somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইংরেজি নববর্ষের আগমন

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইংরেজি নববর্ষ আজ আর পাশ্চাত্যদের একার সম্পদ নয়- গোটা পৃথিবী বলতে কি নবর্ষের আগমনকে উল্লাসে আর উন্মাদনায় প্রকম্পিত করে। জানুয়ারির ১ তারিখে নববর্ষ উদযাপন করার রীতিকে মোটামুটি নতুনই বলা চলে। কারণ বেশীদিন হয় নি যখন থেকে এই তারিখ সর্বজনীনভাবে নববর্ষ হিসেবে গৃহীত হয়ে আসছে। এই রীতিটি এসেছে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার হতে যেখানে বছরের শুরু হয় জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে। বিশ্বের যেসকল দেশ এই ক্যালেন্ডারকে সিভিল ক্যালেন্ডার হিসেবে গ্রহণ করেছে, তারা সবাই ইংরেজি নববর্ষ পালন করে থাকে। তবে অনেক দেশই ক্যালেন্ডারটি গ্রহণ করার পূর্বে নববর্ষের রীতিটি গ্রহণ করেছে। যেমন, ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে স্কটল্যান্ড এবং ১৭৫২ সাল থেকে ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং ব্রিটিশ কলোনিগুলো নববর্ষের রীতি অনুসরণ করতে শুরু করে। কিন্তু তারা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সাথে পরিচিত হয় ঐ বছরের সেপ্টেম্বরে!
বিভিন্ন সূত্রমতে, আধুনিক বিশ্বে নববর্ষ হিসেবে পহেলা জানুয়ারিকে প্রচলিত করার ব্যাপারে “রিপাবলিক অফ ভেনিস” (দেশটি ১৭৯৭ সালে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ তারা ১৫২২ সাল হতে এ দিনকে বছরের প্রথম দিন হিসেবে গণনা করতে শুরু করে। এরপর ১৫৫৬ সালে স্পেন, পর্তুগাল; ১৫৫৯ থেকে প্রুশিয়া, সুইডেন; ১৫৬৪ তে ফ্রান্স; ১৭০০ সাল হতে রাশিয়া এই রীতি অনুসরণ শুরু করে।

পেছনের ইতিহাসঃ
প্রথম রোমান ক্যালেন্ডারটি ছিলো চন্দ্রকেন্দ্রিক এবং এতে মাস ছিলো দশটি। এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বছরের প্রথম মাসটি ছিলো মার্চ। তাই তখন মার্চের ১ তারিখকে বছর শুরুর দিন হিসেবে উদযাপন করা হতো। ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমের রাজা নুমা পম্পিলিয়াস এই ক্যালেন্ডারে নতুন দুটি মাস যুক্ত করেন – জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি। এরপর Roamn Consul-এর ইচ্ছানুযায়ী বছরের প্রথম মাস মার্চ হতে জানুয়ারিতে পরিবর্তন করা হয়। তবে জানুয়ারির ১ তারিখকে নববর্ষ হিসেবে চালু করতে বেশ সময় লাগে। এটি প্রথম চালু হয় ১৫৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, রোমে। তখন এটি অনিয়মিতভাবে পালিত হতো। কারণ তখনো বিভিন্ন স্থানে জনগণ মার্চের ১ তারিখকে নববর্ষ শুরুর দিন হিসেবে ব্যবহার করতো। কিন্তু ৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমসম্রাট জুলিয়াস সিজার যখন সূর্যকেন্দ্রিক “জুলিয়ান ক্যালেন্ডার” চালু করেন, তখন জানুয়ারির ১ তারিখকেই নববর্ষের প্রথম দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মূলত তখন থেকেই এই রীতি ছড়িয়ে পড়ে।

রোম সম্রাট জুলিয়াস সিজার নতুন বছর হিসেবে মার্চ মাসের পরিবর্তে জানুয়ারি মাসকেই সাব্যস্ত করেছিলেন। জানুয়ারির প্রথম দিনকেই তিনি নতুন বছরের উৎসবের দিন হিসেবে গণ্য করলেন দেবতা 'জানুষ'-এর নামানুসারে খ্রিস্ট জন্মের ৪৬ বছর আগে। দেবতা 'জানুষ'-এর দুটো মুখ ছিল। এক মুখ ছিল সম্মুখভাগে, অপরটি পেছনে। তাকে আকাশ ও পাতালের দ্বাররক্ষাকারী দেবতা বলে মনে করা হ'তো। সম্রাট সিজার দেবতা 'জানুষ' এর সম্মুখভাগের মুখকে নতুন বছরের 'দরজা' এবং পশ্চাদভাগের মুখকে বিদায়ী বছরের প্রতীক বলে গণ্য করলেন।

সিজার জানুয়ারির প্রথম দিনকে উৎসবের দিন বলে ঘোষণা দিয়ে বিদ্রোহী ইহুদি সেনাদের এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে সম্পূর্ণভাবে প্রদমিত করেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে জানা যায় যে সে দিন রোমের রাজপথ রক্তের বন্যায় ভেসে গিয়েছিল। পরবর্তীকালে রোমান পৌত্তলিকেরা পানোৎসবে মত্ত হয়ে নববর্ষের এই প্রথম দিনকে উদযাপন করত

খ্রিস্টান ধর্ম বিস্তার লাভ করলে পৌত্তলিকদের বিভিন্ন ছুটির দিনগুলোকে কখনো গ্রহণ এবং কখনো বর্জন করা হয়। এ সময়ের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা যীশুখ্রিস্টের মাতা মেরী কর্তৃক দৈব গুণে গর্ভবতী হওয়া এবং ২৫ ডিসেম্বর যিশুখ্রিস্টের জন্ম দিনকে বছরের প্রারম্ভের দিন বলে গণ্য করতো। কিন্তু বিজয়ী যোদ্ধা উইলিয়াম যখন ১০৬৬ সালে ২৫ ডিসেম্বর রাজা হলেন, তখন তিনি যিশুখ্রিষ্টের খৎনা দেবার দিনকে বছর শুরুর দিন হিসেবে জানুয়ারির ১ তারিখকে মনোনীত করেন। কিন্তু সমগ্র খ্রিস্টানজগৎ উইলিয়মের এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করলে ২৫ ডিসেম্বরকেই নতুন বছরের প্রারম্ভের দিন হিসেবে চিহ্নিত করা হলো। পোপ গ্রেগরী অষ্টমের আমলে (১৫০২-১৫৮৫) নতুন বছর হিসেবে জুলিয়াস সিজারের নির্ধারিত ১ জানুয়ারিকে নতুন বছরের প্রথম দিন হিসেবে গণ্য হলো। তখন থেকেই সমগ্র খ্রিস্টান জাতি জানুয়ারি মাসের প্রথম দিনকে বছরের শুরুর দিন মনে করে উৎসবে-আনন্দে মত্ত হয়ে ওঠে। অতঃপর বিজয়ী যোদ্ধা উইলিয়মের মৃত্যুর ৫০০ বছর পরে পোপ গ্রেগরী অষ্টমের সময় প্রাচীন সৌরক্যালেন্ডার (জুলিয়ান ক্যালেন্ডার) সংশোধন করে নতুন ক্যালেন্ডার তৈরি করা হয়। এই ক্যালেন্ডারের নাম রাখা হয় গ্রেগরি ক্যালেন্ডার। গ্রেগরি ১৫৭৭ সালে জুলিয়াস সিজার কর্তৃক প্রবর্তিত জানুয়ারি মাসের প্রথম দিনকেই বর্ষবরণের দিন হিসেবে নির্ধারিত করেন। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে এই ক্যালেন্ডার চালু রয়েছে।

শুভ নববর্ষ ২০১৪
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:০১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×