‘ইচ্ছেপাখিরা ডানা ঝাপটায় এখন আমার হৃদয় কোণে,
সখি এখন তুমি কোথায় আছো, কেমন আছো কে জানে...’
প্রিয় রোদ্দুর,
আশা করি বেশ ভালো আছো এখন তুমি। একদিন তোমার ভালো থাকা কাম্য করেই তোমার পথ ছেড়ে আমি সরে এসেছিলাম। তোমার হাত ধরা আমার সংগত ছিলো কিনা তা আমার জানা ছিলো না। আজও জানা নেই কি এক আশ্চর্য স্পর্ধায় তোমার হাত ধরতে চেয়েছিলাম। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে আরও অনেক উঁচুতে তোমার আসন পাতা আর আমি সেখানে এক গন্ডমূর্খ। আমার সামনে আমি কখনও কাউকে ডাকতে শুনিনি। কিন্তু, পেছনে নিশ্চয়ই আমাকে সবাই আদু ভাই বলেই সম্বোধন করতো! অন্যকে নিজেরাও সে নামেই ডাকি কিনা! কে জানে এই কারণেই হয়তো তোমার হাতে হাত রাখার যোগ্যতা আমার হয়ে ওঠেনি।
হাজার কন্যার ভিড়ে তোমায় হঠাৎ চোখে পরে না। কিন্তু, তারপরেও তুমি ছিলে এক অনন্যা। বাহ্যিক রূপে নয়। তোমার অন্তর অন্দর ছিলো পুরোটাই আশ্চর্য সুন্দর কারুকার্য্যে ভরা। সেই অন্দরের ঘোর আমার চোখে লেগেছিলো বলেই না বামন হয়ে আকাশের চাঁদটাকে ধরার দুঃসাহস দেখিয়েছিলাম। তুমিই বা আমার ভেতরে কি দেখেছিলে কে জানে! বহুবার জিজ্ঞেস করেও শুধু ঐ একটাই জবাব পেতাম, ‘তুমি শুধু আমার ছোট ছোট সখের মূল্য দাও বলেই না তোমাকে আমার এত্ত পছন্দ!’ কে জানে ওটা তোমার মিথ্যে ভাষণ ছিলো কিনা। তোমাকে কোনদিন মিথ্যুক ভাবতে পারিনি আমি। পারবোও না। কিন্তু, মাঝেমাঝেই তোমার মনের ক্ষেদ ঝরে পরতো আমার সামনে! তুমি উচ্চাভিলাসী! শিক্ষা দীক্ষা দিয়ে মোড়ানো তোমার উপযুক্ত কেউই তোমার হাত ধরলে মানায়। সেখানে আমি কে?
আমার ইচ্ছেগুলোকে মূল্য দিতে তোমার আগে কেউ আসেনি তো! কেউ তো এর আগে আমাকে এতটা গুরুত্বও দেয়নি। তাই তোমার ওপরে এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পরেছিলাম। স্বার্থপরের মত তোমার একজন অতি প্রিয়জনের আসনটা আমিই দখল করতে চাইছিলাম। কিন্তু, ভাগ্যিস সময় মত আমার বোধোদয় হলো। নইলে এই জীবনের কাছে আমার ক্ষমা হতো না! আমার জন্যই তুমি অন্য কোন দিকে তাকাতে পারছিলে না। হয়তো তুমি মুখে বলতে পারছিলে না। কিন্তু তোমার মংগল কামনায় নিজে থেকে সরে আসাটাই যথার্থ মনে করলাম।
আমরা সবাই মুখোশে বন্দী। প্রিয়জনের সুখের জন্য অনেক কিছুই বলা প্রয়োজনীয় হলেও আমরা প্রকাশ করি না। মুখ বুজে সহ্য করি দিনের পর দিন। কিন্তু, বুকের ভেতরে সিল মোহর দিয়ে চাপা পরে থাকা সেই সত্য মাঝে মাঝে কঠিন রাগ অথবা দুঃখের মধ্য দিয়ে দিনের আলো দেখে। তোমার ক্ষেত্রেও সেটা হতো। তোমার নাকি রাগ উঠলে কি বলো কি করো তার কোন মাথামুন্ডু থাকে না। কিন্তু, আমি আবিষ্কার করলাম, তোমার মনের আসল অভিব্যক্তি ঝরে পরে তোমার সেই তুমুল রাগ অথবা গোমড়া মুখের ঘোরেই। এরপরেও কি তোমাকে আর কষ্ট দেয়া যায়? যে শুধুমাত্র আমার সুখের জন্য সবকিছু সহ্য করেও নিজের সমস্ত ইচ্ছের মৃত্যু ঘটিয়ে আমার মত এক গন্ডমূর্খ যোগ্যতাহীনের হাত ধরে মাথা নিচু করে বেঁচে থাকতে চাইছে সেটা কি কোনভাবেই বুঝতে পারার পরেও হতে দেয়া যায়?
আমি জানতাম, রাগ পরে গেলে তুমি অনুতপ্ত হবে। তুমি ফিরে আসবেই। আসতেই। এসেছোও। কিন্তু, আমি কি সব বুঝেও আর তোমাকে আটকে রাখতে পারি? তোমার সুখের জন্য, তোমার মনের ইচ্ছেগুলোর মূল্য দিতে আমাকেই যে কিছু একটা করতে হবে। আর কেউ তো জানবে না। জানেও না বোধহয় তুমি কতটা উৎসর্গ করতে চেয়েছো নিজেকে আমার জন্য। আমার মত এক অপদার্থের জন্য এতটা কি না করলেই নয়? কিন্তু এটা তোমাকে বোঝানো সম্ভব নয়। তুমি অসম্ভব যুক্তিবাদী মেয়ে। তোমার সাথে কথায় পারে এমন কারও এখনও জন্ম হয়নি। যুক্তিতে জয়ী হওয়ার লোভে তুমি যে নিজেকেও বিসর্জন দিতে পারো। আর যেখানে আমার প্রশ্ন, সেখানে তুমি যে কতটা আবেগী হতে পারো সে আমার চেয়ে আর কে বেশী জানে!
রাগ ঠান্ডা হবার পরে কত তোমার ডাকাডাকি, কবুতরের পাখায় পাখায় কত যে তোমার বার্তা, কত যে ঘন্টাধ্বনি বেজেই চলেছে রোজ সকাল সন্ধ্যা! কিন্তু, আমাকে যে মুখ বুজে কানে তুলো দিয়ে থাকতেই হবে। জীবনের একটি পরীক্ষায় আমি হয়তো হেরে গিয়েছি বারে বারে। যে কারণে তোমার পাশাপাশি হাঁটার যোগ্যতায়ও আমি পিছিয়ে রয়েছি। কিন্তু জীবনের আরেকটি পরীক্ষায় মানে, তোমার প্রতি আমার ভালোবাসার সহ্যসীমার পরীক্ষায় আমাকে অন্তত একবার জয়ী হওয়ার প্রার্থনা করেছি আমি বিধাতার কাছে। তুমিও আমার জন্য দোয়া কোরো। সকাল সন্ধ্যা আমার জন্য তোমার অশেষ প্রার্থনার সাথে আরো একটি যোগ করে নিও। একটু কষ্ট হলেও আমার এই ইচ্ছে পূরণের একটু সুযোগ দিও তুমি আমায়। তোমার স্বপ্ন আর তোমার ইচ্ছেপাখির উড়বার স্বাধীনতায় আমি একজন অবলা পথিক আর বাঁধা হয়ে থাকতে চাই না। অনুগ্রহ করে আমায় তুমি এতটুকু মুক্তি দাও।
ইতি,
‘তোমার মেঘ’
রোদ্দুরের সাথে মিশে গিয়ে যার একটু উজ্জ্বল হবার সাধ জন্মেছিলো। কিন্তু, মেঘ আর রোদ্দুর কি কখনো এক হতে পারে? এ যে বিধাতার নিয়ম বিরুদ্ধ। সে নিয়মের বাইরে যাওয়া কারো সাধ্য নয়!
- See more at: Click This Link