না সে দিন দেখার সৌভাগ্য আমাদের হবে না বোধহয়। কেননা আরও বাকি মাত্র ২৯০০ বছর।
কিভাবে চলুন দেখি……………………………………………
হিপার্কাসঃ গ্রীক এই জ্যোতির্বিদের জন্ম বিথাইনিয়ার অন্তর্গত নাইসেইয়া নগরে । তিনি ছিলেন সে যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্যোতির্বিদ এবং ত্রিকোণমিতির জনক ।
তিনিই তৎকালিন ৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টার সৌরবছরের ধারণা ভেঙ্গে দিয়ে ত্রিকোণমিতির সাহায্যে বের করেন যে বছর আসলে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট ১২ সেকেন্ডে ।বর্তমান সূক্ষ যন্ত্রপাতির সাহায্যে হিসাব করে দেখা গেছে যে , বছরের প্রকৃত দৈর্ঘ ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড । হিপার্কাস সূর্যের সাথে পৃথিবীর কোন মাপতে ভুল করেছিলেন বিধায় ৬ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে্র গোলমাল হয়েছিল । সে যাই হোক তার এ আবিষ্কার গুরুত্বের সাথে নেন নি রোমান সম্রাটেরা যখন তারা পঞ্জিকার সংস্কার করেন । আর তাতেই বাঝে যত গোল………
জুলিয়াস সিজারঃ খ্রীস্টপূর্ব ৪৬ অদ্বে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার পঞ্জিকার সংস্কার করেন। তিনি এবং তার সহকারী জ্যোতির্বিদ সোসিজেনিস ৩৬৫ দিনে বছর ঠিক করলেন এবং ৪ বছর পর বছর ৩৬৬ দিনে ঠিক করলেন। অর্থ্যাৎ তারা ৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টায় ১ বছর ধরলেন হিপার্কাসের আবিষ্কারের কোন দামই দিলেন না। তখন নিয়মানুযায়ী বছরে ৭ মাস ৩০ দিনে এবং ৫ মাস ৩১ দিনে হওয়ার কথা কিন্তু মাসের ক্রম পরিবর্তনের সাথে সাথে জুলিয়াস সিজার ৫ম মাস কুইন্টালিস কে জুলিয়াস নাম দেন । তা এখন বছরের ৭ম মাস জুলাই । সিজার এছাড়া ঘোষনা দেন তৎকালীন একাদশ মাস জানুয়ারিয়াস থেকে বছ্র গণনা শুরু হবে।পরবর্তী রোমান সম্রাট অগাস্টাস পুর্ববর্তী ষষ্ঠ মাস সেক্সটিলিস এর নাম পাল্টে রাখেন অগাস্ট। দুই সম্রাটই নিজেদের নামের মাস কে ৩১ দিন দেন । এবং এই দাবির রেশ গিয়ে পড়ে বেচারা ফেব্রুয়ারি মাসের উপর এবং তা গিয়ে দাঁড়ায় ২৮ দিনে । হয়ত এই অনাচারের প্রতিকারের জন্যই ৪ বছর পরের extra ১ দিন গিয়ে জোটে ফেব্রুয়ারি মাসের ভাগ্যে।
পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরীঃ নতুন এই পঞ্জিকায় হিপার্কাসের আবিষ্কার আমলে না নেওয়ায় প্রতিবছর সূর্য পঞ্জিকা থেকে আগিয়ে যাচ্ছিল । ১৫৮২ খ্রীস্টাব্দে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী পঞ্জিকার দিনকে বিষুবায়নের সঙ্গে মিল রেখে যথাস্থানে আনার জন্য পঞ্জিকায় ১০ দিন বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করেন । ১৭৫২ সালে ইংল্যান্ডে এই পঞ্জিকা চালু হয় । ততদিনে ১০দিনের জায়গায় ১১ দিন বাদ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। তাই ১৭৫২ খ্রীস্টাব্দে ২রা সেপ্টেম্বরের পর দিন হল ১৪ সেপ্টেম্বর । সাধারণ জনগন এত হিসাব নিকাশ না বুঝে দাঙ্গা বাধিয়ে দিল । জীবনের ১১ দিন নেয়ে ছিনিমিনি হু সোজাকথা না বাপু । রাশিয়াতে এই সংস্কার করা হ্য় গত শতকে ১৩ দিন বাদ দিয়ে । গ্রেগরী মহাশয় দেখেন যে ৩৬৫ দিনে বছর ধরলে ৪ বছরে ২৩ ঘন্টা ১৫ মিনিট ৪ সকেন্ড সময় অতিরিক্ত থেকে যায় আবার ১ দিন বাড়ালেও কিছুটা অতিরিক্ত বাড়ানো হয় ।এর থেকে হিসাব করে দেখা যায় যে ৪০০ বছরে মোট ৯৬ দিন ২১ ঘন্টা ৫ মিনিট ৪০ সেকেন্ড বা প্রায় ৯৭ দিন বাড়ানো যায় । এই হিসাবে ২১০০,২২০০,২৩০০ সাল লিপইয়ার হবে না তবে ২৪০০ সাল হবে । অর্থাৎ কোন সাল ১০০ দ্বারা বিভাজ্য হলে লিপইয়ার হতে তাকে ৪০০ দ্বারা বিভাজ্য হতে হবে। কিন্তু এই হিসাবেও গোলমাল আছে কেননা এখানেও ৪০০ বছরে ২ ঘন্টা ৫৪ মিনিট ২০ সেকেন্ড ঘাটতি রয়ে যায় । সে হিসাবে প্রতি ৩৩০৫ বছরে ১ দিন কম পড়ে । পোপ গ্রেগরীর এই সংস্কার ১৬০০ সাল থেকে কার্যকর ধরে ৪৯০৫/৪৯০৪ সালে ১ দিন ঘাটতি পুরো হয়ে যাবে তাই তখন হয় ৪৯০৪ অথবা ৪৯০৮ সালকে ননলিপইয়ার ধরতে হবে ।
এখন যদি ৪৯০৪ সালের লিপিয়ার বাদ দেওয়া হয় তবে ৪৮৯৬ সালের পর লিপইয়ার হবে ৪৯০৮ সালে ১২ বছর পর আর নইলে পরপর দুইবার ৮ বছরে লিপইয়ার ৪৮৯৬ --- ৪৯০৪---৪৯১২ ।
তবে ততদিন যদি মাতা ধরণী জীবিত থাকেন আরকি……।
রেফারেন্সঃ
গনিত শাস্ত্রের ইতিহাস --- কাজী মোতাহার হোসেন