somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুবাদ গল্প: ডিম

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হঠাৎ শূণ্য থেকে কেউ একজন কথা বলে উঠলো।
-ওটা ছিল একটা এক্সিডেন্ট। হ্যা, তুমি একটা কার এক্সিডেন্টে মারা গেছো।
সাথে সাথে ঘটনাটা মনে পড়লো।
- হ্যা, হ্যা মনে পড়ছে। আমরা যাচ্ছিলাম চার্চে বড়দিনের প্রোগ্রামে। তারপর একটা ট্রাক..
-হু। ট্রাকটা হঠাৎ করে তোমার সামনে পড়ে যাওয়ায় তোমার কিছু করার ছিল না।
-আমি.. তবে আমি মারা গেছি?
-ইয়েস। কিন্তু এটা নিয়ে দুঃখ করার কিছু নেই। সবাই এক সময় না এক সময় মারা যায়।
- আমি এখন কোথায়? এটা কি মৃত্য পরবর্তী জীবন?
- তোমার মতো করে ভাবলে এটা তাই।
- আমার ছেলে, আমার স্ত্রী- তারা কোথায়? তারা কি ভাল আছে?
- হ্যা। তারা ভালো আছে। তাদের নিয়ে তোমাকে আর না ভাবলেও চলবে।
- ওহ! ঠিক আছে। তারা ভাল থাকলেই আমি খুশি। এখন তবে কী ঘটবে? আমি কি স্বর্গে যাবো? নাকি নরকে?
-কোথাও না। তোমার পুনুরুত্থান হবে।
-তাই? তাহলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতামতটাই সঠিক?
-প্রত্যেক ধর্মই তার নিজ নিজ উপায়ে সঠিক। চলো, হাঁটি।
- আমরা কোথায় যাচ্ছি?
- নির্দিষ্ট করে কোথাও না। হেঁটে হেঁটে কথা বলতে ভালো লাগবে, তাই বললাম।
-তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো। আমি আবার শূণ্য থেকে শুরু করবো? একটা শিশু হিসেবে আবার আমার জন্ম হবে। গত জন্মে করা কোন কিছুই তবে কোন ব্যাপার না?
- না। তোমার ভেতরে গত জন্মে অর্জিত সব অভিজ্ঞতা বা জ্ঞান ঠিকই থাকবে। কেবল এই মুহুর্তে তুমি তা স্মরণ করতে পারবে না। তোমার আত্মা আসলে অনেক সুন্দর, অনেক বিশাল- যা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। মানুষের মন কেবল তার আত্মার খুব অল্প একটা অংশ ধারন করতে পারে। এটাকে তুলনা করা যায় হাতের আঙুলের একটা অংশ এক গ্লাস পানিতে ডুবিয়ে তা ঠান্ডা-গরম পরীক্ষা করে দেখার মতো একটা ঘটনার সাথে। তোমার শরীরের ক্ষুদ্র একটা অংশকে পাত্রটিতে কিছুক্ষণের জন্য রেখেই পুরো পাত্রটার অবস্থা তুমি বুঝে ফেলতে পারো।
তুমি মানুষের হিসাবে মাত্র ৫৩৪ বছর মানুষ হিসেবে কাটিয়েছো, তাই তোমার বিপুল অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতনতা আসেনি। এখানে যদি আমরা আরো বেশি সময় থাকি তবে আমি সবকিছু তোমাকে মনে করিয়ে দিতে পারবো। কিন্তু দুটি জীবনের মাঝামাঝি সময়ে সেটা করা তোমার জন্য উচিত হবে না।
-তাহলে মোট কতোবার আমার পুনর্জন্ম হয়েছে?
- অনেক অনেক জীবনের স্বাদ তুমি পেয়েছো ইতোমধ্যেই। এবার তোমাকে ৫৪০ খ্রীস্টাব্দের এক চীনা কিষানি হিসেবে জন্ম নিতে হবে।
- থামো, থামো। কি বললে? তুমি আমাকে অনেক অতীতে পাঠিয়ে দিচ্ছো!
- মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যদি বলতে চাও, তবে সেটাই ঘটতে যাচ্ছে। কিন্তু তুমি জানো না সময় নামক ব্যাপারটা কেবল তোমাদের পৃথিবীতেই আছে। আমি যেখান থেকে এসেছি, সেখানকার ব্যাপারটা ভিন্ন।
- তুমি তবে কোথা থেকে এসেছো?
- আমি এসেছি অন্য কোন জায়গা থেকে। তুমি সেটা জানলেও বুঝবে না। সে পরিপক্কতা এখনও তোমার হয় নি।
- দাঁড়াও, দাঁড়াও । আমি যদি অন্য কোথাও অন্য কোন সময়ে জন্ম লাভ করি, তবে কি কোন না কোন সময় আমি এই আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারবো?
- হ্যা অবশ্যই। তোমাদের উভয়ের মধ্যে পার্থক্যটা কেবল থাকবে সময়ের। তবে তুমি সেটা টের পাবে না।
- তাহলে এর মানে কী হতে পারে?
- তুমি কি জীবনের মানে জানতে চাচ্ছো? এটা কি একটা গতানুগতিক প্রশ্ন নয়?
- তবু। আমি এ সবকিছুর মানেটা জানতে চাই।
- আমি আসলে পুরো বিশ্ব-ব্রম্মান্ড তৈরী করেছি তোমার মধ্যে পরিপক্কতা আনার জন্য।
- আমাকে বলতে কি তুমি পুরো মানব সমাজকে বুঝাচ্ছো? তুমি চাও মানুষ পরিপূর্ণ হোক?
- হ্যা। শুধু তোমার জন্য। আমি বিশ্বের যা কিছু সব তৈরী করেছি কেবল তোমার জন্য। প্রত্যেকটা আলাদা আলাদা জীবন দ্বারা তুমি পুরপূর্ণ হও, তুমি উন্নত হও। তোমার জ্ঞান বৃদ্ধি পায়।
- শুধু আমার জন্য! তবে অন্যদের কী হবে?
- অন্যদের বলতে তুমি কাদের বুঝাচ্ছো? সেখানে তো আর কেউ নেই। সবকিছুর মূলেই কেবল তুমি আর আমি। আর কারু অস্তিত্ব কোথাও নেই।
- কিন্তু পৃথিবীতে বাকি যারা আছে। যাদের আমি নিজ চোখে দেখেছি?
- সবাই তো তোমারই একেকটা রূপ। তোমারই একেকটা পুনর্জন্ম।
-থামো, থামো। আমিই কি তবে সবাই?
-বেশ। এই তো বুঝতে পারছো।
- আমি তবে সবাই যারা পৃথিবীতে বেঁচে আছে, বেঁচে ছিল?
-তুমি ছাড়া আর কেইবা বেঁচে থাকবে?
-আমিই তবে আব্রাহাম লিংকন?
-হ্যা। তবে তুমি জন উইলকসও বটে।
-আমিই তবে সেই হিটলার?
-এবং সে যাদের মেরেছিল, তুমি তাদের সবাই।
-আমি তবে যীশু?
-তুমি তাদের সবাই, যারা তাকে অনুসরন করেছিল।
-আমিই তবে শেখ হাসিনা!
-তুমি খালেদা জিয়াও। খালেদা হয়ে তুমি যখন রোড মার্চ ডেকেছো, তুমি আসলে হাসিনাকে নয় নিজেকেই কোণঠাসা করতে চেয়েছো। হাসিনা হয়ে যখন খালেদার বাড়ি পুলিশ দিয়ে ঘেরাও করেছো তখন তুমি আসলে নিজেকেই ঘেরাও করেছো! তুমি যতোবার কারু না কারু ক্ষতি করেছিলে, ততোবারই তুমি তোমার নিজের ক্ষতি করেছিলে। তুমি যতোবার দয়াশীলতা দেখিয়েছো, তুমি তা দেখিয়েছো স্রেফ তোমার নিজেকেই। সারা পৃথিবীর সব সময়ের সব মানুষেরা যেসব সুখকর অভিজ্ঞতা লাভ করেছে বা দুঃখ পেয়েছে, তার সবই তোমার একার অভিজ্ঞতা।
-কেনো? এমনটা হবার কারন কী?
-কেননা একদিন তুমি আমার মতোই হবে। তুমি আমার মতোই একজন। তুমি আমার সন্তান।
- তুমি বলতে চাচ্ছো আমিও একজন স্রষ্টা?
- না। এখনও না। তুমি এখনও তোমার ভ্রুণাবস্থায় আছো। বেড়ে উঠছো ধীরে ধীরে। সারাটা সময় জুড়ে যখন তুমি সব মানুষের অভিজ্ঞতা অর্জন করবে তখনই তুমি আমাতে পরিণত হবে।
-তো, তুমি বলতে চাচ্ছো, সারাটা বিশ্ব একটা...
-হু। সারাটা বিশ্ব একটা ডিম। চলো তোমার পরের জীবনে যাবার সময় হয়ে এলো...
(গল্পকার এন্ডি হুইর এর ‘দ্যা এগ’ পড়ার পর)
২৩টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×