somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটদের গল্প: সাফওয়ানের সুপার কয়েন!

২১ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(আমার ছেলে সাফওয়ানকে প্রায়ই গল্প বলে শুনাতে হয়। চেনা জানা গল্পগুলো বলা শেষ হলে তখন নিজে থেকে যা খুশি মাথায় আসে বলতে থাকি। সেও ঐসব আজগুবি গল্প খুব আগ্রহ নিয়ে শুনতে থাকে। ঐ গল্পগুলির মধ্যে প্রধাণ চরিত্র যে সে নিজেই থাকে- এ কারণেই বোধ করি সে এতো আগ্রহ বোধ করে। তো. হঠাৎ আমার মনে হল, গল্পগুলি যদি লিখে রাখা যায় তবে হয়তো এ দেশের সকল শিশুদের জন্য কিছু রেখে যাওয়া হবে। তাছাড়া আজ থেকে অনেক বছর পর সাফওয়ান বড় হয়ে যখন নিজে নিজে পড়তে শিখবে তখন হয়তো অনেক আনন্দ পাবে। সেজন্যই এ গল্পটি লেখা। সবাই ভাল থাকুন। গল্পটি আপনার সন্তানকে পড়তে দিন।)
মা বকা দিয়েছিলেন বলে চৈত্রের তপ্ত দুপুরে রাস্তা ধরে আনমনে হাটছিল সাফওয়ান। হঠাৎ সে দেখতে পেল অদূরে একটা কয়েন রাস্তার ঠিক মাঝখানে পড়ে রয়েছে। কাছে গিয়ে দেখল কয়েনটা পাঁচ টাকার। রাস্তায় পাঁচ টাকার একটা কয়েন পড়ে আছে, থাক। সাফওয়ানের কী? এটা ভেবে, আগের মতোই হাটা শুরু করল সে। তারপরেই ভাবনাটা তার মাথায় এলো। কয়েনটা তুলে নিয়ে কোন ভিক্ষুককে দিয়ে দিলে সবচেয়ে ভাল হয়। তাই সাফওয়ান কয়েনটার কাছে ফিরে এলো। মাথাটা নিচের দিকে ঝুঁকিয়ে যেই না কয়েনটা নেয়ার জন্য সে তার ডান হাতটা বাড়িয়েছে, অমনি চিৎ হয়ে পড়ে থাকা কয়েনটা দাঁড়িয়ে চড়কির মতো দুই পাক খেল। সাফওয়ান ভয় পেয়ে চট করে দূরে সরে গিয়ে চারদিকে বোকার মতো তাকালো, যেন বা বুঝতে চাইল এই কারসাজির সাথে কোন মানুষ জড়িত কি না। না, আশে পাশে কাউকে দেখা গেল না। তখন হঠাৎ করে একটা আওয়াজ সাফওয়ানের কানে এলো।

“আমাকে অনুসরণ কর।”

বইয়ের ভাষায় বলা কথাগুলো যে কয়েনটার ভেতর থেকে বের হয়ে এসেছে এটা বুঝতে সাফওয়ানের বাকি থাকল না। সে কয়েনটার দিকে তাকাল। সেটা ততোক্ষণে চাকার মতো গড়িয়ে গড়িয়ে সামনের দিকে ছুটা শুরু করেছে। সাফওয়ানও মন্ত্রমুগ্ধের মতো কয়েনটার পিছু নিল। কয়েনটা খুব দ্রুত ছুটছিল। সাফওয়ানকে তার সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে দৌড়াতে হচ্ছিল। চৈত্র মাসের প্রখর রোদে পুরোটা রাস্তাই ফাঁকা হয়ে ছিল। তাই সাফওয়ানের সেই অস্বাভাবিক ছুটে চলা কারো চোখে পড়ল না। এভাবে প্রায় পনেরো মিনিট ছুটে চলার পর হঠাৎ করে কয়েনটা চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল। সাফওয়ান ধীর পায়ে কয়েনটার কাছে গেল। নিরেট নিশ্চল একটা জড় পদার্থ। এটা দেখে কে বিশ্বাস করবে একটু আগেই কয়েনটা ছুটে চলছিল? তাই সাফওয়ান নিজেও চিন্তায় পড়ে গেল। এতোক্ষণ যা ঘটেছে তার সবটাই কি তবে তার কল্পনা? ঠিক... ঠিক তখুনি একটা শব্দ তার কানে এলো। মিয়াউ! মিয়াউ! একটা বিড়ালছানার আর্ত চিৎকার। সে দ্রুত শব্দের দিকে গিয়ে দেখল, ছোট্ট একটা বিড়ালছানা রাস্তার পাশে ড্রেনের মধ্যে পড়ে আছে। অনেক চেষ্টা করেও ড্রেনের পানি থেকে বিড়ালছানাটি কিছুতেই উঠতে পারছে না। সাঠওয়ান অনেক কসরত করে বিড়াল ছানাটিকে ড্রেন থেকে উদ্ধার করল। শুকনো মাটিতে পা রেখে বিড়ালছানাটি কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে সাফওয়ানের দিকে কিছুক্ষণ তাকাল, তারপর মিয়াউ শব্দ করে তার পথে রওনা দিল। মানুষ বিড়ালের ভাষা বুঝে না, সাফওয়ানও বুঝে না। তবু একটু আগে মিয়াউ শব্দের মানেটা সে ঠিক বুঝতে পারল। সে বুঝল, বিড়ালছানাটি তাকে ধন্যবাদ দিয়ে গেল। ছানাটিকে বাঁচাতে পেরে সাফওয়ানের মনটা ভাল হয়ে গেল। সে কয়েনটির কাছে ফিরে এসে সেটাকে হাতে তুলে নিতে চাইলে আবারো কয়েনটি চড়কির মতো দুই পাক ঘুড়ে ছুটতে থাকল। সাফওয়ানও যথারীতি কয়েনটির পিছু নিল। এবার কয়েনটা যেন আরো দ্রুত ছুটছে। সাফওয়ানও উর্দ্ধশ্বাসে দৌড়াচ্ছে কয়েনটার পিছু পিছু। প্রায় দশ মিনিট পর কয়েনটা আবারো স্থির হয়ে পড়ে গেল। সাফওয়ান কয়েনটার পাশে দাঁড়িয়ে চারদিকে ভালভাবে দেখতে থাকলো। হঠাৎই তার চোখে পড়ল একটা পাখির বাচ্চা গাছের দুটো ডালের মাঝখানে আটকে আছে। আর তারস্বরে চেঁচাচ্ছে। নো প্রবলেম। সাফওয়ান গাছ চড়তে জানে। সে ঝটপট গাছে উঠে একটা ডাল টেনে সরিয়ে দিলে পাখিটা মুক্তি পেয়ে সাফওয়ানের চারদিকে একবার চক্কর দিয়ে উড়ে চলে গেল। সাফওয়ানের কী যে ভাল লাগল! অন্যের বিপদে সাহায্য করাতে এতো আনন্দ- সাফওয়ান এটা আগে জানতো না। সে গাছ থেকে নেমে কয়েনটা পকেটে নিয়ে বাসার দিকে হাটা শুরু করল। মা নিশ্চয়ই সাফওয়ানের জন্য চিন্তা করছেন। মায়ের ধমকে রাগ করা ঠিক হয় নি তার। আর কখনো এভাবে রাগ করবে না বলে ঠিক করল সে। ঠিক তখুনি আবার পকেট থেকে শব্দ ভেসে আসল-

“আমাকে বের করে রাস্তায় রাখো।”

সাফওয়ান বুঝল এটা কয়েনের আদেশ। তাই কিছু না ভেবেই সে কয়েনটাকে রাস্তায় ছেড়ে দিল। কয়েনটা আবারো ছুটে চলা শুরু করল। সাফওয়ানও ছুটল পিছু পিছু। এবার যেন খুব পরিচিত রাস্তা দিয়ে কয়েনটা যাচ্ছে। রাস্তাটার নাম মিশন রোড। ছোটবেলা বাবার সাথে সঞ্জয় আঙ্কেলের বাসায় কতদিন যে এ রাস্তা দিয়ে এসেছে সাফওয়ান। এখন স্কুলের পড়াশোনার জন্য খুব একটা এদিকে আসা হয় না। ওমা! কয়েনটা দেখি সঞ্জয় আঙ্কেলদের বাসার গেটের নীচ দিয়ে ঢুকে তাদের উঠোনে গিয়েই স্থির হয়ে গেল। সাফওয়ান তাড়াতাড়ি বাসার কলিং বেল টিপল। নাহ! কেউ দরজা খুলে দিল না। তাই সে কোন উপায় না দেখে দরজার নব ঘুরাতে চাইল। সাফওয়ানকে আশ্চর্য করে দিয়ে দরজাটি খুলে গেল। আর দরজা খুলে ভেতরে ঢুকেই সাফওয়ান আরো আশ্চর্য হয়ে গেল। সঞ্জয় আঙ্কেল মাটিতে পড়ে আছেন। সাফওয়ানকে দেখে তিনি কোন রকমে বললেন, শিবলী আঙ্কেলকে কল করে আসতে বল। সাফওয়ান তাড়াতাড়ি শিবলী আঙ্কেলকে কল করে বিস্তারিত বলল। শিবলী আঙ্কেলও আশেপাশেই ছিলেন, তাড়াতাড়ি বাসায় এসে সঞ্জয় আঙ্কেলের অবস্থা দেখে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করলেন।

পরের দিন সাফওয়ানের বাবা তাকে নিয়ে হাসপাতালে সঞ্জয় আঙ্কেলকে দেখতে গেলে ডাক্তার শিবলী জানালেন সাফওয়ান যদি তখনই তাকে কল না দিতো তবে সঞ্জয় আঙ্কেলেকে বাঁচানো কঠিন হয়ে যেতো। বাবলী আন্টি সাফওয়ানকে অনেক অনেক ধন্যবাদ দিলেন। আর সাফওয়ান তার প্যান্টের ডান পকেটে হাত ঢুকিয়ে কয়েনটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে জোরে চেপে ধরল আর মনে মনে বলল,
কয়েন, তোমাকে ধন্যবাদ। অন্যের উপকার করার মধ্যে যে এতো আনন্দ তা আমি তোমার জন্যই বুঝতে পারলাম। ধন্যবাদ, তোমাকে আমার পাঁচ টাকার কয়েন।

এরপর থেকে যখনই কেউ বিপদে পড়েছে, সাফওয়ান ঠিক সময়মতো সেখানে পৌছে গেছে। এলাকার সবাই তাকে তাই সুপার ম্যান বলে ডাকা শুরু করেছে। আর সাফওয়ান গোপনে সুপার কয়েন উপাধি দিয়েছে তার সেই কুড়িয়ে পাওয়া পাঁচ টাকার কয়েনকে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:৫৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×