![]()
এবার যেই শহরে আসলাম সেই শহরের কথাটা বলি। আমার দেখা খুব সুন্দর একটি শহর যা কিনা গাছগাছালি, পাহাড় এবং লেক দিয়ে সাজানো। আসলে এই জায়গাটা এক রকম টুরিস্ট স্পট। আবহাওয়াটা অনেকটাই বাংলাদেশের মত। গাছগাছালি এবং পাখি এমনকি তেলাপোকা আমাদের দেশের মত। তেলাপোকার কথাটা কেন বললাম জানেন? কারন সারা চায়নাতে আমি যত জায়গা ঘুরেছি আমি দেখেছি তেলাপোকার আকৃতি আমাদের দেশের তেলাপোকার থেকে অনেক ছোট কিন্তু মাসাল্লাহ এখানকার তেলাপোকা ঠিক আমাদের দেশের মত। আবহাওয়ার জটিলতম অবস্থা হচ্ছে প্রায় সময়ই বৃষ্টি এমনকি শীতের দিনেও বৃষ্টি। তবে শীতের দিনে এই বছর খুবই শীত পড়েছিল।
আমাদের রুমে একজন আয়ি অর্থাৎ কাজের মহিলা আসেন ঘর পরিষ্কার করার জন্য। তাকে দেখলেই সবসময় নিহাও দিই, পরিচত। একদিন কি হলো দেখলাম দোকানে সেই আয়ি আপেল কিনছে, তার দিকে তাকিয় নিহাও দিলাম, এখন সে আমাকে আপেল খাওয়ার জন্য বলল আমি মনে করলাম আচ্ছা ঠিক আছে আপেল নিই, আবার খুব ক্ষিদাও লেগেছিল। কিন্তু যখন আপেল নিতে কাছে গেলাম আমি ত আয়িকে দেখে থ, এই জন আমাদের আয়ি না, আমি চিনতে ভুল করেছিলাম কারন তাদের পোশাক অভিন্ন থাকে তাই। এখন আমি বললাম যে আমি মজা করে বলেছি আপেল আসলে খাবো না, তখন ত সে খুব জোর করে বলল না তোমাকে নিতেই হবে। তারপর আমি বললাম যে দেখ টাকাটা আমি দেই, তৎক্ষণাত তিনি ক্যান্টনিজ ভাষায় দোকানিকে কে জেন বলল, ওমা একি দোকানদার আমার থেকে ত টাকা নিবেই না, নিবে না সে ত নি্বেই না। খুব জোর করে আপেলটি ধরিয়ে দিল। তারপর আমাদের হাসপাতালের ডাক্তাররা এসে জিজ্ঞেস করছিল কি হয়েছে তারা তারা তাদের ক্যান্টনিজ ভাষায় কথা বলল। তারা বলল খাও, আমাদের এখানে তুমি মেহমান। আর কি করা খেতে বাধ্য হলাম। আরেকদিন আরেকজন বয়স্ক মহিলা আমাকে দেখে জিজ্ঞস করল তুমি কোন দেশ থেকে এসেছ আমি বললাম বাংলাদেশ (মংঝালা) থেকে এসেছি। জিজ্ঞেস করল তুমি এখানে কি কর বললাম আমি এই হাসপাতালে ইন্টার্ণশীপ করি। তখন খাবারের সময় অর্থাৎ দিনের বারোটা বেজেছে তাই জিজ্ঞস করল খাবার খেয়েছ বললাম খেতে যাচ্ছি। হঠাৎ করে আঙ্গুর বাহির করে আমাকে বলল এই আঙ্গুর খাও, আমি বুঝতে পারলাম যে ঐদিনের মত কিছু একটা হতে পারে তাই বললাম যে না না আমি ত এখন খেতে যাচ্ছি। উনি ত এখন আমার হাতে পারলে ধরিয়ে দেয়, পরে বুঝলাম আজকে ছাড়বে না, তাই একটা আঙ্গুর নিলাম। উনি অনেক খুশি হলেন।
খাবারটা একটু কষ্টের ছিল কারন খাবারের জন্য মুসলিম হোটেলে যেতে হতো আর মুসলিম হোটেল অনেক দূরে ছিল। তারপরও ঔখানে গিয়ে খাবার খেতাম। তাছাড়া আমাদের জন্য হাসপাতাল থেকে প্রতি মাসে ৫০ আরএমবি করে ফুড কার্ডে দিয়ে দিত। কিন্তু প্রত্যেকদিন চায়নিজ খাবার খাওয়ার ইচ্ছা হতো না। হাসপাতালের আবার দুটো শাখা একটি হচ্ছে মুসলিম হোটেলের কাছে যখন মুসলিম হোটেলের পাশের শাখার ডিপার্টমেন্ট পড়েছিল তখন ঐ মুসলিম হোটেলে যাতায়াত বেশি হয়েছিল। মুসলিম হোটেলের যে মালিক অর্থাৎ শুশু (আংকেল) সে ত বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয় নিয়ে কথা বলত তাছাড়া আমেরিকা ভালো না, ইরান, ইরাক, ইসরায়েল এসব নিয় ত মোটামুটি কথা হতো। যাইহোক ইন্টার্ণশীপ এই মাসের জুনের দুই তারিখ শেষ হলো। আজকে সেই মুসলিম হোটেলে গিয়ে বললাম শুষু আমি ত কালকে চলে যাবো। উনার প্রশ্ন তুমি কি আর এখানে আসবে না আমি বললাম হয়তোবা না। তিনি আমাকে একটি মুসলিম টুপি দিল, আমি বললাম দরকার নেই আমার ঘরে দুইটা আছে। তারপর বলল আসো আমাদের সাথে কিছু ছবি তোলো আমি খুব খুশি হয়ে তাদের সাথে ছবি তুললাম। ছবি তোলার পরে জোর করে টুপিটি ধরিয়ে দিল এবং বলল তুমি তোমার দেশে গিয়ে বলো যে এক মুসলমান চাচা তোমাকে দিয়েছে। জিজ্ঞেস করলাম টুপিটি চায়নার কোন জায়গার, উত্তরে বললেন এটা শিনজিহানের টুপি। কি আর করব টুপিটি পড়ে নিলাম। টুপিটি পড়ে নেওয়ার সাথে সাথে তারা ত বিশাল খুশি। মনে মনে ঠিক করলাম আল্লাহ যেহেতু এদের উছিলায় টুপিটি পড়িয়ে দিলেন তাহলে রাস্তায় গিয়েও টুপি খুলব না, যদিও জানি টুপি পড়া অবস্থায় অন্যান্য চায়নিজরা আমাকে আর বিদেশী মনে করবে ভাববে যে আমি শিনজিহান থেকে এসেছি তারপর পড়লাম। অনেক ভালো অভিজ্ঞতা নিয়ে শুরু করেছিলাম এবং আল্লাহর রহমত নিয়ে এই শহর থেকে কালকে বিদায় নিব। যদিও মাঝে আমার একটি সাইকেল চুরি হয়েছে কিন্তু ক্ষণিকের জন্য খারাপ অভিজ্ঞতাগুলোকে একদম ভুলে গিয়েছিলাম্। তবে এই শহরকে আমি ভুলতে পারব না, অসাধারণ একটি শহর এবং আবহাওয়া এবং এই শহরের মানুষ খুবই হাসি খুশি। এদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে গেলাম।
![]()
[email protected], web: xueonline.info

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


