somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিরঞ্জন ভাইরাস

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিরঞ্জন বাবুকে কিভাবে সামলানো হবে সেটা আপনি ভাল জানেন। এটা আপনার দায়িত্ব। কথাগুলি বলেই মহামান্য প্রধানমন্ত্রী খট করে রিসিভারটা রেখে দিলেন।

স্বরাস্ট্রমন্ত্রী পড়লেন মহা ঝামেলায়। তিনি কিছুতেই বুঝতে পারলেন না, নিরঞ্জন বাবুর ব্যাপারটা কিভাবে তার ডিপার্টম্যান্টের কাজ হয়। এটা সমাধান করবে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়। এটা কিছুতেই স্বরাস্ট্রমন্ত্রণালয়ের কাজ হতে পারে না। নিরঞ্জন হারামজাদাটা চোর, ডাকাত, সন্ত্রাসী বা বিরোধী দলীয় হরতালকারী হলে একটা কথা ছিল। কিন্তু এই ব্যাটাকেতো কিছুতেই এইসব ক্যাটাগরীর একটাতেও ফেলা যায় না। জোর করেও না। তবু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বলে কথা! অপারেশনে নেমে পড়তে হবে তাড়াতাড়ি। প্রধানমন্ত্রী আবার দেশবাসীর উদ্দেশ্যে করা একটা বিশেষ বক্তব্যে এই নিরঞ্জন বাবু থেকে দেশবাসীকে মুক্ত রাখার প্রমিজ করে ফেলেছেন অলরেডি!

স্বরাস্ট্রমন্ত্রী নিরঞ্জন বাবুর ফাইলটা বের করে আবার পড়লেন। সহজ স্বাভাবিক মানুষটা হুট করে একদিন ঘুম থেকে উঠে বলে কি না সে পৃথিবীর সব চেয়ে সুখী মানুষ। টাকা-পয়সা, ক্ষমতা--কোনটারই দরকার তার নেই। অথচ লোকটার অতীত ইতিহাস বলে অন্য কথা। এলাকার চেয়ারম্যান হিসেবে জয়ী হবার জন্য সে মানুষ খুন করা ছাড়া আর যতো রকমের খারাপ কাজ আছে সবই নিজ হাতে করেছে। অথচ এখন কিনা সে বলছে তার ক্ষমতা বা টাকা-পয়সার দরকার নাই। সে একা এরকম মনে করলে একটা কথা ছিল। সে তার এই ভাবনা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে। যে তার চোখের দিকে তাকাচ্ছে সেই সুখী মানুষে পরিণত হয়ে জাগতিক সব লোভ -লালসা ত্যাগ করছে। এতেও সমস্য হতো না। সে সরকারী দলের অনেককে তার দলে নিয়ে নিয়েছে এবং এলাকায় প্রাধান্য রাখতে সরকারের যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। তার এলাকার তো বটেই, আশেপাশের অনেক এলাকার নেতানেত্রী এখন সরকারের নেতিবাচক কোন ইস্ট্রাকশন মানছে না। সরকার চাইলেও বিরোধী দলকে রাজপথ থেকে ভয় দেখিয়ে তাড়াতে পারছে না। স্বরাস্ট্রমন্ত্রী অগত্যা তার সকল চেলাচামুন্ডাদের নিয়ে মিটিং ডাকলেন।

-রফিক সাহেব আপনি বলুন। নিরঞ্জন বাবুতো আপনার এলাকার লোক, তাই না?
ডিসি রফিকুল হক উঠে দাড়ালেন, জ্বি স্যার। লোকটা কিন্তু খুব একটিভ একজন সরকার দলীয় নেতা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে কি যে হল কিছুই বুঝলাম না।
-বিরোধী দলীয় কোন চক্রান্ত না তো?
-না, না স্যার। আমার মনে হয় না। এটা তো তার মানসিক সমস্যা।
-আপনি চুপ করেন। মন্ত্রী রেগে গেলেন।
এ পর্যায়ে পাশে বসা আরেক ডিসি মুখ খুললেন। আমার কিন্তু স্যার মনে হয় এটা বিরোধী দলের অত্যন্ত সূক্ষ্ম একটা পরিকল্পনা। তারা তাকে এমন পাগল সাজতে বলে দিয়েছে।
-আমারতো তাই মনে হয় স্যার। কত টাকা যে দিয়েছে তাই ভাবছি। পেছন থেকে আরেকজন ডিসি কথা বলে উঠলেন।
স্বরাস্ট্রমন্ত্রী নীচের ঠোঁটে কামড়াতে কামড়াতে বললেন, ঠিক ধরেছেন। টাকার ওমন কাঙাল একটা লোক নইলে টাকা পয়সার দরকার নাই- একথা বলবে কেন? বাই দা বাই। তাকে কি ডাক্তার দেখানো হয়েছিল?
-জ্বি স্যার। ফাইলে সবকিছু লেখা আছে। তাকে আমরা পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলাম।
-তারপর? স্বরাস্ট্রমন্ত্রী আগ্রহী হয়ে উঠলেন।
-তারপর তো স্যার ওখানকার সব ডাক্তার সুখী মানুষে পরিণত হল। এবং নিরঞ্জন বাবুকে জগতের সবচে সুখী ও সুস্থ মানুষ হিসেবে সার্টিফিকেট দিয়ে ছেড়ে দিল।
-বাস্টার্ড সবকটা।
-জ্বি স্যার। সবার আগ্রহী কণ্ঠ শুনা গেল।
-উনাকে রাস্ট্রের জন্য হানিকর বলে তাকে জেলে পাঠিয়ে দেন।
-তাও পাঠানো হয়েছিল স্যার।
- পাঠানো হয়েছিল! তারপর?
-জেলার সাহেব তাকে ছেড়ে দিল।
-জেলারকে সাসপেন্ড করেছেন?
-করেছি। সে বলেছে ঘুষের চাকরি তার আর দরকার নাই।
-কী বলেন!
-জ্বি স্যার। সমস্যা হচ্ছে তার সংস্পর্শে আসা সবাই তার সাগরেদ হয়ে যাচ্ছে।
-আরে ওটাই তো সমস্যা। তাইতো বলছি একটা কিছু বুদ্ধি বের করুন।

এমন সময় স্বরাস্ট্রমন্ত্রীর ফোন বেজে উঠল। বিরক্ত হয়ে তিনি মোবাইলটা হাতে নিয়ে ভুত দেখার মতো যেন চমকে উঠলেন। এ যে দেখি বিরোধীদলীয় নেতা মি. ফয়জুল্লাহ। কি ব্যাপার। আবার কোন ষড়যন্ত্র?
-হ্যালো!
-স্লামালিকুম ভাইজান। নিরঞ্জন বাবুকে নিয়ে কী ভাবলেন?
-কী অবার ভাববো? সবকিছুই তো আপনারা করছেন।। আপনাদের বিরুদ্ধে মামলার ব্যবস্থা করবো ভাবছি।
-আরে মন্ত্রী মশাই, আমাদের উপর রেগে যাচ্ছেন কেন? এই শালাকে নিয়ে আমরাও কম সমস্যায় নাইরে ভাই। আমাদের দলের সবাই একে একে পদত্যাগ করছে। কি যে করি! বড় বিপদে আছি। হরতাল ডাকলেও নেতা কর্মীরা মাঠে আসছে না। আপনি তাড়াতাড়ি একটা কিছু করুন প্লিজ।
-ঠিক আছে, ঠিক আছে আমি দেখছি। আপনারা মোটেও হতাশ হবেন না। দেখা যাক কি হয়।
-ওকে স্যার! আশ্বাস পেয়ে ভাল লাগছে।

ফোন রাখতেই আবার কল। এবার কল দিয়েছেন একজন শিল্পপতি। সার্কেল কোম্পানীর মালিক রহমান সাহেব।
-কি ব্যাপার রহমান সাহেব?
-মন্ত্রী সাহেব, আর তো পারছি না।
-কেন, কী হয়েছে?
-দেশের সবগুলা ডাক্তারের কি ভীমরতি ধরেছে নাকি? দেশের সব প্রান্ত থেকে আমাদের রিপ্রেজেন্টেটিভরা জানাচ্ছে কোন ডাক্তার নাকি আমাদের গিফট গ্রহণ করছে না। এরকম হলে তো না খেয়ে মরতে হবে। আমাদের ওষুধ বিক্রি শূণ্যের কোঠায় নামলো বলে!
-কি আর করবেন, রহমান সাহেব। ওষুধের কোয়ালিটি বাড়ান। এমনিতেই চলবে।
-কোয়ালিটি বাড়াবো, ঠিক আছে। তবে আপনাকেও কাজ করতে হবে। ঐ নিরঞ্জন বাবুটাকে সামলান। সবাই ঐ লোকের পাল্লায় পড়েছে।
-আপনি রাখেন রহমান সাহেব। আমাকে কাজ করতে দেন। লাইনটা কেটে দিলেন মন্ত্রী মহোদয়।

-যত্তোসব! আচ্ছা আপনারা সবাই আমাকে বলুন, নিরঞ্জন বাবুর ভাইরাসে এ পর্যন্ত কতোজন আক্রান্ত হয়েছে।
-আমাদের জেলায় মোট ৫০,০০০ লোক। তার মধ্যে নিরঞ্জন ভাইরাসে আক্রান্ত সুখী মানুষ ১,০০০।
-আমাদের এলাকায় ৫০০ জনের মতো হবে।
-আমাদের ১,৫০০।
-২,০০০।
-৩,০০০।
-৫৭০।
-তারমানে ডালপালা অলরেডি ছড়িয়ে পড়েছে।
-জ্বি স্যার।
-স্যার একটা কথা ছিল। বললেন ডিজিএফআই প্রধান আশফাক সাহেব।
জ্বি বলুন।
-আমার মনে হয় এটা আসলেই কোন ভাইরাসের প্রভাব। নতুন ধরনের কোন ভাইরাস। একজন থেকে আরেকজনে যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে স্যার।
-এক কাজ করেন, ওকে র‌্যাবের ক্রস ফায়ারে ফেলে দেন।
-র‌্যাব প্রধান এবার মুখ খুললেন। না স্যার এটা করাটা বোকামী হবে। নিরঞ্জন বাবুরা তো সংখ্যায় অনেক এখন। একজন দুজন হলে কাজ হতো। আর তাছাড়া, সে কোন সন্ত্রাসী ও না যে তাকে ক্রস ফায়ারে ফেললে সাধারন জনগণ কথা বলবে না।
-জ্বি স্যার, সাধারন জনগণ এখন অনেক বেশি সচেতন। এমন করলে আর ক্ষমতায় থাকতে হবে না আপনাদের। হা হা হা করে হাসলেন সেনাবহিনী প্রধান মি. রুবাইয়াত।
মন্ত্রী মনে মনে গর্জে উঠলেন। খামোশ! প্রকাশ্যে বললেন, তাহলে কি করা?

আবার মোবাইল ফোন বেজে উঠল।
-স্যার, আইনমন্ত্রী ব্যরিস্টার নাইমূল হক দেখা করতে চাচ্ছেন।
-পাঠিয়ে দিন। আইনমন্ত্রীর আগমনে কিছুটা চিন্তিত।
-স্যার আপনার এ নিরঞ্জন শালার জন্য কী হয়েছে জানেন? আইন ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন।
-কী হয়েছে?
-কারো বিরুদ্ধে কোন মিথ্যা মামলা দিতে পারছি না। ওকে শুট করে মারুন।
-কয়জনকে মারবেন আইনমন্ত্রী সাহেব? ওরা যে এখন সংখ্যায় অনেক। একজনকে মারলে আরো কতোজন রয়ে যাবে!
-তা অবশ্য ঠিক বলেছেন। ওদিকে অাবার কী হয়েছে জানেন, অর্থমন্ত্রী সাহেবকে কল দিলাম। উনি বলে উঠলেন, উনার মতো রাবিশ নাকি আর কেউ নাই। উনি এখন একজন সুখী মানুষ। উনিও কি নিরঞ্জন বাবুর মতো পাগল হয়ে গেলেন নাকি?
-কী বলেন! আমাদের মধ্যেও কি তবে ভাইরাসটা ঢুকে গেল? কেঁপে উঠল স্বরাস্ট্রমন্ত্রীর কণ্ঠ!
ঢাকার মেয়র বললেন, স্যার আমার খুব ভয় হচ্ছে। নিরঞ্জন ভাইরাসে পড়লে না খেয়ে মরতে হবে।
-সত্যিই তো ভয়ের কথা। স্বরাস্ট্রমন্ত্রী আবার নীচের ঠোঁট কামড়ে ধরলেন।

এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে মিটিংএ ঢুকলেন তথ্যমন্ত্রী আবুল হক।
-কী ব্যাপার আবুল সাহেব? দেরী হল কেন?
-আরে মিটিং শেষে না আপনার একটা ব্রিফিং দেয়ার কথা। পাঁচ পাঁচটা টিভি চ্যানেলের সাথে কথা বললাম, কেউ আসতে রাজী হল না।
-কেন? কী বলে তারা?
-বলে তারা নাকি আপনার মতো গর্দভ মন্ত্রীর কোন সংবাদ প্রকাশ করবে না।
-খা-মো-শ। আপনি গর্দভ। আমি না। একটা টিভি চ্যানেল নিয়ে আসতে পারলেন না। আর এসে আমাকে গর্দভ বলছেন।
-আরে স্যার, আপনি আমার উপর রেগে যাচ্ছেন কেন? আমি নিজে তো এটা কখনো বলি না। সবকটা টিভি চ্যানেলের লোকজনকে নিরঞ্জন বাবু পেয়ে বসেছে। তারা সবাইতো ঐ লোকটার সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলো না?
-ও তাই বুঝি। আচ্ছা আমাদের নিজস্ব টিভি চ্যানেলটা নিয়ে আসুন তবে।
-নিজস্ব! কোন চ্যানেলই আর নিজস্ব নেই আমাদের। সবকটা যেন ঐ নিরঞ্জন বাবুর চ্যানেল হয়ে গেছে!
-কী যা তা বলছেন এসব!
-জ্বি ঠিক বলছি।
-তো আপনি তথ্যমন্ত্রী আছেন কেন? আপনাকে তথ্যমন্ত্রী না করে আমাদের উচিত ছিল আলু ছিলা মন্ত্রী করতে। বাসায় বসে বসে আলু ছিলতেন।
-মুখ সামলে কথা বলুন রবিউল সাহেব। আপনি কি করেছেন শুনি? পারেন তো খালি ঘরে বসে মিটিং করতে আর আজেবাজে উদ্ভট সব মন্তব্য করে লোকজনদের ক্ষেপিয়ে দিতে।
-আবুল সাহেব! আপনি বোধ হয় ভুলে গেছেন আপনি আমার মন্ত্রণালয়ের উপর দাঁড়িয়ে আছেন।
-ওকে আমি গেলাম। ইউজলেস সব মন্ত্রীরা বসে আছে এখানে। তথ্যমন্ত্রী গট্গট্ করে বের হয়ে গেলেন।

স্বরাস্ট্রমন্ত্রী ধাতস্থ হতে একটু সময় নিলেন। তারপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তো আমরা কথা বলছি নিরঞ্জন বাবু নিয়ে।
আবার মোবাইলের রিং টোন বেজে উঠল। স্বাস্থ্য মন্ত্রীর ফোন।
-হ্যালো স্লামালিকুম।
-ওয়ালাইকুম।
-শুনো রাকিউল। তোমার কথা মতো আমি ভারতে কথা বলেছিলাম ব্যাপারটা নিয়ে। তারাও বলছে এটা ভাইরাস হতে পারে। নতুন কোন উন্নত প্রজাতির ভাইরাস। তবে তারা বলল এটার কোন ভ্যাকসিন বের করতে হলে তাদের স্যাম্পল দরকার হবে।
-ভালোইতো। নিরঞ্জনবাবুকে ভারত পাঠিয়ে দেন।
-হ্যা। আমিও তাই চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা নিরঞ্জন বাবুকে তাদের দেশে নিতে রাজী হচ্ছে না। এ ভাইরাস তাদের দেশে ছড়িয়ে পড়লে সবকিছু না কি তছনছ হয়ে পড়বে।
-কী বলেন! তাহলে উপায়?
-ওরা বলল যুক্তরাস্ট্রে কথা বলতে।
-তাহলেই সেরেছে! তারা কি করে ভাবলো, যুক্তরাস্ট্র এ কাজে আমাদের সাহায্য করবে। যতো সব রাবিশের দল।
লাইনটি কেটে দিয়ে স্বরাস্ট্রমন্ত্রী বললেন, আজ আর ভাল লাগছে না। আমরা আগামীকাল আবার বসবো।

পরদিন কনফারেন্স রুমে স্বরাস্ট্রমন্ত্রী পৌছে দেখলেন কেউ তখনো আসেনি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলেন দশটা বেজে দশ মনিটি। এমনটা কখনো হয় না। তার সাথে মিটিং থাকলে তিনি নিজেই দেরী করে আসেন। আজ ব্যাপারটা উল্টো হয়ে যাওয়ায় তিনি অবাক হলেন। পিএস কে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন। পিএস কিছু জানাতে না পারলে তিনি নিজেই কল দিলেন সেনাবাহিনী প্রধানকে।
-কি ব্যাপার রুবাইয়াত সাহেব। আসছেন না কেন?
-আসতে ভাল লাগছে না স্যার। এখানে বিছানায় শুয়ে শুয়ে হিন্দি ছবি দেখছি। এটাতেই আনন্দ পাচ্ছি।
-আরে এটা সিনেমা দেখার সময় হল? আপনি না নিরঞ্জন বাবুর ব্যাপারে প্রধান ভুমিকা রাখবেন।
-নিরঞ্জন বাবুকে ছেড়ে দেন না স্যার। বেচারা নির্দোষ মানুষ। সে চাচ্ছে আমাদেরকে সত্যিকারের মানুষে পরিণত করতে। আর তাছাড়া আমি আর এইসব ঝামেলায় জড়াতে চাই না।
-দেখেন রুবাইয়াত সাহেব, কাজটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না। সেনাবাহিনী প্রধান হয়েছেন তো কি হয়েছে? আপনি ভুলে গেলে চলবে না, আপনাকে আমরাই এই পদে নিয়ে এসেছি।
-আমাকে আপনারাই এই পদটি উপহার দিয়েছেন এটা তো অস্বীকার করছি না স্যার। এটাও জানি, আপনারাই আবার আমাকে সরিয়ে দিতে পারেন, এমনকি পারেন হত্যা করতেও। তবু এসবের পরোয়া করি না আর। নিষ্পাপ হিসেবে জন্ম হয়েছিল আমার, মরার সময়ও নিস্পাপ থাকতে চাই। এইসব আজেবাজে জিনিস আর পছন্দ হয় না। গুড বাই।
সেনাবাহিনী প্রধান কলটা কেটে দিলে মন্ত্রী সাহেব খুব অবাক হলেন। এতো বড় স্পর্ধা কিভাবে করল লোকটা?
-স্যার, স্যার কালকের মিটিংএর সবাই স্যার অসুস্থ হয়ে পড়েছে। পিএস নুরুজ্জামান দৌড়াতে দৌড়াতে এসে খবরটা দিলো। নিরঞ্জন ভাইরাসে সবাই এখন ভুল বকছে। সবাই বলছে কেউ আজকের এই ফালতু মিটিংএ আসতে পারবে না।
-ফালতু? আজকের মিটিং ফালতু? মন্ত্রী রেগে গেলেন।
-জি স্যার সবাই তো এটাকে ফালতু বলছে।
-বুঝছি। ঐ নিরঞ্জন ব্যাটাকে গুলি করে মারতে হবে। আমি নিজে মারবো। ড্রাইভারকে রেডি হতে বল। রনহুঙ্কার দিয়ে মন্ত্রীমহোদয় বের হয়ে গেলেন।

পরদিন দেখা গেল স্বরাস্ট্রমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে।
-স্যার, দরজা খুলেন স্যার। আপনার কিচ্ছু হবে না।
-না, তোমাকেও নিরঞ্জন ভাইরাসে পেয়েছে। আমি তোমার মতো অসুস্থ হতে চাই না।
-স্যার, বিশ্বাস করেন স্যার, এটা অসুস্থতা না। এটাই সুস্থতা। আপনি দরজা খুলুন স্যার। আমি এসেছি আপনাকে সুস্থ করতে।
-মানে? তুমি আমাকে অসুস্থ বলছো! তোমাকে স্বরাস্ট্রমন্ত্রী বানালাম আমি, আর তুমি আমাকে অসুস্থ বলছো? আর জীবনেও তোমাকে মন্ত্রী বানবো না বলে দিলাম। মন্ত্রীত্বের স্বাদ তুমি আর কখনো পাবে না।
-স্যার, আমার আর মন্ত্রীত্বের লোভ নেই স্যার। আমি চাই আমরা সবাই লোভ-লালসা, হিংসা-দ্বেষ ত্যাগ করে মিলেমিশে দেশটাকে চালাই।
-রাখো তোমার মিলেমিশে দেশ চালানো। এদেশে এটা কেউ কখনো পেরেছে? এদেশে বিরোধী দল মাত্রই যে কোন অযুহাতে হরতাল দেয়, আর সরকারী দল হরতালের বিরোধীতা করে। এক দল একবার নির্বাচন জিতলে সে আর ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। তুমি কী করে ভাবো, মিলেমিশে এদেশে কিছু করা যাবে?
-এই পর্যায়ে বিরোধীদলীয মহাসচিবও এসে দরজা ধাক্কাতে লাগলেন।
স্যার, স্যার দরজা খোলেন।
স্বরাস্ট্রমন্ত্রী বিরোধী দলীয় নেতাকে দেখে পুলকিত হয়ে কোলাকোলি করে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি আমার স্যারকে ডাকছেন কেন?
-না ভাই, আমি আমার স্যারকেই ডাকছি। আমরা সবাই সুস্থ হয়ে যাবার খবর পেয়ে উনি ভয়ে আপনার স্যারের বাসভবনে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি আর আপনার স্যার দুজনই চান না আমাদের মতো সুস্থ হয়ে সুস্থ চিন্তা করতে।
-আল্লাহ তাদেরকে হেদায়েত করবেন ভাইজান। আসেন দুজন মিলে তাদের বুঝাই।
-স্যার, স্যার... ও স্যার। দরজা খোলেন স্যার।
-বের হয়ে মুক্ত বাতাসে মুক্তির স্বাদ নিন স্যার। আসেন না, প্লিজ।

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:০৫
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতানিয়াহুও গনহত্যার দায়ে ঘৃণিত নায়ক হিসাবেই ইতিহাসে স্থান করে নিবে

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩৮

গত উইকেন্ডে খোদ ইজরাইলে হাজার হাজার ইজরাইলি জনতা নেতানিয়াহুর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেখুন, https://www.youtube.com/shorts/HlFc6IxFeRA
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর এই হত্যাযজ্ঞ ইজরায়েলকে কতটা নিরাপদ করবে জনসাধারণ আজ সন্দিহান। বরং এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×