
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের (৮ই আগস্ট ২০২৪ থেকে চলমান...) প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষমতা ছাড়ার পথ কঠিন হয়ে গেছে।
এমনিতেই তার পদ ছাড়ার প্রবল অনাগ্রহ, তার ওপর আছে ক্ষমতা গ্রহণের পরের মাত্র এক সপ্তাহে আরও অন্তত সাড়ে সাতশ লোকের মৃত্যুর দায় ভার। এর পরে আরও মৃত্যু তো আছেই।
সাড়ে সাতশ লোকের কথা কেন বললাম? এটা জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) সেই রিপোর্ট, যে রিপোর্টে আনন্দে আটখানা তারা। ওএইচসিএইচআর আগে সারসংক্ষেপ দিয়েছিল, তাতে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ৪০০ লোকের এবং এরপরের দুইদিনে মারা গেছেন আরও ২৫০ জন। অর্থাৎ প্রাথমিক সংক্ষেপিত প্রতিবেদনে তারা সাড়ে ছয়শ জনের প্রাণহানির যে তথ্যের প্রকাশ করেছিল, তারচেয়ে মূল প্রতিবেদনে নিহতের সংখ্যা অনেক বেশি। এবং সেটা ১৪০০ জন।
ফলকার তুর্কের কমিশনের যে রিপোর্ট সেখানে যখন ১৪০০ লোকের প্রাণহানির কথা, তখন সেই সময়ে দুইটা সরকার ছিল বাংলাদেশে। ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার; ৫-৭ পর্যন্ত সরকারহীন দেশ; এবং এরপর মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ৮ই আগস্ট পর্যন্ত যদি সাড়ে সাতশ লোকের প্রাণহানি হয়, বাকি যে সময় এবং যে সংখ্যা সেটার দায় গিয়ে পড়ে অন্তবর্তীকালীন সরকারের ওপর, এবং এই সংখ্যাটা সাড়ে সাতশ।
মৃতের এবং দিনের সংখ্যাটা খেয়াল করুন; মাত্র ৭ দিনে সাড়ে সাতশ; অর্থাৎ দৈনিক শতাধিক। এই সংখ্যা আওয়ামী লীগ সরকার এবং সরকারহীন দেশের সংখ্যা চাইতেও বেশি।
যদি তিনি এবং তার সরকার সরাসরি নির্দেশ দেয়নি কাউকে হত্যা করার, কিন্তু তারা যে অনুশীলনে সেটাতে এই দায় আপনা থেকেই তাদের ওপরে চলে যায়।
আরেকটু খোলাখুলি করে বললে বলা যায়, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকায় তারা জুলাই-আগস্টের সব মৃত্যুর দায় তাঁর ওপর চাপিয়ে যখন বিচার শুরু করে দিয়েছে, তখন তাঁর শাসনামলের মৃত্যুগুলোর দায়ও তাঁর দিকে চলে যায়।
এরবাইরে আছে আন্দোলনের সময়ে তিন হাজারের বেশি পুলিশ হত্যা। সংখ্যাটা যদিও অনানুষ্ঠানিক, তবু এই সংখ্যা ধর্তব্যের মধ্যেই চলে আসতে পারে। বলা হচ্ছে ৪৪ যদিও, তবু সবাই জানে ৪৪ কেবল চুয়াল্লিশই কেবল নয়।
সরকার এসব হত্যাকাণ্ডের একটা দায়মুক্তি দিয়ে বিচারের পথ বন্ধ করে দিয়েছে সত্য, কিন্তু এইধরনের দায়মুক্তি আদতে টেকে না। ইতিহাস তো তাই বলে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ দিয়ে কি বিচার বন্ধ করা গেছে? যায়নি। আত্মস্বীকৃত খুনিদের ঠিকই দণ্ড পেতে হয়েছে।
আবার বলি ওএইচসিএইচআর-এর কথা; ফাক্টস ফাইন্ডিংস টিম অনেকের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল, কিন্তু সরকার সহায়তা করেনি। তারা আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে সরকার নিরাপত্তার অজুহাতে তাদেরকে সে সুযোগ দেয়নি। প্রশাসনের অনেকের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল, যারা জুলাই-আগস্টে দায়িত্বে ছিল; কিন্তু সরকার কেবলই কথা বলতে দিয়েছে যাদেরকে ক্ষমতা দখলের পর তারা নিয়োগ দিয়েছিল। এতে সরকারি বয়ান এসেছে, বাস্তবতা ওঠে আসেনি, এবং এটাও বলেছে ফ্যাক্টস ফাইন্ডিংস টিম।
মুহাম্মদ ইউনূস সরকারকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে রেখেছে এনসিপি ও জামায়াত, কিন্তু দল হিসেবে একদিকে যেমন তাদের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি নেই, অন্যদিকে নেই ব্যাপকভিত্তিক জনভিত্তি। ফলে এই সমর্থন দিয়ে কিছুদিন টিকে থাকা যাবে, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে সম্ভব না।
এরবাইরে আছে গ্রামীণের নামে অগণন সুযোগসুবিধা।
এমন অবস্থায় তিনি কীভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব ছাড়েন?
বিএনপি যতই ডিসেম্বর-ডিসেম্বর উচ্চারণ করুক না কেন, বিষয়টা এত সহজ না!
অনুসরণ করতে পারেন এই ওয়েবসাইট
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০২৫ রাত ২:৩২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




