somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নব-দিগন্ত

২২ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(১)
মাসকয়েক আগের ঘটনা..........
তখন আমি এই পথে প্রতিদিন না হলেও বেশ ঘন ঘন যাতায়াত করি। সপ্তাহ খানেক ধরে এখান দিয়েই হেঁটে আমি আমার বাসস্হান পর্যন্ত যাচ্ছি। এক দিন একটা ব্যাপার চোখে পরলো। ট্রেনিং শেষ করে বের হতে বেজেছে রাত নয়টা বেজে পনের। বেশ ক'দিন ধরেই আমার এরকম দেরী হয়ে যাচ্ছে। আমার ঘরে কাঁচা বাজার শেষ।বাজার করে নিলাম আমার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এর কাছের কাঁচা বাজার থেকে। তারপরে, আমি হেঁটে রাস্তা পার হতে গিয়ে পার্কের পাশের ফুটপাতে রেডিয়াম লাইটের নিচে এক অবাক করা দৃশ্য দেখতে পেলাম।
জনা কয়েক বাচ্চা ফুটপাতে বসা।বিভিন্ন বয়সী। বিচ্ছিন্ন সারিতে। কাছা কাছি দু'একজন। কিছু আবার পাশা পাশি। আগে পিছে। আর; তাদেরসামনে দুজন টিচার। অন্তত আমার কাছে টিচার বলে মনে হলো।
আমার রাত হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরা দরকার। কিন্তু, আমি সাধারণ নগর জীবনের দাম্ভিকতাআ ভীড়ে এই মুহুর্তে চোখের সামনে যা দেখেছি তা কি প্রকৃতই বাস্তব দৃশ্য কিনা সে ব্যপারে আমি সন্দিহান। আমি দাঁড়িয়ে উপস্থিত নাটকটি উপভোগ করতে লাগলাম।
আমি আরো একটু কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম এবার। টিচার হিসাবে যে দুজনকে ভেবেছিলম, কাছে যেতে দেখলাম দুজনের একজনের একজন ছেলে। আরকজন মেয়ে। মোটামোটি অননার্স লেভেলের হবে। "এরা কি কোন এনজিও কর্মী?" আমার মনে প্রশ্ন এলো।
- বাচ্চারা, আগের দিনের পড়া কি শিখেছিলাম আমরা, মনে আছে?
- জী আপা!
এবার দেখি, যাকে সম্বোধন করা হলো, সে প্রতিটি বাচ্চার পাশে গিয়ে একটি করে বই হাতে দিলো। তারপরে ওদের সবার সামনের দিকে যেয়ে একটি ইটের উপরে পিঁড়ির মত করে বসে বইয়ের এক জায়গায় হাত রেখে সকলের দিকে দেখিয়ে বললো,
- "বলো তো সবাই, স্বর অ! এই যে এটা"
সবাই সমস্বরে বলে উঠলো, "স-র"
-"স্বর আ"
-"সরা আ আ!"
-"রস্ব ই!"
-"রস্যই"
-দীর্ঘ ঈ!"
- "দির্গই!"
টুনটুন টুন টুন টুন টুন... ... মোবাইল বেজে উঠতে ব্যাগ হাতড়ে বের করে আনলাম মোবাইরটা। মা ফোন করেছে। আমার আদরের বোনটা অসুস্থ। বাড়ীতে। সিরিয়াস প্রবলেম! জ্বর কিছুতেই যাচ্ছে না!

চিন্তিত আমি কথা বলতে বলতে হোস্টেলের পথে পা বাড়াই। কখন যে আমার দেখা "ক্ষুদ্র পাঠশালা" নাটকটি ছেড়ে আমি হোস্টেলের দরজায় পৌঁছে গেছি তা টের পাইনি। ফোনে কথা বলা শেষ হতে সম্বিৎ ফিরে পেলাম।
এর পর রান্না বান্না খাওয়া দাওয়ার পাট চুকে আগামীকালের ট্রেনিং-এর প্রস্তুতি নিয়ে শুয়ে পরলাম। আবালো সেই সকাল থেকে রাতের ডিউটি।

(২)
- ম্যাডাম, এর পরে কি পর্ব?
- আএরপরে বের করো এই বইটা। এটা হলো তোমাদের ইংরেজী বই।
- আমরা কি একন এ বি চি ডি পারবো আফা?
-আমার আজকে এ বি সি ডি পড়বো। আর শুধু এ বি সি ডি ই না। আমার আরো অনেক কিছু শিখবো। আমার অংক শিখবো। গুনতে শিখবো। টাকা হিসাবে করতে শিখবো। আমার সুন্দর পোশাক পরে স্কুলে যাবো।
-স্কুলে যেতে চাও কে কে হাত তোলো তো!
- আমি যাইতে চাই আফাঅ আমি যাইতে চাই আপু।... সবাই সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো।
"মিষ্টি ম্যাম, আমাদের স্টুডেন্টগুলোর জন্য আলাদা আলাদা ক্লাস রূম দেয়া দরকার। আর বয়স ভেদে যার যে ক্লাসে পড়া উচিত সেটাও ভাগ করে দেয়া উচিত তাইনা ম্যাম?" বলে উঠলো একজন পুরুষ টিচার।
... চেহরাটা পরিচিত লাগছে! কে যেন? কে কথা বলেছে? শিহাব ভাই না? আশ্চর্য্য! উনি এখানে কি ভাবে? কেন!
"ছোট'পা তুমি আমাকে স্টুডেন্টদের পরীক্ষার খাতা বানাতে বলেছিলে। আমি প্রতিটি খাতা বিভিন্ন্ বয়সী বাচ্চাদের হিসেবে বানিয়েছি। তুমি দেখে দাও। ঠিক আছে কি না, বলো।" ... কথা বলে উঠলো আমার ছোট বোন ঝুমুর।...
আমি ভীষণ ব্যস্ত! এখানে ছুটছি। ওখানে যাচ্ছি। এ ডাকছে। ও ডাকছে। ... যেন আমি একটা স্কুরের গভর্নিং বডির কেউ। অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে আমি সব কাজ দেখাশুনা করছি।...

ভোঁওও... ভোঁওও... ভোঁওও... ভাইব্রেশন দেয় মোবাইলের কড়া শব্দে ঘুম ভেঙে যায়! এফ, আমি কোথায়? স্বপ্ন দেখছিলাম নাকি!
বিছানা থেকে উঠে তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে যেতে যেতে স্বপ্ন দেখা ঘটনাগুলো নিয়ে বিশ্লেষণ চলতে থাকে আমার মনে।

(৩)
ট্রেনিং ক্লাসে এসে আমি প্রতিদিনের মতন ব্যস্ত হয়ে যায়। গত রাতের দেখা ক্ষুদে পাঠশালা, এনজিও কর্মী কিংবা ঘুমের ঘোরে দেখা স্বপ্নের কোনকিছুই আমাকে আর স্পর্শ করে না।
কিন্তু, ফেরার পথে সেই রাস্তায় এসে একই দৃশ্য চোখে পরে আবারো।
আমার হাতে সময় নেই। আমি চলে যাই দ্রুত।
এভাবে কেটে যায় বেশ কয়েকটি দিন। বেশ কয়েকটি রাত। মাঝেমাঝে অবচেতন মনে এনজিও পাঠশালার অংশবিশেষ মনের ভেতর নাড়া দেয় ব্যস্ততায় ভুলেও যাই।

(৪)
বেশ কয়েকদিন পরে আজ আবার সন্ধ্যায় মাগরীবের নামাজের পরেই আমাদের ছুটি দিয়ে দেয়। আমি বাড়ী ফিরছি। হেঁটে চলেছি আনমনে।
হটাৎ কানে ভেসে এলো, "এই ক'দিন পরেই তো ঈদ। তোমরা কে কোথায় ঈদ করবে?"
- "ম্যাডাম, আমার একানেই ঈদ কর্বো। ঈদের দিন অ কি পড়াবেন?"
আমি কন্ঠস্বর অনুসরণ করে তাকাই। আরেহ্, এতো সেই ক্ষুদে পাঠশালা! কাছে এগিয়ে গেলাম। আজ হাতে সময় আছে।
আজ স্বেচ্ছাসেবী এনজিও প্রুপটাকে কিছুটা বড় লাগছে। কয়েকজন ছেলে মেয়েকে দেখতে পাচ্ছি। সবাই কি এই গ্রুপের? নাকি আমার মতই অতি উৎসাহী? পার্ক এর জনসমাগম থেকে এরাও কি কৌঁতুহলী হয়ে ভিড় জমিয়েছে? কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে লক্ষ করলাম ওদেরকে। তার পরে কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, "এক্সকিউজ মি, আমি কি একটু কথা বলতে পারি?"
প্রায় সবাই এমনকি ছাত্রছাত্রীরাও তাদের পড়া ছেড়ে গিয়ে আমার দিকে দৃষ্টি ঘুরালো আমি জিজ্ঞেস করে য আজানতে পরলাম তা হলো, এরা কোন এনজিওর অংশ নয়। স্বেচ্ছাসেবী। দলের মধ্যে ফর্সা করে একজন মিরা, ডেন্টালে পড়ছে। প্রথমে ওর মাথাতে বুদ্ধিটা আসে। সে প্রায়ই সংসদ ভবন চত্বরে ক্লাসমেচ বা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিত। তখন কিছু বাচ্চা ছেলেমেয়ে ভিক্ষা করতে হাত পেতে দিতো। কিছু ছোট ছেলে মেয়ে আবার চকলেট, বিড়ি, সিগারেট, চিপস, পানি বিক্রয় করতো। একদিন বসে বন্ধুদের সাথে গল্প করতে করতে নিতান্তই কথার কথার মত মিরা বলে উঠলো, "আচ্ছা, এই ছেলেমেয়েগুলো কি স্কুলে যায় না? কমিউনিটি স্কুল তো আছে অনেক এলাকাতেই। যেখানে গরীব বাচ্চারা পড়ে! এদের জ্বালায় তো শান্তিমত কথা বলা যায় না। প্রতিদিন ভিক্ষা করতে করতে হাত পাততে। ভাল্লাগে না!"
- ইফতি বলে উঠলো, "কমিউনিটি স্কুল? কই দেখি নাই তো!"
মিরা অতি উৎসাহী হয়ে উঠলো। কাছেই এক ছোকরা দাঁড়িয়ে। বছর বারো-তেরো হবে বয়েসটা। "আপা পানি লাগবো?" প্রয়োজন নেই বলার পরেও বিক্রি হবার আশায় দাঁড়িয়ে আছে। মিরা তাকেই কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করলো, "এই তুই কই থাকিস রে?"
সবাই মিলে নানা রকম প্রশ্ন করে যা জানতে পেলো তার সারমর্ম এই, এখানে বেশ কিছু বিভিন্ন বয়সী বস্তিবাসী এতিম অথবা স্বজন সহ বাচ্চাকাচ্চা রয়েছে। কিন্তু, সবাই কিছু না কিছু কাজে জড়িত। এই কাজের মধ্যে বিক্রেতা যেমন আছে, ভিক্ষুকও রয়েছে। আরো রয়েছে পকেটমার। কেউই লেখাপড়া করে না। কয়েকজন আছে সামান্য হিসেব করতে পারে।
মিরা ও তার বন্ধুরা ঐ ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলো, "এই পড়াশুনা করতে মনে চায় না?"
-"পড়ালেখা!" বলেই ছেলেটার মুখ উজ্বল হাসিতে ভরে গিয়ে দপ করে নিভে গেল। অন্ধকার গয়ে গেলো মুখটা। "নাহ! পড়ার‍্যাখা করুম কেম্নে? ইশকুলে বার্তি আইতে পয়শা লাগে। কেউ ইশকুলে ত নিবোনা।"
কথাটা শুনে মিরার মনটা এতোখানি কষ্টে ভরে গেলো যে এর পরে আড্ডায় মন ভরলো না। বাসায় চলে গেলো।

(৫)
কয়েকদিন পরের কথা...
মিরার মনে হলো, প্রতিদিন বিকেলে ক্লাস শেষ করে সংসদ ভবন চত্বরে বসে ওরা তো শুধু আড্ডাই দেয়। এই আড্ডা না দিয়ে সময়টা যদি কোন ভালো কাজে ব্যয় করা যায়? সে তার বন্ধুদের মধ্যে যাদের সাথে বেশি সময় কাটায় এই চত্বরে তাদের সাথে কথা বলে দেখলো। কেউ আগ্রহ দেখালো। কেউ পাগলামী বলে হেসে উড়িয়ে দিলো। কেউ বেউ প্রথমে আগ্রহ দেখালেও এখানে জনসমক্ষে অন্য ভদ্র মানুষদের সামনে গরীব বাচ্চাদের পড়াতে লজ্জাবোধ করে এই জায়গায় বসাই ছেড়ে দিলো।
কিন্তু, মীরা ওর নিজের লক্ষে স্থির। যে ব্রত এ মনে ঠাঁই দিয়েছে তার শেষ দেখে ছাড়বে।
প্রথমে এর সাথে যোগ দিয়েছিলো মাত্র দু'জন। নিশাত। আর জয়। নিশাত টেক্সটাইলে পড়ছে সেকেন্ট ইয়ারে। আর জয় অনার্স পাশ করে বসে আছে।
সপ্তাহ কয়েক এর মধ্যে এই জায়গাটিতে সন্ধায় নিয়মিত পাঠশালার পরিবেশ তৈরী হয়ে গেলো। ছাত্র ছাত্রী আর কেই নয়। ঐ খুচরা বিক্রেতা- পান সিগারেট পানি, জুস, চিপস বিক্রেতা। ভিক্ষুক হিসিবে পরিচিত বাচ্চা ছেলে মেয়েগুলো। এমন কি পকেটমারও তার সংগী সাথী না পেয়ে ওদের পাটশালায় যোগ ইদলো।
মিরা এ তার বন্ধুরা প্রথমে ভালো মন্দের পার্থক্য বুঝতে কিছু নীতিবাক্যমূলক গল্প শোনায় বাচ্চাদের। এটা প্রথমেই করে নেয় যাতে পড়তে এসে ওদের পকেট মেরে না দেয় আবার! শেষে বাড়ী ফিরে খেতে হবে ঝাড়ি! বুদ্ধিটা অসিম এর।
বাচ্চাগুলো অল্প কদিনেই অভ্যস্ত হয়ে উঠে এদের এই নতুন যাত্রা পথে। ছোট ছোট ইনোসেন্ট, কোমল চেহারাগুলোয় সুদূর স্বপ্ন রচিত হতে থাকে। নিজেদের গলি-ঘুঁপচিতে বেড়ে ওঠা অন্ধকার স্যাঁতসেঁতে জীবনের ফাঁকে প্রতিটা সন্ধ্যায় রাস্তার বড় লাইটের নিচে এক অন্যরকম সময় কেটে যেতে থাকে।
... আমারই মতন শিক্ষিত কিছু সন্তান সমাজটাকে বদলে দিতে নিজেদের অমূল্য সময়ের কিছুটা সময়কে সাক্ষি রেখে কি সুন্দর অন্যের চোখে স্বপ্ন রচনা করে যচ্ছে! আবাক হয়ে গেলাম এই গল্প শুনে।
"আমিও কি হতে পারি না এদের কেউ? " প্রস্তাব রাখতে সবার মিলিত অভ্যর্থনা পেয়েগেলাম। আর পেয়ে গিয়ে কি যে পেলাম তা প্রকাশ করতে, সে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে ইচ্ছে হচ্ছিল জোরে একটা চিৎকার দিয়ে আমার পরিচিত গন্ডীর সকল মানুষকে জানতে!

(৬)
দিনে দিনে আমার নিত্যদিনের কাজের সাথে, আমার কর্মজীবনের পাশে, আত্নীয় স্বজনের ভিড় ছাড়িয়ে আমার যাত্রা শুরু হলো একগুচ্ছ তরুনের নতুন স্বপ্নের সাথে। সবার মধ্যে আমিই সিনিয়ার বলে আমাকেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করলো। অথচ, আমি ওদের স্বপ্নের শুরুতে ছিলাম না। স্বপ্নের বীজ বপন করেছিলো মিরা। আমিও মোটামোটি অবসর সময়ই কাটাচ্ছি। একটা চাকরির জন্য ট্রেনিং করছি বটে। মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছি। রেজাল্টের অপেক্ষা করছি। আমাদের মধ্যে দিনে দিনে দল ভারী হচ্ছে। বাকিদের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে অসীম। ইফতি মেডিকেলে। তিতুমির করেজে অনার্স পড়ছে রিশাদ। গতকাল আমাদের সাথে ল' পড়ছে এক আপুও যোগ দিলেন।
আমার আমাদের এই কার্যক্রমের নাম দিয়েছি "নব-দিগন্ত"। এক ঝাঁক পথশিশুর উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ে দেবার জন্যে, তাদের আহার-বানস্থান ও কাজের সুবিধে তৈরী করার জন্য আমার স্বপ্ন দেখে যাই। আর, নিজেদের ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রতিদিন নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহন সহ তা বাস্তবায়নের সংকল্প আঁটছি।
আমাদের সংগৃহিত শিশুকিশোরদের মধ্যে আমার মেধার পরিচয়ও পেয়েছি। আমার নির্ধারিত সিলেবাস এর বাহিরে অংশগ্রহনমূলক এ ক্রিয়েটিভ কাজেরও পরীক্ষা নিয়ে থাকি।
আমরা আমাদের সাপ্তাহিক কার্যক্রম ভাগ করে নিয়েছি নিজেদের মধ্যে। সবার কাজের নির্দিষ্ট রুটিন করে নিয়েছি।
গেলো ঈদ উপলক্ষে আমার যে যার দেশের বাড়ীতে চরে যাবো বলে ঈদের পাঁচ দিন আগে আমরা আমাদের ৰছাত্রছাত্রীদের জন্য চাঁদা তুলে ঈদের পোশাক কিনেছি এবং তা বিতারণ করেছি। বাচ্চাদের চোখমুখে যে হাসি দেখেছি, যে আনন্দ দেখেছি আর সেজন্য নিজেদের মনের ভেতরে কি সুখ যে পেয়েছি তা লক্ষ টাকা দিয়েও কেনা সম্ভব না! আমি মনে করি। মাঝে মাঝে আমরা ভাবি, "ইস! আমরা যদি আরো অনেক টাকা থাকতো, এদের জন্য আমি একটা বাড়ী কিনতাম!" আল্লাহ ব্যক্তিবিশেষের সাসর্থ্য দেন নাই!
সামনে গুটি গুটি পায়ে শীতল পায়ে শীত ক্রমশ এগিয়ে আসছে। এদের গায়ে মোটা কাপড় চাপানোর দরকার। আমার দরের সবাই ভেবে রেখেছি এদের শীতের কাপড়ের ব্যবস্থা করতে হবে। আমার পুরানা পোষাক দেবোনা। টাকা দিয়ে নতুন পোশাকই দেবো। তাহলে এদের হীনমান্যতা থাকবে না।
সপ্তাহে একদিন আমরা সবগুলো টিচার এদর উন্নয়নের তারতম্য অনুযায়ী পরবর্তী করনীয় সম্পর্কে মিটিং-এ বসি। আজ ছিলো আমাদের এ মাসের শেষ আলোচনা সভা। সকল ছাত্রছাত্রীকে আজকের মত ছুটি দিয়ে আমার যার যার গন্তব্যে ছুটে চলেছি। আমরা সকলে মিলে একটি স্কুল ঘর দেবার পরিকল্পনা করছি। প্রথমে আমাদের একটি ঘর দরকার। বাচ্চাদের জন্য শীতের পোশাক কেনাকাটার ব্যাপারেও কথা হলো।
প্রথমে চার পাঁচজন পথশিশু নিয়ে মাত্র তিনজনের আগ্রহে যাত্রা শুরু হয়েছিলো এই নবদিগন্তের। আজ ছাত্রশিক্ষক সকলেই সংখ্যা বেড়েছে দৃষ্টান্তমূলকভাবে। আমরা এদেশের কোটি কোটি অশিক্ষিত জনগনের কিছুটা অংশকে শিক্ষিত করার যে কার্যক্রম হাতে নিয়েছি, তা এতদিন আমার বা আমাদের মতন শত শত শিক্ষিত যুবসমাজকে আগ্রহী করে তুলবে এই স্বপ্ন দেখে যায়।
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×