মায়ের বাল্যবান্ধবী আমাকে ফেসবুকে মেসেজ পাঠালেন। ওনার সাথে বাস্তবে আমার দেখা হয়নি বললেই চলে। তবে ফেসবুকের কল্যানে তিনি কি করছেন, খাচ্ছেন-দাচ্ছেন, কোথায় যাচ্ছেন এসব নিয়মিতই চোখে পড়তো। মাঝে মাঝে ওনার করা পোস্টে লাইক দিলেও কমেন্ট করিনি খুব একটা। 'মায়ের বাল্য কালের বান্ধবী' ব্যতীত খুব কাছের মানুষের মত সম্পর্ক ছিলনা কোন। তাই আন্টি কি মনেকরে হঠাৎ ফেসবুকে মেসেজ দিলেন এসব ভাবতে ভাবতে মেসেজ ওপেন করলাম।
মেসেজ পড়ে কিছুটা অবাক হলাম। আন্টি মাত্র তিনটি বাক্য লিখেছেন।
'কেমন আছ?
তোমার জন্য বিয়ের পাত্রী দেখতে চাচ্ছিলাম
যদি মতামত জানাও।'
বিয়ের ব্যাপারে কদিন ধরে বাবা মায়ের কাছ থেকেও কথা শুনছিলাম। কিন্তু আন্টির মুখে হঠাৎ কথাগুলো শুনে প্রথমে কিছুটা অবাক হয়েছি। মা তার ছেলের বৌ খুঁজতে বান্ধবীর সাহায্যের আশ্রয় নিয়েছে কিনা ঠিক ঠাহর করতে পারলাম না। আন্টি প্রফেশনাল ভাবে ঘটক নন। বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন। শুনেছি যারা দুজন মানুষকে বিয়ে নামক এ পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ করিয়ে দেন, তারা বেশ সওয়াবের অংশীদার হন। এজন্যেই কিনা জানিনা, মধ্য বয়সের পর থেকে অনেক নারী পুরুষ কে আমি প্রফেশনাল ঘটক না হয়েও প্রফেশনালী ঘটকালী করতে দেখেছি। কিন্তু এরা টাকার জন্যে কখনও ঘটকালী করেন না। ঐযে বলেছি সওয়াবের আশায় করে থাকেন হয়ত। তবে আমার ধারনা একটু ভিন্ন। আমার মনেহয় যে, যখন একজন মানুষ অপর দুজন মানুষ তথা দুটি পরিবার কে বিয়ে নামক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে এক করতে পারেন, তখন এক করে দেয়া সেই (ঘটক) মানুষটির মনে এক ধরনের গভীর আত্মতৃপ্তি কাজ করে। বিয়ে করে সংসার শুরু করা মানুষ দুটি সুখে থাকলে এক করে দেয়া মানুষগুলোও মনে সুখ অনুভব করেন। এবং অনুরূপভাবে তাদের দুঃখ কষ্টে সেই এক করে দেয়া মানুষগুলোও ব্যথিত হন। এটা আমার ব্যক্তিগত ধারনা। তবে প্রফেশনাল ঘটকদের ক্ষেত্রেও একই রকমের অনুভূতি কাজ করে কিনা এ ব্যাপারে আমার সঠিক ধারনা নেই।
যাহোক, আন্টির মেসেজে ফিরে আসি। মেসেজটা পড়ার পর কি উত্তর দিব ভাবছিলাম। কেননা বিয়ের ব্যাপারে নিজের বাবা মায়ের সাথেই এখনও পর্যন্ত কোন ফলপ্রসূ আলাপ হয়ে উঠেনি। ওনারা মাঝে মাঝে বললে, আমি এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দিতাম এ পর্যন্তই।
নিজেই এখনও গুছিয়ে উঠতে পারিনি। তার উপর এত ব্যস্ত জীবন! বিয়ে করার ইচ্ছা নেই তা নয়। কিন্তু করবটা কখন! সময়ই তো নেই। আন্টির কথার 'হ্যা/না' কিছু একটা উত্তর দিতে হবে। কিছুটা বাংলা সিনেমার মত করে বললাম, 'আন্টি আমি থাকি দূর পরবাসে। আপনারাই তো আমার একমাত্র ভরসা। আপনারা যা ভাল মনে করেন।'
এক বিন্দুও মিথ্যে বলিনি অবশ্য। নিজের মোরদে যেহেতু একলা থেকে দোকলা হতে পারিনি এত বছর পর্যন্ত, তাই পরিবার পরিজনের কাছে নিজেকে সপে দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। আন্টি বললেন, 'তুমি কোন চিন্তা করোনা। আমার পরিচিত খুব সুন্দরী একটা মেয়ে আছে। ফেসবুকে কথা বলে দেখবে?'
তারমানে আন্টির ধারনা আমি চিন্তা করছিলাম? সত্যি বলতে এ যুগেও যারা সিঙ্গেলের খাতায় নাম লিখিয়ে রেখেছে ওদের আসলে চিন্তা করারই কথা। বললাম 'ঠিক আছে আন্টি, কথা বলে দেখা যেতে পারে।'
আমি এর আগে কোন মেয়ের সাথে এভাবে বিয়ের উদ্দেশ্যে কথা বলিনি। তাই দেখে কিনা জানিনা, হঠাৎ কেমন রোমাঞ্চ অনুভূত হতে লাগল মনে। আন্টি বলেছেন মেয়েটির সাথে ফেসবুকে পরিচয় করিয়ে দিবেন। তাছাড়া আন্টির কথামতে মেয়েটি সুন্দরী। যদিও সব ঘটকরাই পাত্র পাত্রীদের রাজপুত্র আর রাজকন্যার সাথে তুলনা করে থাকে। তবুও আমি মনে মনে ভাবছি, আহা! মেয়েটি নাজানি কত সুন্দরই হবে! কেন জানিনা বেশ ভাল লাগছে মনে। আমি মেয়েটির নাক-কান, চোখ-মুখ কল্পনায় বারবার নিজের মত করে ভাবছি কদিন ধরে। হঠাৎ কেমন অদ্ভুত মনে হতে লাগল নিজের এমন আচরণ দেখে। একটা মেয়ে যাকে দেখা তো দূরে থাক, যার নামটা পর্যন্ত জানিনা! তার প্রেমে পরে যাচ্ছি আমি? এমনটা কেন হচ্ছে! আমার কোন গার্ল ফ্রেন্ড নেই বলে? নাকি আমি বড্ড একা বলে? এসব ভাবনা এসে মনটা আবার কেমন দমে গেল। কিন্তু তবুও আন্টির একটি কথা আমার মনে গেঁথেই রইল। একটি সুন্দরী মেয়ের সাথে আন্টি আমাকে পরিচিয় করিয়ে দিবেন। আমাকে কি তাহলে সুন্দরের লোভ পেয়ে বসেছে! নাকি আমি কারও কাছে নিজেকে সপে দেয়ার জন্য আকুল হয়ে আছি । নিজের প্রশ্ন নিজেই উত্তর মেলাতে পারছিনা। এখন শুধু অপেক্ষার পালা। নাম পরিচয় না জানা সেই মেয়ের সাথে কথা বলার জন্যে। এ অপেক্ষার জন্যে কেও কাউকে কোন কথা দেয়নি। কোন ধরাবাঁধা সময় নেই। তবুও কেমন যেন অস্থির হয়ে আছে মন। শেষমেশ যদি মেয়েটির সাথে কথা হয়, দেখা হয় আর মেয়েটি যদি আমার মনের মত না হয়, কিংবা আমার মনের মত হলেও আমি যদি তার মনের মত না হই তবে কি হবে ওসব সম্পর্কে বিন্দুমাত্র জানিনা। আর জানতেও ইচ্ছা করছেনা। শুধু এখনকার অনুভূতিগুলো গুছিয়ে রাখার মত। একমাত্র ভরা মনেই এই অনুভূতি পাওয়া যায় বলে আমার মনেহয়। মনটা কাউকে অর্ধেক কিংবা পুরোটা দিয়ে দিলে এরকম পরিস্থিতে পৃথিবীটা অনেক পর মনেহয় বুঝি? জানিনা আমি। আমার মন ভরা চাঁদের মত পূর্ণ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৪৫