কোন কিছু না হলে আমি ব্লগে লিখি না। আজকের দিনে যা ঘটল আমার সাথে, মনটাই খারাপ হয়ে গেল। কিছুই বুঝতে পারলাম না। জীবনে চাকরির জন্য একটা এনজিও-তে ঢুকলাম আর অফিস হচ্ছে লক্ষীপুরে। মাস তিনেক হয়ে গেছে এখানে এসেছি কিন্তু এরকম ঘটনা আর হয় নাই, আজকেই প্রথম। সকালে ঘুম থেকে উঠে হাঠাৎ করে মনে পড়ল যে একটা সরকারী চাকরির জন্য পে অর্ডার করেছিলাম ওটা কোথায়। সারা ঘর খুজলাম কিন্তু পাচ্ছিলাম না। অনেক দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম এত টাকার পে অর্ডার হারিয়ে গেল!!!! এদিকে দেখি অফিসের সময় হয়ে গেছে, ৯টা অলরেডী বেজে গেছে। তারপর আর না খুঁজে তড়িঘড়ি করে বাসা থেকে বের হলাম, যেহেতু দেরি হয়ে গেছে তাই একটা রিকসায় উঠলাম। সাধারণত এখান থেকে আমার অফিসের ভাড়া ১০ টাকা কিন্তু আমি মাঝে মধ্যে ১৫ টাকাও দিই। আজকে অফিসের সামনে নেমে যখন টাকা দিতে যাব তখন রীতিমত রিকসাওয়ালা আমাকে হুমকির মত করে বলছে ২০ টাকা দেন। আমি ত তার দিকে আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। আমি বললাম যে এখানে ত ১০ টাকা ভাড়া কিন্তু তোমাকে আমি ১৫ টাকা দিচ্ছি আবার তুমি কেন ২০ টাকা খুজছ। সে ত আমার সাথে বাকবিতন্ডা শুরু করে দিল, এ দিকে আমার অফিসের ও দেরি হচ্ছে, আমার ত মেজাজ একেবারে বিগড়ে গেল। তারপর বললাম ভালোর ভালো এখান থেকে ১৫ টাকা নিয়ে চলে যাও। তারপরও সে আমার সাথে তর্ক করতেছিল এবং যাওয়ার সময় বলল যে আপনারা ত ঐ কিস্তিওয়ালা। আমাদের দুইটা প্রজেক্ট, একটা হচ্ছে মাইক্রোক্রেডিট আরেকটা হচ্ছে আমাদের সূর্যের হাসি ক্লিনিক এর ইউএসএইড প্রজেক্ট। রিকসাওয়ালা মনে করেছিল যে আমি মাইক্রোক্রোডিটে কাজ করি। এই সকাল সকাল রিকসাওয়ালার সাথে বাকবিতন্ডা দিয়ে শুরু করে অফিসও শুরু করলাম। পরে অফিসে এসে আমার টেবিলের ড্রয়ারে দেখি ঐ পে অর্ডার, হাফ ছেড়ে বাচলাম। যাই হোক দুপুরে চাকরির চিঠি পোষ্ট করতে লক্ষীপুর পোষ্ট অফিস গেলাম সেখানে গিয়ে দেখি পোষ্ট অফিসের কর্মচারি এবং কর্মকর্তা জামাতে অফিসের ভিতর নামজ পড়ছে, তাই দেখে আমি বাইরে দাড়িয়ে ছিলাম, যেহেতু নামাজ পড়ছে তাই নামাজের পরেই যাব মনস্থির করলাম। জামাতে নামাজ পড়া শেষ করার পর গেলাম কাউন্টারে সেখানে বললাম আমার চিঠিটা রেজিস্ট্রার করে পাঠাতে হবে, আমাকে কাউন্টারের অপর পাশ থেকে লোকটা বিড় বিড় করে কি বলল আমি বুঝতে পারলাম না। আমি মনে করলাম লোকটা কাজে ব্যস্ত তাই দাড়িয়ে অপেক্ষা করলাম, প্রায় ১৫ মিনিট দাড়িয়ে অপেক্ষা করার পর লোকটা আমাকে জিজ্ঞেস করল আপনি কি করতে চান, আমি উত্তরে বললাম আমি চিঠিটি পাঠাতে চাই রেস্ট্রার করতে হবে সে বলল এখন অসময়ে আসছেন কেন? এখান থেকে ২ টা পর্যন্ত চিঠি রেজিস্টার করে পাঠাই, আমি বললাম আমি ত আগেই আসলাম কিন্তু আপনারা নামাজ পড়তে ছিলেন তাই আমি ভিতরে আসিনি। সে আমাকে বলল, তাহলে কি নামাজ পড়ব না, আমি বললাম আপনারা নামাজ পড়ছিলেন তাই ত আমি ভিতরে আসিনি। পরে ভিতর থেকে একজন বলল আমি উনাকে দেখেছি ,যে উনি, নামাজ পড়ছিলেন বলে ভিতরে আসেননি। তার কথা শুনে তিনি আমার চিঠি রেজিস্ট্রার করতে রাজি হলেন। আমি চিঠিতে আগেই ১০ টাকার ষ্ট্যাম্প লাগিয়ে নিয়েছিলাম, এবং এর আগেও আমি এরকম চাকরির একটা চিঠি পোষ্ট করেছিলাম কিন্তু আমার থেকে তারা কোনো টাকা রাখে নাই হয়তোবা ভুল করে আর আমিও জানতাম না যে টাকা দিতে হয়, আমি ওখান থেকে চলে আসছিলাম টাকা না দিয়ে, তাই আমি মনে করছিলাম যে টাকা দেওয়া লাগবে না। কিন্তু তারা বলতেছে ১০ টাকা দেওয়া লাগবে, আমি বললাম যে আগে ত টাকা দেওয়া লাগে নাই, এখন কেন লাগতেছে, তাদের মধ্যে একজন দাড়িওয়ালা লম্বা করে লোক বলল তাহলে আগের টাকাটাও দিয়ে যান। কি আর করা, ঠেকা আমার তাই উপায়ন্তর না পেয়ে টাকা দিতে গেলাম। এখন টাকা দেওয়ার সময় দেখি ১০০০ টাকার নোট ছাড়া কোনো নোট নাই, তাই বললাম ওনাকে ১০০০ টাকার ভাংতি দেন। তারা আমার সাথে এমন আচরন করে কথা বলতেছিল যে আমি এখানে ভিক্ষুকের মত তাদের কাছে চিঠি পাঠানোর জন্য আবদার করতেছি। আজকের পুরা দিনটাই আমার খারাপ গেল। যাই হোক এত কিছু হলো তাই পোষ্ট অফিসের ঐ লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনার নামটা কি, লোকটা উত্তরে বলল ফারুক। সাথে আমি তার ছবিটাও তুলে রাখলাম। এইভাবে আমাদের দেশে এত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের লোকদের দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালায় যারা সঠিক কোনো তথ্য সঠিকভাবে দেয় না এবং মানুষকে সারাদিন হয়রানির উপর রাখে। আজকে কি তাহলে আমার রাশিই খারাপ ছিল????????? পোষ্ট অফিসের ঐ লোকটার ছবি দিলাম
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:২৮