somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমালোচনার খরচাপাতি ও বাংলা গদ্যের ওম: পর্ব ১

১৭ ই এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মেঘনাদবধ কাব্য তার দোহার পেল না বলে রবীন্দ্রনাথের আক্ষেপ ছিল। আমার আক্ষেপ বাংলা সাহিত্যের এই অমর কীর্তির পাঠ নিতে না পারার ব্যর্থতা। সৃষ্টির নতুন রূপটি এখনো ছুঁতে না পারার ব্যর্থতা হয়ত আমার পাঠযোগ্যতার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। কিন্তু ঠাকুরের প্রয়াণের পর বাংলা সাহিত্য তার আক্ষেপকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তি দিয়ে ফেলল এটাও কম বেদনার নয়। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় মাইকেল সাহিত্যের এই রূপটিকে চিরপ্রতিষ্ঠা দেন নি ঠিক, কিন্তু প্রতিভাবানদের জন্য রেখে গিয়েছেন সাহস ও উৎসাহের অফুরন্ত ভান্ডার। সচরাচর যে প্রবণতা তরুণদের প্রলুব্দ করে তা বোধকরি সমকালীন সাহিত্যের সবচেয়ে প্রাণবান ধারাটি। রবীন্দ্রনাথ এটাকে আর্টের জগতে আদান-প্রদানের বাণিজ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ওনার্স ইক্যুইটি নেহায়েৎ সামান্য হলেও সমস্যা নেই। ব্যাংকের টাকায় ব্যবসা শুরু করে দেয়া যায়। সাহিত্যের এ বাণিজ্যে লাভের ভাগটা যদি উল্ল্যেখযোগ্য হয় সেক্ষেত্রে ব্যাংকের মুলধন সমস্যা নয়। ঋণগ্রহীতার বিরুদ্ধে কারোরই কিছু বলার থাকে না। এভাবেই রবীন্দ্রনাথের সময়েরও অনেক আগে থেকে প্রায় সব মহাদেশে আর্টের আদর্শ আদান প্রদান হয়ে এসেছে। কিন্তু নীট লাভ যদি নেগেটিভ হয় সেক্ষেত্রে ধরা পড়ে মুলধনটা তার নিজের নয়। নকল কী জিনিস তা ভালভাবে অনুভব করা যায়। বাদবাকি মহাদেশ তো বটেই এমনকি নিকট প্রতিবেশী এশিয়ার বিভিন্ন দেশ নিজেদের মধ্যে এই বাণিজ্যে কে কত বেশী ঋণী এই প্রশ্ন এখন আর কেউ তোলে না। আখেরে মুনাফার হিসাবটাই সবাই মনে রেখেছে। যারা ব্যর্থ হয়েছে তারা সৃষ্টির ঋণ শোধবোধ করতে না পেরে দেউলিয়া হয়েছে। অনেক মিডিওকার লেখক, যারা এককালে নিজেদের রাগব বোয়াল হয়ে ওঠার হুঙ্কার দিত, কালের ধুলোয় মিশে গেছে। চলতি সময়ের অনেক প্রাতিষ্ঠানিক ও এন্টি-প্রাতিষ্ঠানিক রাশভারি লেখকও এই ক্যাটাগরিতে পড়েন সন্দেহ নেই। চাপরাশ পড়া সাহিত্য চোখের সামনে উঁকি দিলে সেটাকে গোড়াতে অবিশ্বাস করার কথা রবীন্দ্রনাথ বলেছেন। যারা এসব সাহিত্য ফেরি করে তাদের অন্তরের দৈন্য আচরণে ও সাহিত্যকর্মে প্রভাব ফেলে গুরুতরভাবে। আবার বঙ্কিমের উদাহরণ টেনে রবীন্দ্রনাথ অনুকরণকে সম্মান দেখিয়েছিলেন। মাইকেল যেমন হোমার কিংবা মিল্টনের কাছ থেকে সাহস ও উৎসাহ পেয়েছিলেন, বঙ্কিমও তার সাহিত্যের রূপের আদর্শ পাশ্চাত্য লেখকের কাছ থেকে নিতে কসুর করেন নি। ঋণ করা পুঁজিতে ব্যবসা করে সফল হবার মত মেধা তাদের ছিল এবং বাংলা সাহিত্যের পাঠক এখনো তাদের অর্জিত মুনাফায় জাবর কাটে সময় সুযোগ পেলে। কিন্তু বাংলা সাহিত্যের গতিপথ সব সময় ঠাকুরের কথা মাথায় রেখে এগুতে পারে নি। ফলত ঝাঁক বেঁধে মেধা এসেছে, ঝাঁক বেঁধে আত্মাহুতিও দিয়েছে। এমন উদাহরণ হয়ত বোদ্ধা পাঠকগণ বেশী করে উপলব্দি করেন। গদ্যের শুরুতে মেঘনাদবধ কাব্যের প্রসঙ্গ তোলার কারণ বাংলা সাহিত্যের এই প্যারাডক্সকে চিহ্নিত করবার একটা প্রয়াস। অনেক চাপরাশ পরা সাহিত্যে আমাদের আঙিনা ভরে উঠল। কিন্তু মেঘনাদবধ কাব্যের নায়ক মাইকেল নিঃসঙ্গ শেরপা হয়ে রইল।
প্রকাশ: ঘুড়ি, সমালোচনা সাহিত্য সংখ্যা, ফেব্রুয়ারি ২০০৯
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৩৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×