somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কী ভাবিয়া মনে এ দুটি নয়নে উথলে নয়নবারি- ১০ম পর্ব

২৯ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ৮:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১৩.
এবারের ভ্যানিউ কুটুম বাড়ি রেস্টুরেন্ট। উদ্দেশ্য, জয়ীর বিয়ে ভেঙে যাওয়া স্যালিব্রেট করা। পার্টি থ্রুওয়ার মাসুদ। রিয়াদের সাথে তার নাকি বাজি ছিল। জয়ীর বিয়ে ভেঙে দিতে পারলে সবাইকে খাওয়াতে হবে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় আজকের এ পার্টিটা যার জন্য সেই রিয়াদ এখনো অনুপস্থিত। আমি নিজেও অবশ্য আসতে চাইনি। কেমন জানি গিল্টি ফিল হচ্ছে কাল থেকে। কিন্তু মাসুদের জোরাজুরিতে আসতে হল। রিয়াদ কেন আসছে না এখনো, সেটাই রহস্য। রিয়াদকে কল দেয়া হচ্ছে, কিন্তু রিসিভ করছে না। এমন তো হবার কথা না। খাওয়াদাওয়ার পার্টি, আর রিয়াদ অনুপস্থিত এ কখনো হয় নি। রিয়াদের এই খাদ্য প্রীতি সম্পর্কে জ্ঞাত প্রায় সকলেই। কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের পারভেজ স্যার বলতেন, খাওয়ার জন্য তোমাদের রিয়াদ তো নরকেও যেতে রাজী হয়ে যাবে।
খাবার টেবিলে দেয়া হয়ে গেছে, রিয়াদ না এলে শুরু করতে পারছি না। এতোক্ষণ মাসুদ কল দিচ্ছিল রিয়াদকে। এখন আমি কল দিলাম। কাজ হল। রিয়াদ অবশেষে কল রিসিভ করল।
-কী ব্যাপার রিয়াদ। আসবি না?
-না।
-না কেন? কি হয়েছে?
-কি হয়নি সেটাই বল।
-ব্যাপার কী খুলে বল তো?
-জয়ীর হাসব্যান্ড অনন্ত সত্যি সত্যি মোটর সাইকেল অ্যাক্সিডেন্ট করেছে।
-তুই কোথেকে জানলি।
-আরে এফবিতে ছবি পোস্ট করেছে দেখলাম। হাতে ব্যান্ডেজ।
-তার মানে?
-সহজ হিসেব। বিয়ে ভাঙেনি। সত্যি সত্যি তারিখ পিছিয়েছে কেবল।
-যাই হোক। চলে আয়। খাওয়া দাওয়া করি।
-না। বিয়ে ভাঙার আগ পর্যন্ত তোদের কোন পার্টিতে আমি খাব না। গুড বাই।

আহ! কেমন জানি একটা শান্তি পাচ্ছি এখন। বিয়েটা তবে ভাঙে নি। আমার দ্বারা জয়ীর বিয়ে ভেঙে গেলে সারাটা জীবন কষ্ট পেতে হতো। অন্তহীন কষ্ট থেকে বাঁচা গেলাম তবে! কিন্তু বিয়েটা তো হয়েই যাবে। জয়ী চলে যাবে। আর কখনো জয়ীকে দেখতে পাবো না। এ কষ্টটা তো থেকে যাবে। যাক। এ কষ্টের চেয়ে গিল্টি ফিলিংটা আরো বেশি কষ্টের। বেশি কষ্টের চেয়ে কম কষ্টই ভাল। বিয়ে ভেঙে যাবার খবর শুনে সবার মন খারাপ হয়ে গেল। মাহমুদ বলল, ঐ লোকটা নিশ্চয়ই মেসেজটা পড়ে নি। ফ্যান্ডলিস্টে না থাকা কারো মেসেজ কিছু সেটিংস্গত কারণে অনেক সময় ইনবক্সে আদারস নামে একটা ফোল্ডারে চলে যায়, যা সহজে কারো চোখে পড়ে না। সবাই খেতে খেতে মাহমুদের কথায় মাথা ঝুঁকালো।

কষ্টের যে কতো রকমের ধরণ আছে কী জনি! জয়ীর বিয়ে লাগার আগে এক রকমের কষ্টে ছিলাম, বিয়ে লাগার খবর শুনে কষ্টের ধরণটা একেবারে পাল্টে গেল। আবার, যখন মনে হল রিয়াদের বুদ্ধিতে বিয়েটা ভেঙে গেছে তখন কষ্টের সাথে এক রকমের দোষী হবার অনুভ’তি জুড়ে গিয়ে কষ্টটাকে আরো তীব্র করে দিল। এখন আবার জয়ীর বিয়ে হয়ে যাবে তাই জয়ীকে খুব শিগ্গির হারাবার কষ্ট হচ্ছে। এ জন্যই বোধ করি, কবি হেলাল হাফিজ কষ্টের বিভিন্ন রঙের কথা বলেছিলেন। মোবাইলের রিং টোন। আবার নুসরাত।
-আপনি কোথায়।
কি এক আশ্চর্য মেয়েরে বাবা! কোন রকমের ইন্ট্রোডাকশন না দিয়েই মেয়েটা সরাসরি কথায় ঢুকে যায়!
-বাসায়। কেন?
-আপনার জয়ীর সাথে তো পরিচয় হল।
-কিভাবে?
-ওর বাসায় চলে গিয়েছিলাম।
-আপনার সাথে তো ওর পরিচয় নাই। কিভাবে গেলেন?
-আমার একটা বান্ধবীর সাথে জয়ীর খুব ঘনিষ্টতা। তার সাথে গিয়েছিলাম।
-ভাল করেছেন।
-ভাল করেছিতো অবশ্যই। কিছু তথ্য জানতে পেরেছি। না গেলে তো জানতে পারতাম না।
-কী তথ্য?
-আপনার জয়ী তো তার হাসব্যান্ডের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। যতোক্ষণ ছিলাম, কেবল তার হবু বরের আর বরের আত্মীয় স্বজনের গল্পই করল।
-ভাল।
-ভাল? এটাকে আপনি ভাল বলছেন? আপনি যার কারণে বিয়ে করছেন না, সে কী অবলীলায় আরেকজনের সাথে বিয়ের ভাবনায় মশগুল। আর আপনি বলছেন ভাল!
-কী করব তবে?
-জয়ীকে মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন। সুস্থ চিন্তা করে সুস্থ জীবনে আসুন। যে মেয়ে আপনাকে ভালই বাসে না, তার জন্য এতো বড় স্যাক্রিফাইস কেন করবেন? কেন?
-সে আমাকে ভালবাসে।
-আমি বলছি, বাসে না। সে আপনার কথা মোটেও ভাবে না।
-সে একদিন বলেছিল, আপনাকে যে বিয়ে করবে, সে অনেক ভাগ্যবতী হবে।
-এ কথাটা তার মনে হয়েছিল বলেই বলেছিল। আপনাকে বিয়ে করার লোভে বলে নি।
-আপনাকে বলা হয় নি, সে একদিন অ্যাস্ট্রোলজির বই পড়ছিল। আমি তখন তাদের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। হাত দেখার অযুহাতে সে আমার হাত স্পর্শ করেছিল।
-ওটা আপনাকে ভালবেসে না মশাই। অ্যাস্ট্রোলজিকে ভালবেসে। ও বয়সে মেয়েরা একটু আধটু অ্যাস্ট্রোলজির প্রেমে পড়ে যায়।
-আরেক দিন সে আমাকে নিয়ে হাটহাজারি তার মামার বাসায় গিয়েছিল। বলেছিল, কাউকে পাচ্ছে না তাই আমাকে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা দুজন ফোর স্ট্রোকে পাশাপাশি বসেছিলাম।
-হিহিহি। কি আশ্চর্য মানুষরে বাবা। আপনাকে সে নিয়ে গিয়েছিল আপনার পাশে বসার রোমান্টিক কোন চিন্তা থেকে না। আসলেই সাথে নিয়ে যাবার জন্য কাউকে পাচ্ছিল না বলে। এমন সাহায্য মেয়েরা ছেলেদের কাছ থেকে হরহামেশাই নিয়ে থাকে। ও আপনাকে ব্যবহার করেছিল, ব্যবহার। বুঝলেন?
-আমার ভাল লাগছে না নুসরাত। রাখলাম।

নুসরাতের কথা কি তবে সত্যি? সত্যি কি জয়ী এতোদিন আমাকে ব্যবহার করেছে? তাহলে আমি বুঝতে পারলাম না কেন? আমার তো মনে হচ্ছিল, জয়ী আমাকে পছন্দ করে। না, জয়ী তুমি এমন করতে পার না। তুমি আমার সাথে খেলতে পার না।

রিয়াদকে কল দিলাম।
-রিয়াদ। কাজটা কিন্তু করতেই হবে।
-কোন কাজ?
-জয়ীতার বিয়েটা ভাঙতে হবে।
-আরে আবীর! তুই এটা নিয়ে ভাবিস না। নতুন বুদ্ধি করছি। তুই শুধু বসে বসে দ্যাখ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৬ ভোর ৬:৫২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×