মাওলানাদের ফতোয়ার শিকার হয়ে দোররার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে হাসপাতালে যেতে হয়েছে কুমিল্লার এক তরুণীকে।
মেয়েটির অপরাধ তিনি সন্তানকে পিতৃ পরিচয় দিতে চেয়েছিলেন।
দাউদকন্দির বিটেশ্বর ইউনিয়নের একটি গ্রামে গত ২২ মে মৌলভীদের ফতোয়ায় ওই তরুণীকে মিথ্যা বলে পিতৃত্বের দায় চাপানোর অভিযোগ তুলে ৩৯টি দোররা মারা হয়।
আহত তরুণীকে প্রথমে গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং অবস্থার অবনতি হলে সোমবার দুপুরে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
তরুণীর পিতা ছয়জনকে আসামি করে দাউদকান্দি থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এদের মধ্যে ফতোয়াদাতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ওই তরুণী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদকের কাছে ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, "সন্তানের বাপের পরিচয় দাবি করছিলাম। শুক্রবার রাইতের বেলা গ্রামের মাতব্বররা সালিশ ডাকলো। অরা আমারে শাস্তি দেওয়ার জন্য হুজুরগোরেও আনলো।"
তরুণী জানান, সালিশে মাওলানা ও গ্রামের মাতব্বরদের সামনে তিনি তার সন্তানের পিতৃত্বের জন্য একই গ্রামের আব্দুল করিমকে দায়ী করলে সে কোরান শরীফে হাত রেখে তা অস্বীকার করে।
"এরপর হুজুররা আমারেই মিথ্যাবাদী বানাইয়া দোররা মারতে কয়। গ্রামের শহীদ ড্রাইভার আমারে গইন্না গইন্না ৩৯ ডা দোররা মারছে", বলেন ওই তরুণী।
করিমই যে তার সন্তানের বাবা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডাক্তারি পরীক্ষার দাবি জানান এই তরুণী।
তরুণীর বাবা জানান, বেশ কয়েকবছর আগে আব্দুল করিমের সঙ্গে তার মেয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে মেয়েটির একটি ছেলে সন্তান হয়। ছেলেটির বয়স এখন ছয় বছর। এই ছয় বছর ধরে তার মেয়ে সন্তানের পিতৃত্বের দাবি নিয়ে গ্রাম ও ইউনিয়নের কর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছে, বেশ কয়েকবার সালিশ-বৈঠক হয়েছেও।
তবে করিমরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউই তাদের কথায় কান দেয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তরুণীটির বাবা বলেন, "বাবারে আমার বুকটা ফাইট্টা যাইতেছিল। আমি মাইয়াডারে ধইরা রাখছিলাম, আর শহীদ্যায় দোররা মারতাছিল। মাইয়া আমার চিক্কুর পাড়ে, আমিও চিক্কুর পাইড়া আল্লার কাছে বিচার চাই।"
পেশায় বর্গাচাষী হতদরিদ্র এই বাবার দু' মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে মেয়েটি সবার বড়।
এ বিষয়ে দাউদকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, "মেয়েটির বাবা বাদি হয়ে শনিবার ছয়জনকে আসামি করে একটি মামলা দয়ের করেছেন। এর মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।"
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মাওলানা আবুল কাশেম (৫৫), আব্দুল করিম (৩৫) ও শাহ আলম (৫০)।
বাকিদের গ্রেপ্তারের চালানো হচ্ছে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




