শুধুমাত্র অর্থের লোভে জাতীয় ক্রিকেটারদের গণঅবসর-কথাটির সঙ্গে আমি একমত হতে পারছি না। অর্থের চাহিদা সবার আছে। কেউ হাত পেতে ভিা করে অর্থ আয় করেন। আবার কেউ শরীর বেঁচে। মাঝে অনেকের আয়ের ধরণ একেক রকম। কিন্তু জাতীয় ক্রিকেটারদের গণঅবসর শুধু অর্থের কারণে এটা মানতে কষ্ট হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় ক্রিকেটারদের প্রতি যে অবিচার করা হয়েছে, সেটা কি একটুও দায়ী নয়। আইসিএল খেলতে উৎসাহ কী আমাদের দেশের ক্রিকেটাররা দেখাননি। একটি জাতীয় দৈনিকে লেখা হয়েছে- ‘মাঠে টানা ব্যর্থতায় চরম ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়েই চলছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। গতকাল (রোববার) এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মাঠের বাইরের এক বিপর্যয়। আকষ্কিকভাবেই জানা গেল বাংলাদেশের ১৪ ক্রিকেটার যোগ দিচ্ছেন ভারতের বিতর্কিত ও বিদ্রোহী ক্রিকেট লীগ বলে পরিচিত পাওয়া ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগে (আইসিএল)। এদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে চুক্তিতে থাকা সাত ক্রিকেটার হাবিবুল বাশার সুমন, শাহরিয়ার নাফীস, আফতাব আহমেদ, ফরহাদ রেজা, নাজিমউদ্দিন, ধীমান ঘোষ, মোশারফ হোসেন রুবেল। আইসিএলে খেলতে প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে তারা অবসর নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিসিবিকে। এদের সঙ্গে রয়েছেন মোহাম্মদ রফিক, অলক কাপালি, তাপস বৈশ্য, মোহাম্মদ শরীফ, মঞ্জুরুল ইসলাম, গোলাম মাবুদ ও বিসিবি একাডেমী দলের হয়ে শ্রীলংকা সফররত ওপেনার মাহবুবুল করিম মিঠু। চরম গোপনীয়তার মধ্যে গত কয়েক মাস ধরে আইসিএল কর্তৃপরে দেওয়া প্রস্তাব নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে গেছেন তারা। এরই ফল হিসেবে গতকাল মিরপুর স্টেডিয়ামে বিসিবির অফিস খোলার আগেই সেখানে হাজির হয়েছিলেন বোর্ডের সঙ্গে চুক্তিতে থাকা ছয় ক্রিকেটার। নাজিমউদ্দিন আছেন ঢাকার বাইরে। সে কারণে তিনি ছাড়া আর সবাই চুক্তি থেকে আগামী কিছুদিনের জন্য মুক্তি পাওয়ার আবেদন জমা দিয়ে এসেছেন বিসিবির রিসেপশনিস্টের কাছে। ক্রিকেটারদের এই সাময়িক অবসর গ্রহণের ইচ্ছার সঙ্গেই শুরু বাংলাদেশের ক্রিকেটে সম্ভাব্য এক অন্ধকার যুগের। অর্থের প্রলোভনে দেশের ১৪ ক্রিকেটার ক্রিকেটকে অন্ধকার পথে ঠেলে দিয়ে বনে গিয়েছেন বিদ্রোহী ক্রিকেটার। গত বছর থেকে শুরু হওয়া আইসিএল নামের আসরটি বিদ্রোহী লীগ নামেই পরিচিত। সে আসরে খেলা ক্রিকেটাররাও বিদ্রোহী। আইসিএলে যোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে ঘরোয়া ও জাতীয় এবং দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হতে হয় ক্রিকেটারদের। যেমনটি গত বছর হয়েছিলেন পাকিস্তানের আবদুর রাজ্জাক, ইমরান ফরহাত, তৌফিক ওমর ও ইমরান নাজিররা। বিপুল পরিমাণ অর্থ কামানোর বিনিময়ে হারিয়ে গেছেন তারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। সেই পথে এবার পথচলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জাতীয় দলের সাত ক্রিকেটারসহ বাংলাদেশের চৌদ্দ ক্রিকেটার।
অবসরের সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েই মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন বিদ্রোহী ক্রিকেটারদের কয়েকজন। সবার কথাতেই একই সুর। ‘খন্ডকালীন অবসর’ নেওয়ার ইচ্ছা জানানো দুই সিনিয়র ক্রিকেটার জানালেন, আমরা খুব কষ্ট নিয়ে বলছি, আমরা বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলব না। এর চেয়ে বড় শাস্তি আর কী হতে পারে? বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা এমনিতেই বাকপটু। দেশের সঙ্গে বিশ^াসঘাতকতার পর্যায়ের কাজ করেও তাদের বাকপটুতার কমতি নেই। জাতীয় দলে নিয়মিত খেলার সুযোগ না পেতেই সিদ্ধান্ত নিলেন অবসরের।’
পত্রিকার সংবাদটির অনেক স্থানে আপত্তি রয়েছে। একজন খেলোয়ার দলে থাকা নিয়ে যে সংগ্রাম করেন তার কাছে আইসিএলের প্রস্তাবটা অবশ্যই বড় হয়ে দেখা দেবে। কেকনা, আমাদের দেশের ক্রিকেট নিয়ে যে রাজনীতি হয়, তার কোপানলে পড়ে অনেকের অকাল মৃত্যু হয়েছে। শুধুমাত্র বয়সের অজুহাতে সিনিয়রদের বসিয়ে রাখা হয়। একটি-দুটি ম্যাচ খেলানোর পর মাঠের বাইরে। খেলোয়ারদের সুযোগ না দিয়ে নির্বাচকরা তাদের কর্তৃত্ব ফলানোর চেষ্টায় মত্ত। কই আমাদের পাশের দেশ ভারত শচিনকে তো ফেলে দিচ্ছে না। সৌরভ, দ্রাবিররা এখনো স্বপ্ন দেখেন দলে ফেলার।
আসলে টাকার জন্য নয়, আমাদের দেশের ক্রিকেট নির্বাচকদের কারণে এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন জাতীয় ক্রিকেটাররা। নির্বাচকদের এ নীতি বদলাতে হবে। সুযোগ দিতে হবে খেলোয়ারদের। তাহলেই তারা অর্থের প্রলোভন ত্যাগ করে থাকতে পারবেন। তা না হলে এভাবে বারে বারে ক্রিকেটার সঙ্কটে পড়বে দেশ। আমরা চাই দেশ এ সঙ্কটময় পরিবেশ কাটিয়ে উঠুক। নির্বাচকদের সুধরে নেয়ার সুযোগ দিতে অবসরের ঘোষণা দেয়া খেলোয়াররা আবার ফিরে আসুক জাতীয় দলে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৪:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




