদি রক্ষার এই এই অসুস্থ রাজনীতি আর কতদিন?!
[তথ্যসূত্র: frontinebd.com, বিবিসি, প্রথম আলো এবং উইকিপিডিয়া]
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৩