somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটদের গল্প:হ্যা এবং না

২০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



(আমার ছেলে সাফওয়ানকে প্রায়ই গল্প বলে শুনাতে হয়। চেনা জানা গল্পগুলো বলা শেষ হলে তখন নিজে থেকে যা খুশি মাথায় আসে বলতে থাকি। সেও ঐসব আজগুবি গল্প খুব আগ্রহ নিয়ে শুনতে থাকে। ঐ গল্পগুলির মধ্যে প্রধাণ চরিত্র যে সে নিজেই থাকে- এ কারণেই বোধ করি সে এতো আগ্রহ বোধ করে। তো. হঠাৎ আমার মনে হল, গল্পগুলি যদি লিখে রাখা যায় তবে হয়তো এ দেশের সকল শিশুদের জন্য কিছু রেখে যাওয়া হবে। তাছাড়া আজ থেকে অনেক বছর পর সাফওয়ান বড় হয়ে যখন নিজে নিজে পড়তে শিখবে তখন হয়তো অনেক আনন্দ পাবে। সেজন্যই এ গল্পটি লেখা। সবাই ভাল থাকুন। গল্পটি আপনার সন্তানকে পড়তে দিন।)
সে অনেক অনেক আগের কথা। তখন বঙ্গদেশে রাজা সাফওয়ান রাজত্ব করতেন। তার সেই রাজ্যে হ্যা এবং না নামের দুই ভাই বাস করতো। ভাই ছিল বটে তারা, কিন্তু তারা দুইজন ছিল ঠিক ভিন্ন চরিত্রের। হ্যা ছিল খুব ভাল একটি ছেলে। গুরুজনদের সম্মান ,ছোটদের আদর, সময় মেনে চলা, গুরুজনের আদেশ পালন করা, অন্যদের সাহায্য করা- এসব ছিল হ্যা এর চরিত্রগত গুণ। অন্যদিকে, না কখনোই গুরুজনদের আদেশ মানতো না। সবসময় দুষ্টামি করতো। কখনো কেউ তার কাছে কোন সাহায্য চাইলে সে সরাসরি তা প্রত্যাখ্যান করতো।
একবার হল কী? হ্যা ও না এর বাবা তাদের দুজনকে বাসার সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে ভিন দেশে বেড়াতে গেলেন। বাবার অবর্তমানে হ্যা তার দেয়া দায়িত্ব সব ঠিকঠাকমতো পালন করতে লাগল, কিন্তু স্বাধীনতা পেয়ে, না সারাদিন দুষ্টামি করে বেড়াতে থাকল। এই কারো আম গাছ থেকে আম চুরি কওে, তো একটু পর কারো নারকেল গাছে চড়ে নারকেল খেয়ে ফেলে। অথবা, দূর থেকে কারো মাথা লক্ষ্য করে গুলতি ছুঁড়ে মারে। এভাবেই সারা এলাকার লোকজনকে সে অতিষ্ট করে ফেলছিল। এর মধ্যেই প্রবল বৃষ্টির কারণে গ্রামের রাস্তায় পানি জমে গেছে। না দুষ্টুমি করে সেই ডুবন্ত রাস্তার ঠিক মাঝখানে একটি গর্ত খুঁড়ে রাখল। ঘটনাক্রমে সেই রাস্তা দিয়ে রাজ্যের রাজা সাফওয়ান ঘোড়ায় চড়ে যাচ্ছিলেন কোথাও। তার ঘোড়া সেই গর্তে পড়ে গেল। ঘোড়ার পা গেল ভেঙে আর রাজা সাফওয়ানের জামা গেল ভিজে। এ ঘটনায় রাজা পরদিন রাজসভায় বিচারকাজ বসালেন। বিচারে সিদ্ধান্ত হল শাস্তি স্বরূপ হ্যা ও না কে রাজদরবারে পাক্কা এক মাস রাজার চাকর হিসেবে কাজ করতে হবে। মূল অন্যায়কারী হিসেবে না কে এই শাস্তি দেয়া হল। আর হ্যা কে শাস্তি দেয়া হল না’র বড়ভাই হয়েও তাকে শাসনে না রাখতে পারার জন্য।
তো, রাজা সাহেব কিছুদিন পরেই তার ভুলটা বুঝতে পারলেন। হ্যা এর ব্যাপারে সবকিছু ঠিকই আছে। কিন্তু না কে দিয়ে কোন কাজ কিছুতেই করানো যায় না। তাকে যে কাজ করার আদেশ দেয়া হয় সে করে তার ঠিক উল্টোটা। সে যে রাজদরবারে আছে, রাজার আদেশ মেনে চলা যে তার অবশ্যকর্তব্য এ বোধটাও তার যে নেই এ কথা রাজা খুব সহজেই বুঝতে পারলেন। তাই তিনি একটা বুদ্ধি আঁটলেন। পরের দিন ছিল রাজ ভোজের দিন। প্রথা অনুযায়ী, এই দিন রাজ্যের সকল প্রান্ত থেকে প্রজারা তাদের প্রিয় রাজার জন্য নানারকমের খাবার নিয়ে রাজফটকের সামনে এসে বাইরে থেকে হাঁক দিয়ে খাবারের নাম ঘোষণা করে। রাজার যে খাবার পছন্দ হয় সেই খাবার রাজার সামনে পৌছায়। বাকি খাবার ফেরত যায়। কিন্তু রাজা সাফওয়ান ছিলেন ভীষণ জনদরদী মানুষ। তিনি তার কোন প্রজাদের মনে কষ্ট দিতে চাইতেন না। তাই তিনি সাপও মারবেন, লাঠিও ভাঙবেন না- এমন একটা বুদ্ধি করলেন। প্রথম প্রজা যে খাবারটি নিয়ে আসল, খাবারটি তার খুব পছন্দের। তিনি হ্যা কে ডেকে বললেন খাবারটি রাজফটক থেকে নিয়ে আসতে। খাবার হ্যা এর মাধ্যমে রাজার টেবিলে পৌছে গেল। পরের প্রজা যে খাবারটি নিয়ে আসল সেটি হল- ডিমের তৈরী এক ধরণের পিঠা। ডিম রাজা একদম পছন্দ করেন না। তাই তিনি না কে ডেকে খাবারটি নিয়ে আসতে বললেন। বলাবাহুল্য, খাবারটি তার টেবিল পর্যন্ত পৌছাল না। এভাবে সকল পছন্দের খাবারের সময় হ্যাকে আর খাবারটি অপছন্দের হলেই নাকে খাবারটি নিয়ে আসার আদেশ দিতে থাকলেন।
তো, বিজ্ঞ সভাসদ সকলেই ব্যাপারটা বুঝে ফেললেন এবং ব্যাপারটিকে খুব উপভোগ করলেন। পরবর্তীতে তাদের সবার কাছে হ্যা এবং না শব্দ দুটো একটা ফ্যাশনে পরিণত হয়ে গেল। সভাসদেরা তাদের পছন্দের কিছু হলে হ্যা বলা শুরু করলেন এবং অপছন্দের কিছু হলে, না। এভাবে সভাসদদের মাধ্যমে হ্যা এবং না শব্দদুটো পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ল।

হ্যা ও না এর গল্পও শেষ হল।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:০৭
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×