এশিয়া কাপের ভারত-পাকিস্তানের খেলায় সমগ্র বাংলাদেশ যেন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল একটা ভারতীয় দালাল আরেকটি পাকিস্তানি দালালে।সেটা না হয় মেনে নিলাম। কিন্তু যারা ভারত-বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তান-বাংলাদেশ খেলা হলে ভারত কিংবা পাকিস্তানকে সমর্থন করে তাদের এই সমর্থনটা কিভাবে মেনে নেব ? -তো এটা মেনে নিচ্ছি এই বলে যে নিশ্চয় তারা ভারত-পাকিস্তানের রাজাকার-দালাল।
ভারত-পাকিস্তানি রাজাকার-দালালদের একটু স্বাধীনতার চেতনায় জাগাবার একটা প্রয়াস মাত্র-
প্রথমেই পাকিস্তানী দালালদের জন্য-
স্বাধীনতার পর কেটেগেছে আজ ৪৩টি বছর অথচ আজ অবধি সেই নিলজ্জ পাকিস্তান একটি বারের জন্যও ক্ষমা চায় নি পূর্ব বাংলার নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য। বরং আমাদের দেশের যুদ্ধাপরাধীদের সাজা দিলে তারা পালন করে শোঁক দিবস। তার মানে তারা এখনো ভাবছে ৭১'এর যুদ্ধটা ছিল ন্যায় সঙ্গত । এই দেশের কিছু ধর্মান্ধ মানুষ যারা ধর্ম সম্পর্কে একেবারে গাফেল এই আছি তো এই নেই জ্ঞান, তারা বলেন পাকিস্তান ইসলাম ধর্মের অনুসারী তাই আমাদের তাদেরকেই সমর্থন দিতে হবে। এই বলে তারা পাকিস্তানের দালালী করতে থাকে। সেটা একাত্তুরেও ছিল আজও আছে। আর সেটা তাদের মধ্যেই আছে যারা মুখে মাত্র ইসলাম, কেননা কারন তারা নিজেরাও জানে না ইসলামে কি আছে আর কি নেই। পাকিস্তানীরা যেমন নামমাত্র ইসলাম নিয়ে আছে ঠিক আমাদের দেশের এই সব রাজাকার, দালালরাও আছে নামমাত্র ইসলাম নিয়ে। তাদের চেহেরা, সুরতে, ঈমানে আকিদায় ভারতের মানুষ আর পাকিস্তানের মানুষ এবংআমাদের দেশের ঐসব সমর্থনকারী দালালদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। যেমন ছোট্ট একটি প্রমাণ দিয়ে দিচ্ছি , তার আগে তাদের আমি একটি প্রশ্ন করছি,
ইসলাম কি কোন নির:অপরাধ মানুষকে হত্যার কথা বলে ? এরা এই উত্তরটা জানবে নে সেটাই স্বাভাবিক।
ইসলাম বলে, সূরা মায়েদা(৫), আয়াত নং ৩২,"যে ব্যক্তি কোন নির:পরাধ মানুষকে হত্যা করল সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানুষকে হত্যা করল, আর যে কোন নির:পরাধ মানুষকে হত্যার হাত রেখে রক্ষা করল সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানুষকে রক্ষা করল।”
এবার বলেন, পাকিস্তানীরা একাত্তুরে কত নিরীহ নির:পরাধ মানুষকে হত্যা করেছে, এরা কি ইসলামের উপর আছে ? ঠিক একই ভাবে ইন্ডিয়া প্রায় প্রতিদিন বাংলাদেশ সীমান্তে পশুর মতো গুলি করে নিরীহ নির:পরাধ মানুষকে আজ হত্যা করেছে। তাদের অমিল কোথায়?
এইবার ভারতীয় দালালদের জন্য-
পাকিস্তানী দালালদের মতো এই ভারতীয় দালালরাও একই ভাবে ধর্মের দোহায় দিয়ে ভারতীয়দের সমর্থন দেয় । আসুন দেখি ওরাও যে ধর্মের কতটুকু মেনে চলছে সেটা দেখি,
" বালয়া বা যুবত্যা বা বৃদ্ধয়া বাপি যোষিতা। ন স্বাতন্ত্র্যেণ কর্তব্যং কিঞ্চিত্ কার্যং গৃহেস্বপি ১৪৭ ”
অর্থঃ "বালিকা কিংবা যুবতী অথবা প্রাপ্ত বয়স্কা নারীরা স্বাধীনভাবে কোন কিছু করতে পারবে না- এমনকি নিজেদের ঘরেও নয়।" -
- - মনুসংহিতা [অধ্যায়-৫, শ্লোক-১৪৭, পৃষ্ঠা- ১৬২, অনুবাদ- সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়]
কিন্তু এই ভারতে তো মেয়েরা আমেরিকার চেয়েও স্বাধীন, যেখানে সেখানে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে গায়ে আবার নাম মাত্র বস্ত্র। তাহলে এই বার বলেন, কোন শুধু ধর্মের দোহায় দিয়ে ওদের সমর্থন দিচ্ছেন? আপনাদের ধর্মের অনেক কিছুইতো ওরা মানেন না, এমন আরো হাজারটা বিষয়ে পার্থক্য দেখাতে পারব। আপনারা জানেন কি কোলকাতা এবং দক্ষিন ভারতে হিন্দু ধর্মের দেবতদের নামও এক নয় এমন কি রীতিনীতি এক নয় । তবে কেন নিজের ধর্ম না পড়ে না জেনে অন্ধভাবে তাদের সমর্থন দিচ্ছেন।
ভুলে গেছেন আমাদের নিরীহ ছোট্ট বোন ফেলানীর লাশ ঝুলে ছিল সীমান্তে । প্রতিদিন এমন অনেক ফেলানি, তার ভাই কিংবা তার মা-বাবা মারা যাচ্ছে সীমান্তে। তাও আবার আমাদের সীমান্তে এসে গুলি করে মারছে। তার বিচার তো দুরের কথা, সাজানো একটা মামলা নিয়ে সেটাও আবার গা ছাড়া করে শেষ।আমাদের মান-সম্মানে লাথি মেরে বানিয়েছে ওরা গুন্ডে ছবি। সিকিমের নাম শুনেছেন, সিকিম ভারতে ব্রিটিশ শাসনের আগে থেকেই স্বাধীন ছিল। সিকিম জাতিসংঘের সদস্য পদভুক্তিরও আবেদনও করেছিল। আর এটি বর্তমানে ভারতের উত্তরাংশে অবস্থিত তিব্বতের পাশের একটি ভারতীয় রাজ্য। বৃটিশরা ভারত ছেড়ে গেলে গণভোটে সিকিমের মানুষ ভারতের বিরুদ্ধে রায় দেয় এবং ভারতের পন্ডিত নেহরু সিকিমকে স্বাধীন রাজ্য হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হন। ১৯৬৪ সালে নেহরু মারা গেলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। এ সময় ভারতের প্রধানমস্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সর্বশক্তি নিয়োগ করেন সিকিমকে দখল করার জন্য। ১৯৭০ সালে নেহেরু প্রভাবিত সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেসকে লেন্দুপ দর্জি ব্যবহার করে অরাজকতা সৃষ্টি করেন। রাজপ্রাসাদের সামনে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়লে ইন্দিরা সরকার রাজার নিরাপত্তার কথা বলে ভারতীয় বাহিনী পাঠায়। কিন্তু তারা রাজাকে গৃহবন্দী করেন। বহির্বিশ্বের সাথে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং বিএস দাশকে ভারত সরকার সিকিমের প্রধান প্রশাসক নিয়োগ করে। এই সময় আমেরিকান এক পর্বতারোহী গোপনে সিকিম প্রবেশ করেন এবং সিকিমের স্বাধীনতা হরণের খবর বিশ্বের নিকট তুলে ধরেন। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরী হয়ে যায়।
ঠিক অনেকটা একই ভাবে বর্তমানে ইউক্রেনে সরকারবিরোধী আন্দলনে যখন দুই পক্ষ ব্যস্ত। সেই সুযোগটাকে রাশিয়া কাজে লাগিয়ে সমস্ত দেশ রুশ সেনাবাহিনী দিয়ে ঘিরে ফেলেছে এবং ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে আত্মসমর্পণ করার কথা বলা হয়েছে তা না হলে হবে সামরিক যুদ্ধ।আর তাতে ঘটে যেতে পারে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ, সময়ই শুধু বলে শেষটা এখন শুধু দেখার অপেক্ষায়।
শেষ কথা: "স্বাধীনতা অর্জন করার চেয়েও রক্ষা করা কঠিন" । তাই নিশ্চয়ই আপনারা কেউ চাইবেন না সিকিমের মতো কিংবা ইউক্রেনের মতো আমরা স্বাধীনতা হারাই। তাই আসুন আমরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের ধর্ম পড়ে সঠিকটা জানি এবং মেনে চলি এবং অন্যের ধর্মকে শ্রদ্ধা করি এবং দল মত নির্বিশেষে আমরা সবাই দেশকে ভালবাসি এবং দেশের জন্য কাজ করি একসাথে। আমরা দেশ প্রেমিক