দৃশ্য ১:
মেয়েটি ঘুম থেকে জেগে হেটে বাথরুমের বেসিনের সামনে যাবে, আয়নায় নিজেকে দেখবে, হাই তুলবে, ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে দাঁত ব্রাশ শুরু করবে। তারপর সে পানির টেপটি ছাড়বে এবং আবিষ্কার করবে, পানি বেরুচ্ছে না। পানির মোটর চালাবে, তবু দেখবে পানি উঠছে না!
ছেলেটি টয়লেটে যাবে। টয়লেট কর্ম সেরে কল ছেড়ে দেখবে পানি নাই! ছেলেটি অবাক ও বিরক্ত হবে।
কৃষক তার জমিতে পানি সেচ দিতে গিয়ে আবিষ্কার করবে কুয়োতে পানি নাই। জমি শুকিয়ে একেবারে কাঠ ফাটা অবস্থা।
কাজের মেয়ে পাড়ার চাপকলে যাবে পানি আনতে। চাপকলের হাতল তুলতে গিয়ে দেখবে কোন শক্তি লাগছে না! টিউবওয়েলে পানি নাই!
ক্লান্ত ছেলেটি পানি খাওয়ার জন্য ফ্রিজ খোলে চারদিকে তাকাবে, ’ ওহ মাই গড! পানি কই? ওকে। নো প্রবস্ । কিনে আনতে হবে এক বোতল ওয়াটার। এই হল আমার মানিব্যাগ। আপাতত দশ টাকার এক বোতল পানি আনলেই হবে।”
দোকানদার: ‘ আমি আপনাকে এর মধ্যেই বলেছি এ দোকানের সব বোতল পানি একটু আগেই বিক্রি হয়ে গেছে! আশেপাশে কোন দোকানেই পানি পাওয়া যাচ্ছে না। দয়া করে আর বিরক্ত করবেন না। যত্তসব! এই কেউ কি আছ? আমাকে এক গ্লাস পানি দাও। তেষ্টায় মরে যাচ্ছিরে বাবা!
রাস্তার হকার:‘ মাত্র পাঁচশ টাকা! পাঁচশ টাকা! পুরো এক গ্লাস পানি। এক ফোঁটাও কম পাবেন না। পানি লাগবে... পানিইই’
এক লোক সকালে ঘুম থেকে জেগে সাতার কাটতে পার্শ্ববর্তী নদীতে যাবে। কিন্তু আশ্চর্য হয়ে লক্ষ করবে, পানি নাই। ‘ কোথায় গেল পানি!’ চিৎকার দিয়ে উঠবে লোকটি।
দৃশ্য: ২
টিভি সংবাদ পাঠক ( উত্তেজিত, উৎকণ্ঠিত, দু:শ্চিন্তাগ্রস্ত ) : অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে আমরা লক্ষ করছি যে সারা পৃথিবীতে কোথাও এক ফোঁটা পানি নাই। পৃথিবীর সব দেশ থেকে খবর আসছে যে কোথাও কোন খাবার পানি পাওয়া যাচ্ছে না। পৃথিবীর সব নদী হঠাৎ করে শুকিয়ে গেছে। গভীর অগভীর কোন ধরনের নলকূপ থেকে পানি আসছে না ।পানির কোন কল থেকে এক ফোঁটাও পানি বেরুচ্ছে না। এমনকি আকাশের মেঘগুলোও উধাও হয়ে গেছে! পৃথিবীর কোথাও কোন বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না! গাছপালা সব মরে যাচ্ছে। বনের সব পশু পাখি পানি না পেয়ে জনারন্যে বেরিয়ে পড়েছে পানির খোঁজে। সবাই পানির জন্য কাতর হয়ে অপেক্ষা করছে। আমরা এখন চলে যাব স্টুডিওর বাইরে জনাব কেউ নার কাছে। জনাব কেউ না, আপনি শুনতে পাচ্ছেন আমাদের কথা?
কেউ না: জ্বি আমি শুনতে পাচ্ছি।
সংবাদ পাঠক: আমাদের জন্য কোন খবর?
কেউ না: জ্বি, আমার কাছে একটি চাঞ্চল্যকর খবর আছ্।পানির প্রতিটি কণা একসাথে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা ঠুকে দিয়েছে সবার বিরুদ্ধে। যদি সবাই ব্যাপারটার সমাধান চায় তবে সবাইকে উপস্থিত থাকতে হবে আজ বিকেল ৪ টার সময় আদালত প্রাঙ্গনে।
সংবাদ পাঠক: জনাব, কেউ না, আমি সবার পক্ষ থেকে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছি।
কেউ না: ঠিক আছে, বলছি। অমরা এখানে আদালত প্রাঙ্গনে দাঁড়িয়ে সকল পানি কণাকে দেখতে পাচ্ছি। তাদেরকে মনুষ্যজাতির উপর খুব বিরক্ত বলে মনে হচ্ছে। তারা সবার উপর অভিযোগ এনে বলছে যে সবাই পানির অহেতুক অপচয় করে আসছে যুগ যুগ ধরে। পানি দূষিত করে আসছে বছরের পর বছর। এহেন অপচয় পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ। এরকম আরো অনেক অভিযোগ এনেছে তারা মানবজাতির বিরূদ্ধে।
অন্যদিকে সবাই দোষারোপ করছে কেউএকজনের উপর। তাদের দাবী কেউ কেউ নাকি এমন ঘৃণ্য কাজ করে, সবাই না। কিন্তু পানি আজ একাট্টা । এর বিচার হতেই হবে। এখন সবকিছু নির্ভর করছে সবার উপর। সুধী দর্শক, আমার গলা শুকিয়ে একেবারে কাঠ হয়ে গেছে। আমি বিদায় নিচ্ছি। আবারো আমরা ফিরব বিকাল চারটায় অারো এক্সকুসিভ খবর নিয়ে। ততক্ষণ আমাদের সাথে থাকুন।
দৃশ্য: ৩
সকল পানি কণার সাধারন মিটিং
সমুদ্র: আমি আজ অত্যন্ত খুশি আপনাদের সবাইকে একত্রে পেয়ে। প্রথমেই সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার সিদ্ধান্তে আপনাদের সবার ঐকমত্য দেখে। আসলে অনন্তকাল থেকে আমরা মানুষের দ্বারা লাঞ্চিত ও অবহেলিত। তারা যে হারে আমাদেরকে মিস ইউজ করছে তাতে সেদিন খুব বেশি দূরে নাই যে আমরা ফুরিয়ে যাব। তখন প্রত্যেকে ও আমরা উভয়েই ভুগান্তির শিকার হব।
হাততালি।
বৃষ্টি কণা (রাগত:স্বরে): তারা সবাই একেকটা বদ্ধ উন্মাদ। তারা জানে না যে কি করা উচিত। তারা তাদের ভাল বুঝে না। অথচ তারা নিজেদেরকে সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে দাবী করে! তাদের কথা ভাবতেই আমার করুনা হয়। তারা যদি অন্তত: আমার কিছু জমিয়ে রাখত তবে তারা কতই না ভাল করত নিজেদের জন্য। আমি আকাশ থেকে পড়তে থাকি, পড়তেই থাকি, তাদের মাথামোটা মাাথাগুলার উপর, রাস্তার উপর, বাড়ির ছাদে। অথচ তারা নির্বিকার! কষনওবা তাদের কাছে নাকি আমি রোমান্টিকতার প্রতীক! তারা গান বানায়,
আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদর দিনে...
জানিনে জানিনে
কিছুতে কেন যে মন লাগে না...
গান বানাও কোন আপত্তি নাই, তাই বলে কি আমার একটু খানি জল তুমি জমিয়ে রাখতে পার না? খুব কি কষ্ট হয় তোমার? তোমার ভালর জন্যই তো!
লেকের পানি (দু:খিত স্বরে): সমুদ্র মহাশয়! একসময় আমি অনেক আনন্দে ছিলাম। আশেপাশে ছিল সবুজের হাতছানি। মাছেরা খেলা করত ঝাঁক বেঁধে। আর এখন! আমার জল আর বিশুদ্ধ না। ঘোলাটে হয়ে পড়ছি আমরা সবাই। মাছেরা মারা পড়ছে একে একে। সবুজ সবকিছু উধাও হয়ে গেছে আজ। মহামান্য। আমি আজ আপনার ডাকে এসেছি আমার মনের দু:খগুলো প্রকাশ করতে।
গভীর জমির পানি ( উত্তেজিত, শেষের দিকে ভগ্ন হৃদয়): সবাই পাগলের মতো আমাকে খুঁজে বেড়ায় সারাক্ষণ। আমি লুকোতে চাই। কিন্তু পারি না। কোন না কোন পাম্প আমাকে টেনে তুলে মাটির উপর। এখানে না পেলে ওখানে খুঁড়ে, ওখানে না পেলে সেখানে খুঁড়ে। সারাক্ষণ খালি খুঁড়োখুঁড়ি। ঘরে ঘরে আজ গভীর নলকূপ। এ লুকোচুরি খেলায় আমি বড় ক্লান্ত আজ! আমি হতাশ।
সমুদ্র (শান্ত) : দেখ, সবার আমাদের দরকার। আমরাও নিশ্চয়ই এই দরকারের কথা বুঝি। তাই যেটা দরকার তা হল আমরা যেন একে অপরকে বুঝি। মানুষ বোকা হতে পারে, অন্ধ হতে পারে। আমরা হব না। সবাইকে আমি উত্তেজিত না হবার আহ্বান জানাচ্ছি। আর আমি জানি, আমাকে নিয়ে মানুষেরা অনেক কবিতা লিখেছে, গান লিখেছে। অসংখ্য মানুষ সৈকতে আসে। প্রতিদিন আমার রূপ দেখে মুগ্ধ হয়। আমার প্রশংসা করে। আবার সেই একই মানুষ আমার পানি দূষিত করছে ময়লা আবর্জনা ফেলে, তেল ফেলে। তাই বলি, শুধু প্রশংসা করলেই তো চলবে না। মানুষের যেমন আমাদের দরকার হয়, তেমনি আমাদেরও তো তাদেরকে দরকার। তাই যেটা দরকার আমরা তাদেরকে দেখব, তারাও যেন আমাদের দেখশুনা করে। আমি আজ খুব খুশি যে আমরা সবাই আজ একত্রিত। চলুন, আজ আমরা ঠান্ডা মাথায় মানুষদেরকে ব্যাপারটা বুঝাই। এবং সমস্যার সমাধান করি।
কলের পানি: ঠিক ঠিক। আমাদেরও তো মানুষকে দরকার। সবাইকে দরকার। আমার যদি তাদের দ্বারা ব্যবহৃত না হই তবে তো সবাই তারা মারা পড়বে। মানুষ পশু পাখি, গাছপালা সব। তখন তো আমরা একেবারে একাকী হয়ে যাব। তাই চলুন আমরা তাদেরকে বুঝাই।
দৃশ্য: ৪
আদালত কক্ষ
জাজ: অর্ডার! অর্ডার! অর্ডার!
আজ পানি বনাম সবার মামলার শুনানি হবে। আমরা আশা করি আমরা একটা স্থায়ী সমাধানে যেতে পারব। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচাইতে জটিল এই সময়ে দয়া করে কেউ অহেতুক কোন উত্তেজনা সৃষ্টি করবেন না।প্রত্যেক পক্ষকে তার অবস্থান উপস্থাপনের সুযোগ দেয়া হল।
পানি: মাননীয় আদালত, আপনার সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে আমাদের মজুদ শেষ হয়ে গেছে। তাই আমরা পারছি না নিজেদের সরবরাহ করতে।
যেকোনএকজন: অসম্ভব মাননীয় আদালত। আমি গতকালও টেপে পানি পেয়েছি। একদিনে সব পানি ফুরিয়ে যেতে পারে না। এটা একটা চক্রান্ত। এভাবে ইচ্ছে করে কারো সমস্যা করা নাগরিক অধিকার পরিপন্থী।
পানি: হ্যা, আমরা দু:খিত যে, তোমরা অসুবিধার সম্মুখীন। তোমরা তো অসুবিধার মুখোমুখি হলে কেবল আজ থেকে আর আমরা যে দিনের পর দিন অসুবিধার সম্মুুখীন হচ্ছি। তোমরা কি তার খবর রাখ?
সবাই: অবজেকশন মি লর্ড! পানি সমস্যাক্রান্ত হচ্ছে। এটাতো আমাদের দোষ না। এটা কেউ একজনের দোষ হতে পারে। কারো কারো দোষ হেত পারে। একজনের দোষের জন্য আমরা সবাই কেন ভুগব? এটা বেআইনী।
কেউ এক জন: অবজেকশন মি লর্ড! সবাই সবসময় আমার উপর দোষ দিয়ে থাকে। এটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সত্যি কথা বলতে গেলে এবার ঘটনা ভিন্ন। এবার সবাই সমানভাবে দোষী । সবাইকে জবাব দিতে হবে।
জাজ: হুমম। সবাই, আপনাদের কি কিছু বলার আছে আত্মপক্ষ সমর্থনে?
সবাই: হ্যা মহামান্য আদালত। আমরা জানতে চাই কিভাবে ও কেন আমাদের দায়ী করা হচ্ছে?
পানি: আমি সবার আগে পানির কলকে ডাকব আমার প্রথম সাী হিসেবে।
পানির কল: আমি আসলেই ক্লান্ত। সবাই একটু সুযোগ পেলেই কল ছেড়ে দেয়। কল ছেড়ে দিয়ে তারা আয়নার সামনে দাড়িয়ে ব্রাশ করে। আর পানি বেসিন গলিয়ে নীচে পড়তে থাকে। কেউ কেউ শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে কল ছেড়ে দিয়ে চোখ বুজে মাথায় শ্যাম্পু দিতে থাকে আর পানি অপ্রয়োজনে পড়তে থাকে। কেউ কেউ আবার অস্বাভাবিক লম্বা সময় নিয়ে গোসল করে পানির অপচয় ঘটায়। এটা উচিত না।
পানি: সো, মাননীয় আদালত, আপনি দেখতে পাচ্ছেন আমাদের কেবল অপচয় করা হচ্ছে। যুগ যুগ ধরে আমরা এভাবে অবহেলিত হচ্ছি। তাই আপনিই বলুন আমরা সবার জন্য কিভাবে নিজেদেরকে মজুদ করব? তাই আমাদের আজ বাধ্য হয়ে প্রতিবাদ করতে হয়েছে।
জাজ: তেমরা সবাই কি বলতে চাও এবার?
সবাই: আমাদের আর কি বলার আছে? আমাদের মধ্যে কারো কারো নির্বুদ্ধিতার কারনে আজ আমরা সবাই আক্রান্ত। এটা ঠিক আমাদের মধ্যে কেউ কেউ এধরনের জঘন্য কাজ করছে; তাই বলে আমরা সবাই কি জানিনা যে পানি আমাদের জন্য অপরিহার্য?
জাজ: যাই হোক, আমার মনে হয় পানির আরো অনেক কিছু বলার আছে।
বৃষ্টির পানি: মাননীয় আদালত, অনেক অনেক বছর আগে আমাকে জমিয়ে রেখে ব্যবহার করা হত। কিন্তু ইদানিং, বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে, সবাই পানির কলের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। আমাকে তো সবাই তাদের জমিতে ব্যবহার করতে পারে, ব্যবহার করতে পারে গাড়ি ধোঁয়ার কাজে, অথবা ঘর পরিষ্কার করতে। এমনকি বিজ্ঞানের সাহায্যে তারা আমাকে বিশুদ্ধ পানিতে পরিণত করে পান করতেও পারে। অথচ আমি কেবল বয়েই যাই , কেউ আমার দিকে লক্ষ করে না একবারও। আরে বাবা! আমি তো তোমাদের জন্যই আকাশ থেকে পড়তে থাকি। নিজের জন্য তো না!
সবাই: আমরা জানি আমাদের অনেকেই তোমার ব্যাপারে উদাসীন। কিন্তু আমরা সবাই বৃষ্টি ভালবাসি। বৃষ্টি তুমি চলে যেতে পার না। আমরা স্বীকার করি, তোমাদের ব্যবহারের ব্যাপারে আমাদের সাবধানী হওয়া উচিত।
জাজ: পানি, আর কোন সমস্যা?
গ্লাসের পানি: আমার কিছু বলার আছে। তোমরা যখন আমাকে পান কর তখন দেখি তোমরা পুরো গ্লাস ভর্তি কর তারপর এক কি দুই চুমুক দিয়ে তৃষ্ণা মিটিয়ে তারপর ফেলে দাও বাকি টুকু। এটা কি অপচয় না?
সবাই: আমরা তো এসব নিয়ে ভাবিনি কখনো। সত্যি কথা বলতে কি আমাদের তো এতো ক্ষুদ্র ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামাবার কোন সময় নাই। কত কত কাজ আমাদের। যাই হোক, আমরা এবার বুঝতে পারছি যে এসব তুচ্ছ কাজ নিয়েও এবার আমাদের ভাবতে হবে।
জাজ: ভাল। বিষয়টা কাগজে টুকে রাখুন।
জমির মাটি: হুজুর, আমি জানি যে আমি পানি না। তবু ব্যাপারটা যেহেতু পানি নিয়ে আমি মনে করি আমি বিষয়টাতে কিছুটা হলেও জড়িত। আমি আমার মধ্যে পানি সঞ্চয় করে রাখি। আমার থেকেই মানুষ কল দিয়ে পানি উঠায়। এখন এভাবে যদি পানির অপচয় হতে থাকে তবে তো আমি পারবনা আর পানি সরবরাহ করতে। আমি পানি রিসাইকেল করতে পারি কথাটা ঠিক । কিন্তু এটাও তো মাথায় রাখতে হবে যে কাজটি করতে আমার অনেক সময় লাগে। তাই আমি সবাইকে বলি বেশি বেশি গাছ লাগান আর তাতে পানি দিন। পানি ব্যবহারে সচেতন হোন। তবেই আমি পারব আরো আরো মানুষের জন্য পানি সরবরাহ করতে।
সবাই: হু, ব্যাপারটা সত্যিই ভাবার মতো। আমাদের সবুজ হারিয়ে যাচ্ছে। বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। যদিও কেউ কেউ বনায়নের চেষ্টা করছে। তবে সে চেষ্টাটা খুব অপ্রতুল। আমরা অবশ্যই ব্যাপারটা লিখে রাখছি।
গভীর জমির পানি: না এখানেই শেষ না। তোমরা কি তোমাদের মোবাইল ফোন রিচার্জ করতে ভুলে যাও? তোমরা কি খেতে ভুলে যাও? তোমরা কি যখন দরকার তখন মাটি খুঁড়তে ভুল কর?
তোমরা আমাকে দেখ না। আমি মাটির নীচে থাকি। এটা কি একটা ম্যাজিক নয় তোমাদের কাছে যে আমি মাটি ফোঁড়ে আসি তোমাদের জন্য। আমি যদি শুকিয়ে যাই তবে কি আর কোন ম্যাজিক থাকবে তোমাদের জন্য? তবে তো তোমরা সকলেই নি:শেষ হয়ে যাবে। তাই বলি আমার উপর কিছু পানি ছিটিয়ে দিয়ে আমাকে রিচার্জ কর মাঝে মাঝে। কেবল বৃষ্টির পানি যথেষ্ট নয় আমার জন্য।
(সব চরিত্র একত্রে মঞ্চে)
সবাই: আজকের এ দিনের জন্য পানিকে ধন্যবাদ। আমরা আজ বুঝলাম পানি ছাড়া আমরা কতটা অসহায়। আমাদের আজকের এ শিক্ষাটি প্রয়োজন ছিল। আমরা প্রতিজ্ঞা করছি আমরা এখন থেকে পানি ব্যবহারে যত্নবান হব। আমরা আর পানি অপচয় করব না।
জাজ: আজকের মামলার ফয়সালা আমি পানির উপর দিয়ে দিতে চাই। আজকের শুনানিতে এটা প্রতীয়মান হয় যে পানির কোন বক্তব্যের জবাব কেউ দিতে পারে নাই। তাই আমি পানিকে তার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবার জন্য বলছি।
পানি: ধন্যবাদ মহামন্য আদালত। এটা প্রতীয়মান যে পানির অপব্যবহারের ব্যাপারে সকলেই দায়ী। তবু যেহেতু আমাদের ব্ক্তব্য মনোযোগ সহকারে শোনা হয়েছে এবং সবাই দু:খ প্রকাশ করেছে আমরা মনে করি এ অবস্থা আর থাকবে না। আমরা আশা করি আমারা একে অন্যের সহযোগিতা ও সহমর্মিতা দ্বারা এই পৃথিবীকে সুজলা সুফলা হিসেবে গড়ে তুলব। এ পৃথিবীকে সকলের জন্য বাসযোগ্য করে তোলাই হবে আমাদের অঙ্গীকার।
সবাই: পানিকে ধন্যবাদ আমাদের উপর বিশ্বাস রাখার জন্য। আমরা আমাদের প্রতিজ্ঞা রাখব।