সে আপনার কৈশোরের বন্ধু ছিলো, আপনার পকেট মানি ছিলো তার দৈনন্দিন চাহিদার উৎস, আপনার পরিশ্রম ও মেধায় রচিত নোটগুলো ছিলো তার শ্রেণী পরিক্ষা পাশের একমাত্র অবলম্বন। কখোনো কোনো দাওয়াত বা উৎসবে আপনার সুন্দর কোনো পোশাক ধার নিতে বিন্দুমাত্র সংকোচ ছিলোনা তার। এমনকি তার পরিবারিক অনটনে একটু স্বস্তি দিতে আপনাকে অনেক সময় অভিভাবকের ভুমিকাও নিতে হয়েছে । একসময় চারিত্রিক সামাজিক পঙ্কিলতার গা ভাসানো থেকে বন্ধুটিকে উদ্ধারে আপনার প্রচেষ্টা সফল না হওয়ায় দুঃখ ভারে যাকে পরিত্যাগ করতে হয়েছে। সেই হারিয়ে যাওয়া বন্ধুটি যখন অনেক বছর পর চকচকে হাল ফ্যাশনের গাড়ী থেকে নেমে আপনার যুগাধিক সময়ে প্রতিদিনের বিশ্বস্থ ভেস্পাটির পথ আগলে দাঁড়িয়ে বলে, কিরে কি খবর ! এই দুই চাকা থেকে আর উন্নতি করতে পারলিনা, অনেক বছর পর দেখা বন্ধুটির প্রথম উচ্চারিত তাচ্ছিল্যের ভাষাকে পাশ কাটিয়ে আপনি যখন আনন্দিত, তখন সে তার বিজনেস কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বলল সময় নাই দোস্ত একদিন আসিস আমার অফিসে কফি খেতে। সে তার দামী গাড়ীতে উঠে তাচ্ছিল্যে ভরা দৃষ্টিতে একটা হাসি দিয়ে বিদায় নিলো। আপনি তার ভুল বানানে ছাপা পরিচিতির ফিরিস্তি দেয়া কাগজের টুকরোটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলেন, Md. Rukib Kundokar ,1st clas govment contactar. ঘটনার আকস্মিকতায় ভুলেই গিয়েছিলেন আপনার সাথে ছেলে আছে তাকে নিয়ে টিউশনে যেতে হবে। কে ছিলেন লোকটা বাবা? তোমার বন্ধু? গাড়ীটা অনেক দামী তাইনা বাবা? একনাগাড়ে প্রশ্ন করে যেতে থাকে আপনার সন্তান। আর আপনি আপনার জরাজীর্ণ দু চাকার বাহনটি চালু করে ভাবতে থাকেন। সময় কত বদলে দেয় মানুষকে, সন্তানকে টিউশনে পৌঁছে দিয়ে, বন্ধুটির দেয়া কার্ডটি আরেকবার বের করে হাতে নেন আপনি,ভাবেন জানা হোলো না ওর মা কেমন আছেন যিনি ছেলেকে অন্ধকার জীবন থেকে ফিরিয়ে আনতে আপনাকে কান্নাজড়িত অনুনয় করেছে কতবার,কেমন আছে ওর বড় বোনটি যৌতুকের বলি হয়ে যাকে ফিরে আসতে হয়েছিলো একটি নবজাতককে নিয়ে। কেমন আছে তনু, ওর ছোটো বোন একিই জামা পড়ে স্কুলে যেতে হয় বলে পড়াশোনাই ছাড়তে চেয়েছিলো। অফিসে গেলে হয়তো জানা যেতো, মনে হয় ভালোই আছে সবাই, ওদের সব অভাব, ক্লেশ, দায়দেনা, সব কেটে গেছে নিশ্চয়ই, বড় বোনটির আবার বিয়ে দিয়েছে,ছোটোটির ও একটা ব্যাবস্থা হয়েছে, মাকে আর বাড়ী ভাড়া বা রান্না নিয়ে আর মুষড়ে থাকতে হয় না, বিয়ে করেছে, বাড়ী করেছে সন্তান হয়তো বিখ্যাত কোনো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে । কিংবা কে জানে অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর হয়তো খবর পেতেন স্যার আজ একটু ব্যাস্ত আরেকদিন আসতে বলেছেন,আর আপনাকে কফি দিতে বলেছেন। আস্তে করে কার্ডটি হাত থেকে ছেড়ে দিলেন আপনি,সামান্য সময় বাতাসে ভেসে হঠাত করেই আছড়ে পরলো সেটা পাশের সিটি কর্পোরেশনের নর্দমায়, ভেসে গেলো দ্রুত। উপলব্ধি করলেন বন্ধুটির ঠিকানা মনে রাখার প্রয়োজন নেই আপনার । কারন বন্ধু হিসেবে বোধকরি অনেক আগেই হারিয়েছেন তাকে, সে এখন সমাজের অনেক ওপর তলার মানুষ । জীবন তার কাছে ধরা দিয়েছে অন্যভাবে,যা আপনার চলার পথের সাথে সামন্তরাল নয় । এর চেয়ে মনের ভাবনায় যা তৈরি করা যায় তাই ভালো । ভেবে নিন ভালো আছে সবাই, ভালো থাকুক সবাই।
আলোচিত ব্লগ
বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি
মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন
=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=
০১।
=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।
পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।
জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন
সমস্যা মিয়ার সমস্যা
সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।
তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন