একজন মৃত্যুর ঠিকাদারের কথা শুনুন...........
আমি দিনে পাঁচ শত টাকা বেতনে পিকেটিং করতাম। প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচটি করে গাড়ি ভাঙচুর করতে হতো। পাঁচটি ভাঙচুর করতে পারলে বেতন ঠিক ভাবে পেয়ে যেতাম। না হলে বেতন কমে যেতো। গাড়ি জ্বালিয়ে দিতে পারলে টাকা একটু বেশি দিত। এজন্য পুরোদিন ব্যস্ত থাকতাম গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টায়। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর আমার নিকট বেতনের টাকা ও ইটের টুকরোর বস্তা চলে আসতো। পরের দিন ভোর থেকে শুরু করতাম ভাঙচুরের কাজ। এরকম একদিন গাড়ি ভাঙচুর করার সময় যুবলীগ কর্মী আবদুল জব্বার আমাকে
আটক করে পুলিশকে দিয়েছিল। আরো বেশ কয়েকজন পিকেটারকে ধরার সময় সহায়তা করেছিল যুবলীগ কর্মী জব্বার। এজন্য মাদের বৈঠকে আবদুল জব্বারকে হত্যার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কখন, কোথায় মারব তা নিয়ে আলোচনা হয়নি। পরে গত ১০ ডিসেম্বর রাতে জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হবে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ওই দিন রাতেই জব্বারকে হত্যা করার পরিকল্পনা হয়। সে অনুযায়ী গভীর রাতে মিছিল সহকারে গিয়ে তার বসত ঘরের দরজা ভেঙ্গে প্রবেশ করে মারধর করি। মূলত পিকেটারদের গ্রেপ্তারে সহয়তা করায় জব্বারকে হত্যা করা হয়েছে।
সাতকানিয়া থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর সাংবাদিকদের কাছে কথাগুলো বলেছে যুবলীগ নেতা আবদুল জব্বার হত্যা মামলার আসামি মোহাম্মদ আরমান। সে আরো জানায়, ঘটনার দিন গভীর রাতে প্রায় শতাধিক জামায়াত শিবির নেতা-কর্মী একযোগে মিছিল নিয়ে কেঁওচিয়ার মাদারবাড়ীস্থ জব্বারের বসত ঘরে যায়। প্রত্যেকের হাতে ছিল ধারালো অস্ত্র। প্রথমে আমি গিয়ে ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে ঘরের দরজার কিছু অংশ ভাঙচুর করি। পরে ভাঙ্গা অংশ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে দরজার হুক খুলে নিই। এরপর ১৫-২০ জন ঘরের ভেতর প্রবেশ করে যুবলীগ নেতা জব্বারকে খুঁজতে থাকি। প্রথমে জব্বারকে না পেয়ে তার মা ও ভাইদের হালকা মারধর করি। পরে টয়লেটের ভেতর খোঁজাখুজি করি। কিন্তু সেখানেও না পেয়ে ঘরের দরজা ভেঙ্গে অন্য একটি কক্ষে প্রবেশ করি। সেখানে জব্বার লুকিয়ে ছিল। তাকে পাওয়ার সাথে সাথে আমিসহ কয়েকজন মিলে তার হাত-পা ধরে রাখি। অন্যরা দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে। মৃত ভেবে ফেলে বেরিয়ে আসার সময় আমাকে পুলিশের নিকট ধরিয়ে দেয়ার কথা মনে পড়ে। তখন পেছনে গিয়ে আমিও দুইটি কোপ দিই। এসময় আশপাশে আরো কয়েকটি বসত ঘরে ভাঙচুর করে আবার মিছিল সহকারে চলে আসি। গ্রেপ্তারকৃত আরমান আরো জানায়, আমি জামায়াত শিবির করিনা। দৈনিক বেতনে পিকেটিং করতাম। মানুষ মারার কথা ছিলনা। কিন্তু আমাকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয়ার অপমান সহ্য করতে পারিনি। এজন্য আমি ওইদিন নিজ উদ্যোগে গিয়ে তাকে হত্যার কাজে অংশ নিই।
গ্রেপ্তারকৃত আরমান আরো জানায়, জব্বার মারা গেছে ভেবে আমরা সবাই বসে মিষ্টি মুখ করেছি। কিন্তু হাসপাতালে নেয়ার পর জব্বার বেঁেচ আছে এমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে যারা হত্যার কাজে অংশ নিয়েছিল তাদের উপর সবাই রেগে যায়। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হয়, বেঁচে গেলে পরে আবার মারা যাবে। নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে কোন লাভ নেই। তবে ১০ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পরে মারা গিয়েছিল জব্বার। মৃত্যুর খবর জানার পর পুনরায় সবাই মিষ্টি খাই। সে আরো জানায়, আবদুল জব্বার হত্যার ঘটনায় জামায়াত শিবির ছাড়াও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মী অংশ নিয়েছিল।
আরমান জানায়, জব্বার হত্যার পরও অনেক দিন পিকেটিং করেছি। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের সাতকানিয়া অংশের রাস্তার মাথা থেকে মিঠাদিঘী পর্যন্ত এলাকার মধ্যে অসংখ্য গাড়ি ভাঙচুর করেছি। কিন্তু এই সময়ে এসে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হবো তা কখনো চিন্তা করিনি।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ খালেদ হোসেন জানান, গ্রেপ্তারের পর মোহাম্মদ আরমান যুবলীগ নেতা আবদুল জব্বার হত্যার ঘটনায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়ার কথা পুলিশের নিকট স্বীকার করেছে। কিলিং মিশনে কত জন অংশ নিয়েছিল, কিভাবে এবং কেন হত্যা করেছে সে বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত অনেকের নামও বলেছে। মামলার তদন্তের স্বার্থে নামগুলো প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
Click This Link