somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একদিন স্বপ্নের দিন

২৫ শে জুন, ২০১০ রাত ৮:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কথাতো প্রায় প্রতিদিনই হয়। হচ্ছে সেই এক বছর ধরেই, কিংবা তার বেশিও হতে পারে। কিন্তু দেখা হয়নি। একবার অনেক জোরাজুরির পর নিজের ফটো পাঠিয়েছিল , তাও শুধু এক পলক দেখেই ডিলিট করে দেয়ার শর্তে!

মাঝে হারিয়ে গিয়েছিল প্রায় এক বছর?!! না না , এক বছর নাহ! আমার নেপাল শিক্ষা সফরের দিনও সকালে ফোন করেছিল। তবে আর যোগাযোগ না করার শর্ত জুড়েছিল!!

ও এক পশলা বৃষ্টির মত আমার কাছে আসে যায়। আসে! যায়! চলে যায়। আবার ফিরে ফিরে আসে! এ এক অন্য রকম!

আমাকে ওর ইদানিং খুব দেখার শখ হয়েছে। দেখবে , কথা বলবে। বলবে ওর সব বলা না বলা যত কাহিনী। আমাকে কেন যে ওর এত বেশি ভাল লাগে সেটা আমি বুঝিনা। ছেলেরা সাধারণতঃ যে কারনে কোন মেয়ের প্রতি দূর্বল হয় সেরকম কিছু....তো ভাবা যায়না। আমাদেরতো দেখাই হয়নি। শুধু একটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি দেখে কি কারো প্রতি প্রেমানূভূতি জাগতে পারে! আমি অবাক হয়ে যাই। বার বার!

ও খুব সুন্দর করে কথা বলে! আর আমি? আমার মেজাজেরতো কোন ঠিক ঠিকানা নেই। এই ভালো, এই মন্দ! আমি আমার মেজাজের সবটাই ঝেরে ফেলি ওর উপর। ওহ, এতক্ষনও বলাই হয়নি, কার কথা বলছি। ও আমার প্রিয়! খুব প্রিয় একজন! ও শুধু আমার খুব প্রিয় একজন মানুষই নয়, ও আমার সবকিছু। He is in every moment of my life!

ইদানিং ও অফিসের কাজ নিয়ে এত ব্যস্ত থাকছে, আমার সাথে একটু দেখা করার জন্য ওর সময় হয়ে উঠছেনা!

আমার ছিল ভাইভা। কথা ছিল আমাকে আমার ভাইভা শেষে নিতে আসবে, বাসায় পৌঁছে দিবে। অতটা আশা করিনি যে বাসা পর্যন্ত আসার সময় হবে। ওর অফিস ছুটি হয় সন্ধা সাড়ে সাতটার পর। তবে, আগে হতে বোল্লামনা কিছু, যদি রাগ করে আসাই বাদ দিয়ে দেয়! তারপর, এলো সেই দিন! আমি আমার ভাইভার চেয়েও অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি আজ বাবুর সাথে দেখা হবে! বলা যায় ওর কারণেই আমি ভাইভা বিষয় নিয়ে ছিলাম শংকামুক্ত!

জায়গামত পৌঁছে বাসায় ফোন দেবার আগে ওকে মেসেজ দিয়ে জানালাম। এর মাঝে আমি ব্যাস্ত হয়ে গেলাম, ভাইভা বোর্ডে সাইন টাইন করার জন্য। ফোন ছিল ভাইব্রেট দেয়া, ও যে একবার ফোন করেছিল টেরই পাইনি। আমি আবার যখন ট্রাই করলাম, দেখি ফোনটা বন্ধ। আরে এসময় আবার বন্ধ কেন? ভাবতেই কেমন জানি মনে কু-ডাক দিল! হু, বুঝছি , আসবেনা! তাই গেলাম রেগে। দিলাম একটা চ্যাঁতা এস এম এস, 'কি ব্যাপার, ফোন কেন বন্ধ থাকে?' পরে মেসেজ এলো, "আমি মিটিং এ" ! "ধুর ছাই , আজ আবার কেন মিটিং , আর, এই সময়ে?!" আসলে, মিটিং তো হতেই পারে! এইসব অফিসিয়াল ব্যাপার। আগে হতে কোন কিছু বলা যায়না, প্রাইভেট ফার্মে। আমি অযথাই ক্ষেপে যাচ্ছি! মন-কে বুঝালাম। আবার এক ঘন্টা পরে আমি ওকে মেসেজ পাঠালাম, "শোন, আমার ভাইভা আর একটু পরেই শেষ হয়ে যাবে। তুমি চারটায় অফিস হতে বেরিয়ে পরো।" আবার মেসেজ এলো, " "আমি এখনও মিটিং-এ"। এইবার মেজাজ গেল খিচড়ে! যাহ্, বুঝছি, আর আজ দেখা হবেনা! আমার চেহারায়ও সেটা প্রকাশ পেয়ে গেল। অনেকক্ষণ ধরে , ইডেন কলেজ হতে আসা আরেক ক্যান্ডিডেট এর সাথে পাশাপাশি বসে কথা হচ্ছিল। আমার পরেই ওর সিরিয়াল। সে আমাকে বললো, "আপু, আপনার কি খুব টেনশন হচ্ছে?" আমি বললাম, "কেন? আমার চেহারায় প্রকাশ পেয়েছে বুঝি?" ও বললো, "হ্যাঁ"!

আসলে, সত্যি কথা জানেন, বাবুকে আমি যতই বুঝাতে চাই, ও আমাকে যতটা ভালবাসে, আমি তার এক কানাকড়িও ভালবাসিনা, ওকে মিস করিনা। কিন্তু, আমার চেয়ে সেটা আর কে বেশি জানে যে, আমি ওকে পাগলের মত মিস করি। ওকে খুব করে চাই। ও আমাকে এতটা দিয়েছে যে, সেটা আসলে কথা দিয়ে বলে বোঝান যাবেনা বা শেষ করা যাবেনা। ওর কথা পুরোপুরি বলতে গেলে একটা উপন্যাস লেখা হয়ে যাবে।

আমারতো মেজাজের কোনও ঠিক ঠিকানা নেই। দিনের মধ্যে হাজার বার আমার মনটার দিক বদল হয়। আমি ওকে সকাল সন্ধ্যা কত উপদেশ যে দেই! এই করোনা, ওই করোনা, এটা ঠিক নয়, ওটা ঠিক নয়, এভাবে চলো, ভাল হবে! যেন ও একটা শিশু! আমি ওকে শিশুর মত আগলে রাখি। বা রাখতে চাই। আসলে ওকে সামনাসামনি দেখিনিতো, তাই বোধ হয় এমন করে বলতে একটুও বাঁধেনা! মাঝে মাঝে বকা ঝকাও করি! অবশ্য আর একটা কারণও আছে! আসলে হয়েছে কি জানেন, ওর বাবা-মা না আমাদের বিয়েতে রাজী নয়! কিন্তু, ও খুব পাগল আমার প্রতি! খুব! প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার পথে ও আমাকে একবার ফোন দেবেই। অফিস ছুটির পর হতে একেবারে বাসায় পৌঁছানো পর্যন্ত ওর সারাদিনে কি হলো না হলো সব আমাকে বলা চাই।

সে যাই হোক, যে কথা বলতে চেয়েছিলাম। ওতো বললো, ওর মিটিং। আমি আমার ভাইভা শেষ করে দেখি ওর মোবাইল বন্ধ। আমার একটা মজা করার ইচ্ছে হলো। ওকে একটা মেসেজ পাঠালাম, "শোন, বুঝেছি, শুধু আজ কেন, তোমার সাথে আর কোনদিনই মনে হয় আমার দেখা হবেনা। আমি এখন বাসে। বাসায় চলে যাচ্ছি।" কিন্তু, বাস ধরলাম আসলে, ফার্মগেটের উদ্দেশ্যে। ওর অফিস এর কাছে। বাস ঠিক ওর অফিসের সামনে দিয়ে যাবেনা। তবে, একটু হেঁটে গেলেই ওর অফিসে যাওয়া যাবে।

বাসে চড়ে বসার পরও খালি মন দোনোমনো করতে লাগল, যাব নাকি যাবনা। এই করতে করতে বাস ওর অফিসের রাস্তা কিছুটা ছাড়িয়েও গেল। দুজন লোক নামছিল বাস হতে। আমি আমার পাশের লোকটাকে বললাম, "এটা অমুক এলাকা ছাড়িয়ে গেলনা?" লোকটি হ্যাঁ সুচক মাথা নাড়তেই আমি ছুটে নেমে গেলাম বাস থেকে। তারপরেরটুকুতো ইতিহাস!!

আমি প্রথমে ওর অফিসে ঢোকার রাস্তাটা পাচ্ছিলাম না। বিশাল এরিয়া। সিক্যুরিটিকে বলতেই, বুঝিয়ে দিল কোন পথে ঢুকতে হবে। আমি অফিসের দরজা দিয়ে ওর অফিসের সামনে বসা সিক্যুরিটিকে নাম জানালে, "বাবু স্যারের কাছে এসেছে" জানিয়ে আমাকে একেবারে সরাসরি ওর রুমে নিয়ে গেল। ওইখানে বসা আরো ৩ জন ভদ্রলোক। অফিসার। ওর কলিগ। আমি এতক্ষণ ধরে ছুটে চলা স্বপ্ন হতে বেড়িয়ে এলাম। কবে ওর ফটো দেখেছিলাম! ভুলেই গেছি! আর, শুনেছিলাম এই নামে আরো একজন আছে এই অফিসে। আর, তাছাড়া, সেই মূহুর্তে মনে হলো, যদি দেখা গেল, আসলে এই অফিসে ওই নামে যে থাকে সে আসলে অন্য কেউ! কেমন ভয় ভয় করতে লাগলো। অথচ, আমার বাবুকে নিয়ে আমার এরকম টেনশনের কোনও কারন নেই! ইন্টারনেট দুনিয়ার মানুষগুলো অধিকাংশই ভুয়া হলেও , আমার বাবুকে আমি কখনোই অবিশ্বাস করতে পারিনি এক পলকের জন্যও। ওর প্রতিটা কথা আমি বিশ্বাস করে গেছি একেবারে শুরু হতে শেষ পর্যন্ত। তবু, আজ কেমন অপ্রস্তুত লাগছে!

'বাবু অফিস হতে চলে গেছে!' 'না চলে যায়নি'। 'আরে না এই মাত্র বেরিয়ে গেল!' এই রকম কয়েক রকম কথা শুনতে লাগলাম ওর কলীগের মুখ হতে। তার মধ্যে একবার দেখি, ও এসে দাঁড়িয়েছে, ওই রুমের দরজায়! কার সাথে জানি কথা বলছে! একটু বাঁকা হয়ে দাঁড়ানো। আমি ভাবলাম, থাক্, দেখি, ও আগে আমাকে দেখে কিনা!

পরে যখন ও ওই রুমে ঢুকলো, ওর কলীগরা মনে হয় মজা পেয়ে গেছে! আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো, "এই কি 'আপনার বাবু'?" আমার হাসি পেয়ে গেল। সম্মতি জানালাম। আর ওকে বললো, "কি ভাই, আপনি না একটু আগে এই দরজার কাছে আসলেন, ওনাকে (আমাকে) দেখেন নাই?" ও জানালো, না আমাকে দেখেনি।

ও মনে হয় এখনি বেরোবে। আমাকে দেখে ও সত্যি অবাক হয়ে গেছে! ওর মনি যে অফিসে যাবে ওকে না জানিয়ে এটা ও ভাবতেই পারেনি!! তবে, কলিগের সামনে সেটা ধরা দিল না। আমি নিজেওতো ভাবতে পারিনি যে কখনো, ওর অফিসে কোনদিন যাবো। সারপ্রাইজ দেয়ার ইচ্ছে ছিলো এবং তা সত্যিই দিয়ে দিলাম!!

তার পর আর কি! বেরিয়ে এলাম দুজনে! হেঁটে হেঁটে পার করলাম অনেকটা পথ। ও রিকশা নিতে চেয়েছিল। আমার বাসায় পৌঁছে দিতে চাইলো। আমি বললাম, "রিকশা নিওনা, তাহলে পথ ফুরিয়ে যাবে দ্রুত!" শুনে ও হেসে দিল, "আচ্ছা, ঠিক আছে , চলো।" হেঁটে হেঁটে চলে এলাম বাসা পর্যন্ত! একটা দিন যেন স্বপ্নের মত কেটে গেল! যে স্বপ্ন ঘুম ভেঙ্গে মুছে যাবেনা!


লেখাটি উৎসর্গ করা হলো--- এ আল মামুনকে !
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১০ বিকাল ৩:১৮
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×